অধ্যাপক ফারুকের পাশে ৬৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে গবেষণা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে হুমকি-ধমকি ও অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষক।
এক সংবাদ বিবৃতিতে সোমবার (১৫ জুলাই) এই প্রতিবাদ জানান এই ৬৬ শিক্ষক।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের ‘সদ্য-সাবেক’ পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা কার্যক্রমকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি এবং অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং গবেষক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সাহায্যে অধ্যাপক ফারুক বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাতকৃত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার দাবি করেছেন। জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক এই ঘটনাটি প্রচারে আসা মাত্রই সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং সরকারি আমলাদের কেউ কেউ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় অধ্যাপক ফারুককে আক্রমণ করছেন এবং চাপ প্রয়োগ করছেন বলে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্নসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। এরইমধ্যে ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এই গবেষণার দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এই অবস্থায় অধ্যাপক ফারুকের মতো আমরাও বিপন্ন বোধ করছি।
বিবৃতিতে ৬৬ শিক্ষক বলেন, ‘অধ্যাপক ফারুক দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় আবারো দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় পরীক্ষার এই ফলটি তিনি প্রকাশ করেছেন। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে তিনি নীতিনৈতিকতাবিরোধী কোন কাজ তো করেননি, বরং তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, বিএসটিআই দুধের মান নির্ণয়ে ১৭ বছর আগে যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলো তা দুধের মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের মতো কোনো পদ্ধতি বিএসটিআই-এর নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো গবেষণার মান ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন থাকলে যথার্থ উপায় হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবেই সেই গবেষণার ফলকে ভুল প্রমাণ করতে আরেকটি গবেষণা ও উপযুক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। অধ্যাপক ফারুকের গবেষণার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধের মান নিয়ে জনমনে সন্দেহের অবসান ঘটাতে পারতেন। তা না করে অধ্যাপক ফারুককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা ও বিভিন্ন কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে আচরণ করছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।
‘এরকম একটি পরিস্থিতিতে ১৪ জুলাই হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির প্রস্তুতকৃত দুধের নমুনা পৃথক চারটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কেও সমাধানসূত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমেই খুঁজতে হবে, এটাই সভ্য দেশের রীতি। তা না করে, গবেষণার ফল প্রকাশকে নিয়ে যে অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো ঘটানো হলো তা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো আত্মমর্যাদাবান শিক্ষক ও গবেষকদের সত্যিকার অর্থেই অসম্মানিত ও বিপন্ন করেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও আচরণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত এসব বিষয়ে আরও গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আমরা সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক বাজারে প্রাপ্ত প্রস্তুতকৃত দুধের নমুনা যথাযথভাবে পরীক্ষা করে জনমনে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তা নিরসনকল্পে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাই।