অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্যের মারধর করার ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি
রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কর্তৃক মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
বৃহস্পতিবার ২৪ জনের সাক্ষরকৃত বিবৃতিতে বিশিষ্টোজনরা বলেন, ” আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, অবমাননার ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। ক্ষেত্রবিশেষে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে শিক্ষকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে একজন সাংসদ একজন সম্মানিত শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রশাসনের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা ও সভ্যতাকে লাঞ্ছিত করেছে। আশুলিয়ায় প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে বখাটে ছাত্র কলেজ চলাকালীন সময়ে পিটিয়ে হত্যা করে শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে। ধর্মীয় উসকানি ছড়িয়ে মুন্সীগঞ্জে স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেফতার করা এবং কিছ –দিন আগে ঢাকায় অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর ওপর মৌলবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ৭ জুলাই ২০২২, রাজশাহীতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে ডেকে একজন কলেজ শিক্ষককে নির্মমভাবে পেটানোর যে বর্ণনা আমরা গণমাধ্যমে পেয়েছি, তাতে আমরা বিস্মিত, স্তম্ভিত ও উদ্বিগ্ন। একজন আইন প্রণেতা আইন লঙ্ঘন করতে পারেন না।
একজন সংসদ সদস্যের কলেজ শিক্ষককে এভাবে পেটানোর ঘটনা ন্যাক্কারজনক। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সমাজের সম্মানজনক পেশা শিক্ষকতায় নিয়োজিতদের সম্পর্কে যে ঘৃণ্য অবমাননাকর মনোভাব প্রকাশ করেছেন, তাতে তিনি সংসদ সদস্যেও শপথ ভংগ করেছেন এবং সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
বিশিষ্টজনদের দাবিঃ
১। শিক্ষক মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে;
২। শিক্ষক প্রহারের ঘটনায় মাননীয় স্পিকারের রুলিং প্রদানসহ সংসদ সদস্য ওমর ফারুককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে;
৩। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণ অনুসন্ধানসহ ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে।
বিবৃতি স্বাক্ষরকারী:
১. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা,
২. পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ,
৩. রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা,
৪. রামেন্দু মজুমদার, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন,
৫. ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন,
৬. অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ,
৭. ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ,
৮. ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি,
৯. এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি,
১০. খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী,
১১. রোকেয়া কবির, উন্নয়ন কর্মী,
১২. এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
১৩. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
১৪. সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন,
১৫. অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোটর্,
১৬. আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট,
১৭. ড. সেলু বাসিত, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী,
১৮. অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি,
১৯. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব),
২০. অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ মঞ্চ,
২১. এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী,
২২. অলক দাস গুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মী,
২৩. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম,
২৪. সেলিম রেজা, আহবায়ক, সংস্কৃতি মঞ্চ।