অত:পর সাত বছরের গারো শিশু ধর্ষণ এরপর..?- উন্নয়ন ডি শিরা
ঘড়িতে তখন রাত সোয়া নয়টা। বুলবুল দা’র (বুলবুল রিছিল) ফোন পেলাম। জানালেন ভাটারা থানায় যেতে হবে, গারো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। খবর পেয়ে ছোটভাই পুলক সাংমাকে সঙ্গে নিয়ে অতিদ্রুত থানায় পৌঁছলাম। আমাদের আগেই ভিকটিম ও তাঁর আত্মীয় স্বজন সেখানে অবস্থান করছিলেন। মামলা দায়ের করার জন্য। তিনজন মধ্য বয়স্কা নারী, ফুটফুটে সাত বছরের মেয়ে শিশু ও পুরুষ কয়েকজন। মধ্য বয়স্কা মহিলাদের মধ্যেই কেউ একজন হয়তো ধর্ষিতা হয়ে থাকবেন। এমন ধারণা করলাম। ধারণার বৃত্ত ভেঙ্গে সন্দেহ মনে পুরুষ একজন কে কানে কানে জিজ্ঞেস করে বসলাম, কে ভিকটিম? প্রত্যুত্তরে যা জানলাম এতে ‘থ’ হয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু করার ছিলনা। ফিসফিসিয়ে বলা লোকটি কোমলমতি ঐ গারো মেয়ে শিশুর দিকে ঈঙ্গিত করে চোখের ইশারায় জানাল সেই ধর্ষিতা!
(২)
শিশু ধর্ষণের কথা এর আগে খবরে শুনেছি, কাগুজে পত্রিকায় পড়েছি। কিন্তু তাদের পাশে থেকে সমব্যথী হওয়ার সুযোগ হয়নি কখনো। এই প্রথম কোন শিশু ধর্ষিতার পাশে থেকে যৎসামান্য সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রকাশের সুযোগ পেলাম। আমি মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাঁর নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকালাম। কি নিষ্কলঙ্ক চোখের চাহনি! অথচ সমাজের চোখে এখন সে কলঙ্কিনী! দাগী! অথচ কি দোষ তার? সে জানে না। আমিও জানি না তার কি দোষ। কিন্তু এটা জানি যে, সে এমন সমাজে বাস করে যে সমাজ ধর্ষিত হওয়া নারী কিংবা গণিকা বৃত্তির মতো পেশাকে ঘৃণা করে অথচ ব্যবহার করতে কুন্ঠাবোধ করে না।
(৩)
দেশে যেভাবে যে হারে ধর্ষণ হচ্ছে এটাকে ধর্ষকদের বসন্তকাল বলা যেতে পারে। এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে যে একটা ঘটনা আরেকটা ঘটনার সাথে হুবুহু না মিললেও অনুরূপভাবে মিলে যায় বা মিল পাওয়া যায়। গত ৭ এপ্রিল ২০১৮ইং, রাজধানীর ভাটারা থানার সাঈদ নগর এলাকায় ৭ বছরের গারো মেয়ে শিশুর ধর্ষণের ঘটনাও কোন না কোন পূর্ব ধর্ষণ ঘটনার পরের কিস্তি বলেই মনে হয়। কেননা ঘটনা খুবই পরিচিত। ভিকটিমের পরিবার ও দায়েরকৃত মামলার সূত্র ধরে জানা যায়, পূর্ব দিন গুলোর মতো গত পরশু শিশুটির মা মেয়েকে বাসায় রেখে কাজে যান। শিশুটিকে বাসায় একা পেয়ে বিকাল আনুমানিক ৫.৩০ ঘটিকার সময় রফিক হাসান(৩৬) চানাচুর খাওয়ার লোভ দেখিয়ে ফুসলিয়ে তাঁর বাসায় (ভাটারা থানাধীন রুম নং বি/১২ সাঈদ নগর) নিয়ে যান এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। মেয়েটি বাসায় এসে কান্নাকাটি করলে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া ও মেয়েটির প্রাইভেট শিক্ষকের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষকের নামসহ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানালে বাসা মালিক পুলিশে খবর দেন এবং মেয়েটির মা বাদী হয়ে ভাটারা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন (যার মামলা নং: ভাটারা১৩/১৩১) ।
(৪)
গারো পাহাড়ের এই প্রাণোচ্ছল মেয়েটি মা বাবার সাথে থাকত ঢাকার সাঈদ নগরের একটি ছোট্ট বাসায়। সহপাঠীদের সাথে প্রতিদিন স্কুলে যেত। খেলত। ঘরময় দুষ্টুমি করত। পাশের ভাড়াটিয়াদেরও মাতিয়ে রাখতো। প্রাইভেট শিক্ষক এসে পড়াতো। সেদিনও এসেছিল। কিন্তু আর পড়া হয়নি। পড়ানোও হয়নি। অমন যন্ত্রণা নিয়ে কি পড়া যায়?
……………………………..
উন্নয়ন ডি. শিরা শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়