জাতীয়

৮২-তে পা রাখলেন সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার ৮২তম জন্মবার্ষিকী। দুই দশকের বেশি সময়ের সশস্ত্র লড়াই শেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়। তিনি জেএসএস প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই চুক্তি করেন। বরাবরের মতই এই সাবেক গেরিলা নেতার কাছে এই দিনটি  উদযাপনহীন থাকে। তবে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে জনসংহতি সমিতি, তার সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রজন্মের তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রবীণ জননেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

সংক্ষেপে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার জীবন
সন্তু লারমার জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার মহাপুরম গ্রামে। তার বাবার নাম চিত্ত কিশোর চাকমা, মা সুভাষিণী দেওয়ান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা, তারপর দুই ভাই শুভেন্দু প্রবাস লারমা ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তু লারমা।

মহাপুরম জুনিয়র হাইস্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন সন্তু লারমা। রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫৯ সালে। চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে তিনি ১৯৬১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। শিক্ষকতায় পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন মাইসছড়ি জুনিয়র হাইস্কুল, গুইমারা জুনিয়র হাইস্কুল ও দীঘিনালা হাইস্কুলে। চাকরিজীবনেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শিক্ষক সমিতি গঠন করেন এবং তিনি ছিলেন এর সভাপতি।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সন্তু লারমা। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে পাহাড়ি ছাত্র সমিতি গঠনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে সিএইচটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭২ সালে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)। জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ে নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এর মাধ্যমেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াইয়ে শামিল হন। ১৯৭৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পান ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি। সে বছরই জেএসএসের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৮৩ সালে জেএসএসের সভাপতি হন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯২ সাল থেকে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেন তিনি। পিসিজেএসএসের পক্ষে তিনি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৯ সালের ১২ মে চুক্তির ফলে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হন তিনি। এখনো সেই পদে আছেন। সেই সাথে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

সন্তু লারমা ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী শিপ্রা দেওয়ান একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা। উজানা লারমা ও জুলিয়ানা লারমা নামের তাঁদের দুই মেয়ে আছেন।

Back to top button