২৮ বছর পর কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা’র অবসানঃ জনমনে ক্ষোভ

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদীর দেওয়া নারাজি খারিজ করেছে আদালত। দ্বিতীয় দফায় কল্পনা’র ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা’র নারাজি আবেদন দাখিলের ছয় বছর পর এই আদেশ দিল রাঙ্গামাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার রাঙামাটির বিচারিক হাকিম ফাতেমা আক্তার মুক্তার আদালত এই আদেশ দেয়।
এতে কল্পনা চাকমা অপহৃত হলেও কে বা কারা করেছে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বলে দেওয়া চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনই বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমার আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা।
চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে কারও দায় পাওয়া না যাওয়ায় কল্পনার ভাইয়ের মামলাটির বিচার আর এগোবে না। এর ফলে ২৮ বছর আগের অপহরণের মামলাটির অবসান হল।
বাদীর আরেক আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান বলেন, ‘আদালত বাদীর তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে মামলাটি নথিভুক্ত (খারিজ) করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে মামলার বাদী কালিন্দী চাকমা আদালতে জেলা পুলিশ সুপারের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করে পুনঃতদন্ত চেয়েছিলেন। সেই আবেদনটিই নামঞ্জুর করা হয়েছে মঙ্গলবার।
আদেশের পর কালিন্দী চাকমা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “অপহরণের ২৮ বছর পরে এই আদেশ দুঃখজনক। আমি আশা করেছিলাম, ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু এই আদেশে হতাশ। আমি উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন করব।”
এদিন আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, বাদীর নারাজি নিয়ে কয়েক দফা শুনানি হয়। মঙ্গলবার সেই নারাজি আবেদনের সর্বশেষ শুনানি শেষে আবেদনটি নামঞ্জুর করে আদালত। ফলে ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার দ্বিতীয় দফায় তদন্ত শেষে আদালতে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন সেটিই বহাল থাকল।
মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, “আদালতে আমরা আমাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আদালতও কালিন্দী কুমার চাকমার জবানবন্দি নিয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেবেন।
“কিন্তু আদালত নারাজি আবেদনটি নামঞ্জুর করেছে। ফলে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটিই গৃহীত হল।”
উল্লেখ্য পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের দু’বছর পূর্বে এক বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন রাতে বাঘাইছড়ি থানার নিউ লাল্যাঘোনা থেকে তুলে নেওয়া হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে। এরপর তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ঘটনার পরদিন বাঘাইছড়ি থানায় মামলা হয়।
সেসময় অপহরণের জন্য রাঙামাটিতে তখনকার কর্মরত সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কল্পনার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। পাহাড়িসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিও দাবি করা হয়। ২০১০ সালের ২১ মে পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেয়। তখন মামলার বাদী ও অপহৃতার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা তা প্রত্যাখ্যান করে ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি করেন।
২০১৬ সালে আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে রাঙামাটির ওই সময়কার পুলিশ সুপার সৈয়দ তারিকুল হাসানকে এ মামলার তদন্তভার দেন। তিনি দুই বছর পর ২০১৮ সালে কারও বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ার তথ্য জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনেও সেসময় নারাজি দিয়েছিলেন কল্পনার ভাই।
আদালতের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আদালতে আজ কী হয়েছে সেই বিষয়ে কোনো কিছু শুনিনি এখনও।”
জনমনে ক্ষোভ:
এদিকে এ মামলা অবসানের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিশিষ্ট লেখক ও কথা সাহিত্যিক ওয়াসী আহমেদ বিদ্রুপের সুরে লিখেন “তাই তো, ২৮ বছর আগে কল্পনা চাকমা বলে বাঘাইছড়ির লাল্লঘোনা গ্রামে কেউ ছিল না”।
বান্দরবানের মানবাধিকার কর্মী লেলুং খুমি লিখেছেন, “এমন দায়মুক্তি আদেশ অশুভ শক্তিদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে। লজ্জাজনক”।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট সাইদিয়া গুলরুক লিখেছেন, “এই আদেশের মধ্যে দিয়ে সন্দেহভাজন সকল ব্যাক্তি তথা অভিযুক্ত লেফটেনান্ট ফেরদৌসের দায়মুক্তি ঘটল এবং মামলাটি ডিসমিস করা হলো ।”