৩০ জুন মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসঃ বিভিন্ন স্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলি র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
অপূর্ব কুমার সিংঃ মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৭ তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজশাহীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার উদ্যোগে কাকনহাট পৌরসভা মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি রবিন হেমব্রমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন কাকনহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ আল-মামুন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) গনেশ মাঝি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, গোদাগাড়ী উপজেলা সাবেক সভাপতি নন্দলাল টুডু, আদিবাসীদের বন্ধু আনোয়ার হোসেন, আদিবাসী যুব পরিষদের সদস্য উত্তম কুমার মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহান প্রমূখ।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পাবনা জেলা কমিটির উদ্যোগে আজ ৩০ জুন সকাল ১১ টায় পাবনার শাঁখারিপাড়ায় শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনা সভা হয়েছে। এর আগে সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর শহীদদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পাবনা জেলা শাখা’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সুবল চন্দ্র সিংয়ের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক চন্ডী বাগদীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আশিক বানিয়াস সাধারণ সম্পাদক জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পাবনা জেলা শাখা, সদস্য অনিল বাগদী, অরুণ মালী সাধারণ সম্পাদক আটঘরিয়া উপজেলা শাখা, মদন দাস সাবেক সভাপতি ঈশ্বরদী উপজেলা শাখা, হিতেন টপ্য সাবেক ছাত্রনেতা আদিবাসী ছাত্র পরিষদ এডওয়ার্ড কলেজ, রিপন বড়াইক প্রমূখ।
এছাড়াও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সিংড়া উপজেলা শাখা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পোরশা উপজেলা শাখা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহাদেবপুর উপজেলা শাখা ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নিয়ামতপুর উপজেলা শাখা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা দিবসটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করেছে।
উলেখ্য,সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সাঁতাল হুল হলো ১৯ শতকে ব্রিটিশ ভারতে সংঘটিত একটি ঔপনিবেশিক ও জমিদারি শাসন-বিরোধী আন্দোলন, যাকে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী নেতৃত্ব দিয়েছিলো। এর সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজদের রাজস্ব ও কৃষি নীতির বিরুদ্ধে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় চার মুরমু ভাই- সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব। ১৭৯৩ সালে বড়লাট (গভর্নর-জেনারেল) লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাঁদের প্রাচীন স্থানান্তর চাষ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তাই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা বিদ্রোহ গড়ে তোলে।
১৮৫৫ সালে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য। তাঁরা এ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইংরেজ, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিলো ব্রিটিশ সৈন্য ও তাঁদের দোসর ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের বিভিন্ন নিয়মনীতি থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। সাঁতাল হুলের ইতিহাস হতে জানা যায়, দামিন-ই কোহ ছিলো সাঁওতালদের নিজস্ব অঞ্চল।