জাতীয়

অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তি ও আদিবাসী ছাত্রী ধর্ষণের বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

আইপিনিউজ ডেস্ক (রাঙ্গামাটি): খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তি ও কাউখালীর এক আদিবাসী ছাত্রী ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটিস্থ আদিবাসী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে আজ ২০ এপ্রিল ২০২৫ ইং খ্রি:  রাঙ্গামাটিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়ামের প্রাঙ্গণ থেকে  মিছিলযোগে বের হয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ গেইট ঘুরে এসে প্রদক্ষিণ করে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এসে সমাপ্ত হয়।

সুকেশ খীসার সঞ্চালনায় এবং রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার, পিসিপির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা, মেরিন ত্রিপুরা, প্রম্নহ্লাঅং মারমা। স্বাগত বক্তব্য  রাখেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হিমেল চাকমা।

সংহতি বক্তব্যে ইন্টুমনি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তর সামাজিক উৎসবগুলো উপলক্ষ্যে আমরা প্রশাসনের নিকট নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। কিন্ত উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতে খাগড়াছড়িতে ৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হলো। এর পরপর কাউখালিতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক মারমা মেয়ে ধর্ষণের শিকার। তাহলে আমরা নিরাপত্তা পেলাম কোথায়? আমরা বারবার দাবি জানাচ্ছি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুক সরকার। কিন্তু আমাদের বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন নিরপেক্ষ হতে পারছে না। তারা আমাদের সাথে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। যার দরুণ কোনো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার আমরা পাচ্ছি না।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে ৫ জন শিক্ষার্থী অপহরণের পর প্রশাসন উদ্ধার নাটক মঞ্চস্থ করে চলেছে। নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার অভিযানের নামে নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে হয়রানি করছে। অথচ কারা অপহরণ করেছে সেটা স্পষ্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউপিডিএফের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা মিডিয়া হাউস এবং তাদের কর্মীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাঁচজন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং পাহাড়ে সেনাশাসনকে বৈধতা দিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দল-উপদলের জন্ম দেওয়া হয়েছে। তারাই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করছে। একদিকে আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের বিমাতাসুলভ আচরণ আরেকদিকে বিভিন্ন প্রক্সি সংগঠনের দৌরাত্ম্য, সবমিলিয়ে পার্বত্য জনপদে অস্থিতিশীলতা, এটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশ। রাষ্ট্রীয় মদদে সৃষ্ট সেই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন অপরাধ সৃষ্টি করে পাহাড়ে সেনাশাসনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। অথচ আদিবাসীদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতার কোন বিচার হচ্ছে না। ২০২৪ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা, ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারী ঢাকায় আদিবাসীদের উপর হামলার দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখিনি। সেই ঘটনাসমূহের অপরাধীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নামে বর্তমানে অপরাধীদের বারংবার ছাড় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নসহ চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিকায়ন করা না হলে ভবিষ্যতে আরো নানাধরণের সমস্যার জন্ম দেবে।
তিনি আরও বলেন, অপহৃত শিক্ষার্থীদের সুস্থ শরীরে ও বিনাশর্তে ফেরত না দিলে এবং মারমা মেয়েকে ধর্ষণকারীকে শাস্তি প্রদান না করলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ছাত্র সমাজ কঠোর কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহসভাপতি কবিতা চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ কর্তৃক অপহৃত চবির ৫ শিক্ষার্থীকে এখনো কোনো হদিস দিতে পারেনি প্রশাসন। আমরা চায় শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে পারে। ইউপিডিএফের অপহর্রন বাণিজ্য নতুন কিছু নয়, এর আগেও গত বছরের ৬ আগস্ট ইউপিডিএফ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ২ কর্মীকে অপহরণ করেছিল। চাপে পড়ে তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

কবিতা চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতা নিত্য দিনের বিষয়। কাউখালীতে মারমা শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এযাবৎ পাহাড়ে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তার একটিরও বিচার হয়নি। তার জন্যই অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষণকারীর গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।

মেরিন ত্রিপুরা বলেন, কাউখালিতে মারমা শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় এখনো প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে বিএমএসসির প্রতিবাদ মিছিলে প্রশাসন বাঁধা প্রদান করেছে। সভা—সমাবেশ করা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ সমাবেশে বাঁধা প্রদান করা হয়েছে যা কাম্য নয়। অপরদিকে, খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী অপহরণের ৪ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসন তাদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা অপহরণের রাজনীতি চাইনা। অচিরে এসব বন্ধ করতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থী প্রম্নহ্লাঅং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিদিন অহরহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। দুষ্কৃতিকারীরা বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। আমরা ধর্ষণকারীদের শাস্তির দাবি জানায়। অপহরণের মতো ঘটনা রাজনীতির মধ্যে পড়েনা। অপহরণের রাজনীতিকে ছাত্র সমাজ প্রত্যাখ্যান করবে এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

স্বাগত বক্তব্যে হিমেল চাকমা বলেন, পাহাড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের ব্যথিত করছে। রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। নিরাপত্তা চেয়ে আজকে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫ জন শিক্ষার্থীর এখনো হদিস মিলেনি। আমরা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে হতাশ।

সমাবেশের সভাপতি সুজন চাকমার সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্ত করা হয় এবং সমাবেশ শেষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্ট সমীপে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

Back to top button