অধিকারহারা মানুষের মিছিলে অনিল মারান্ডী অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন : স্মরণ সভায় বক্তরা
আজ ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ গণমানুষের নেতা অনিল মারান্ডীর প্রায়াণে নাগরিক স্মরণসভা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলানায়তন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত ম্মরণসভায় ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতি’র সদস্য দীপায়ন খীসা, গবেষক পাভেল পার্থ, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রাফট সদস্য জান্নাত-ই-ফেরদৌসী প্রমূখ। স্মরণসভার সঞ্চালনা করেন আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং। সভার শুরুতে অনিল মারান্ডীর জীবনী’র সংক্ষিপ্তসার পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী অলি কুজুর। পরে সাঁওতালি শোক সঙ্গীত পরিবেশন করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সদস্য নিরলা মার্ডী। স্মরণসভায় বক্তরা অনিল মারান্ডীর সংগ্রামী জীবনের বহু অধ্যায়ের আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন-
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন-অনিল মারান্ডী গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার পর নিপীড়িত মানুষের সাথে রাত কাটিয়েছেন। দারিদ্রের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার পরও তিনি সংগ্রাম আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আদিবাসী পরিচয়হীনতা তাকে পীড়িত করতো। অনীল মারান্ডী এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তার বক্তব্যে প্রকাশ করতো। যতদিন অনীল মারান্ডীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হবে ততদিন আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তার প্রতিবাদী কথার মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অনিল মারান্ডীর সংগ্রামের পতাকা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে দেবার তিনি আহ্বান জানান।তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আগামীতে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি।
নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন- তিনি আদিবাসীদের জন্য লড়াই করেছেন এবং লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পাভেল পার্থ বলেন- তিনি শুধু সাঁওতালদের নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিপীড়িত আদিবাসী মানুষের নেতা। / সবসময় তিনি আদিবাসীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, চলেশ রিছিলের মৃত্যু, কল্পনা চাকমা’র মৃত্যু, নাহার খাসিয়া পুঞ্জি’তে খাসিয়দের সহায়তায় সক্রিয় ছিলেন। রাষ্ট্রকে নিপীড়ক হিসেবে দেখে, তিনি যুক্তি দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষন করতেন। তাঁর যুক্তি গুলো ছিল সব তীক্ষè।
দীপায়ন খীসা বলেন, তিনি নিজ এলাকায় মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। সারা বাংলাদেশের নিপীড়িত আদিবাসীদের পাশে থেকে তাদের মনে সাহস যুগিয়েছেন। তাঁর ত্যাগের মাধ্যমে আদিবাসী তথা গণমানুষের কন্ঠস্বর রাষ্ট্রের কাছে পৌঁছানোর কাজ করেছেন। তিনি আদিবাসী অধিকার হারা মানুষের জন্য নিজের জীবনকে উৎসগ করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, নিল মারান্ডী সংগ্রামী জীবনের জন্য কখনও আপোষ করেননি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসীদের সুখ-দুঃখ উপলব্ধি করে তিনি সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, একজন মানুষ হিসেবে তিনি সাথক ছিলেন। প্রকৃত পক্ষেই তিনি মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ত্যাগের মহিমা আগামী প্রজন্মের জন্য উদাহরন হয়ে থাকবে। তিনি সারা জীবন শোষিত মানুষের কথা বলেছেন।
মেসবাহ্ কামাল বলেন, তিনি গণমানুষের শ্লোগানের কাব্য তিনি লিখে গেছেন। বেঁচে থাকার জন্য তিনি অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। তিনি শুধু সাঁওতালদের জন্য নয় সকল আদিবাসীর কথা ভেবেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের না বহিঃবিশ্বের আদিবাসীদের কথাও তিনি বলেছেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ আদিবাসীদের শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রথম উদাহরন তৈরি করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা গুরুত্বপূণ। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে অনিল মারান্ডী ছিলেন কান্ডারি।
নুমান আহম্মদ খান বলেন-অনিল মারান্ডী আপোষহীন নেতা ছিলেন। তিনি আদিবাসীদের জন্য অনেক অবদান রেখে গেছেন। যুব সমাজকে অনিল মারান্ডীর মতন একজন ত্যাগী, সৎ, আপোষহীন নেতা হওয়ার তিনি আহ্বান জানান।
ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন আদিবাসীদের জমি রক্ষার জন্য অনিল মারান্ডী সংগ্রাম শুরু করেন। প্রথম জীবনে তার সাহসী ভূমিকার জন্য সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পায় রাজশাহীর বাবুডাইং গ্রাম। অনিল মারান্ডী ছিলেন গণ মানুষের নেতা। তিনি শোষিত ও নিপীড়িত মানুষকে একতাবদ্ধ করে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কান্ডারি ছিলেন তিনি। সমতল ও পাহাড়ী আদিবাসীদের মেলবন্ধনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি কমিশনের আদলে সমতলেও আদিবাসীদের ভূমি কমিশন হবে তার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনিল মারান্ডী। তিনি অগ্নিঝরা বক্তা ছিলেন। অনিল মারান্ডী এক সংগ্রামী নেতার নাম। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ৯’দফা আন্দোলনে অনিল মারান্ডীর অন্যতম ভূমিকা ছিল।
উল্লেখ্য গণমানুষের ও আদিবাসীদের নেতা অনিল মারান্ডী গত ৭ জানুয়ারী ২০১৯ রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা কাকনহাটের পাচগাছিয়া গ্রামে অসুস্থতাজনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেন।