১৫ ডিসেম্বরের পর মাঠে সশস্ত্রবাহিনী: সিইসি
ভোটের ১৫ দিন আগে থেকে জেলা পর্যায়ে সশস্ত্রবাহিনীর ছোট ছোট দল কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভায় একথা বলেন সিইসি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে নূরুল হুদা বলেন, “১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম পুলিশের সাথে দেখা করবে। প্রতি জেলায় থাকবে সশস্ত্রবাহিনীর ছোট টিম। এদেরকে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবেন। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।”
তবে সশস্ত্রবাহিনীর কর্মপরিধি, তারা কতদিন নিয়োজিত থাকবে তা জানান নি সিইসি।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের পরে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে ইতোমধ্যে কমিশন জানিয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। এর আগে ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, বাছাই ২ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন থাকবে।
সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের সময় মোতায়েনের দাবি ছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দলের।
তবে গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সিইসি বলেন, এবার সেনা মোতায়েন হবে আগের মতোই; অর্থাৎ সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না।
বাংলাদেশে এর আগের প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সেনা মোতায়েন হয়েছে। ভোটের মাঠে সেনাসদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতেই নিয়োজিত থাকেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।
২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোনো বিধান আরপিওতে ছিল না। তারপরও ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও জেলা/থানা/উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল।
২০১৪ সালের ভোটে সেনাবাহিনী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত ছিল।
সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ দেয় ইসি।
এজন্য রেওয়াজ অনুযায়ী প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে ইসির সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় ইসি সচিবালয়।
সশস্ত্র বাহিনীর কার্যপরিধির বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যপরিধির ১৩০ ও ১৩১ ধারা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর সপ্তম ও দশম অনুচ্ছেদের ক্ষমতা ও নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত হবে।
মোতায়েন করা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের কাজ হবে নির্বাচনী কাজে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রহায়তা করা।
সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মহানগর এলাকার ‘নোডাল পয়েন্ট’ এবং অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেবেন এবং ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা/থানায় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কে নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা।
কোনো হয়রানি নয়
‘গায়েবি মামলা’ ও গ্রেপ্তার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আগাম তথ্য সংগ্রহ নিয়ে বিএনপির অভিযোগের মধ্যে নিরাপরাধীকে কোনো ধরনের হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি।
সভায় পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা আমরা বলিনি। এটা আপনারা করবেন না। কারণ এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তারা বিব্রত হন। আমরা এটা চাইনা।
“কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করবেন না। মামলা করবেন না। কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। আশা করি আপনারা এটা করছেনও না।”
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি আরো বলেন, “যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন। প্রজাতন্ত্রের সকলে মিলেই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কাজ করব। নির্বাচনের সিংহভাগ দায়িত্ব পুলিশের থাকে। ভোটারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের উপরই বেশি থাকে।”
নির্বাচন পরর্বতী সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন সিইসি।
“ঐতিহ্যগতভাবেই এই দায়িত্বও আপনাদের। এবারো দেশের বৃহত্তম স্বার্থে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান মতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেক মতে কাজ করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের সকলে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে। আমরা কারো উপর কর্তৃত্ব করব না। নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তার বিষয়ে সংবিধানে যেমন বলা আছে।”
নির্বিঘ্ন দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের আশ্বস্ত করে নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তবে কমিশন আপনাদের কর্মকাণ্ড নজরদারি করবে। অলরেডি অভিযোগ আসা শুরু করেছে। তবে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করবেন। ভালোভাবে যাচাই না করে আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এতে আপনাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য একমাত্র পুলিশেরই আছে। তাই বিভিন্ন বাহিনী পুলিশের কাছ থেকেই পরামর্শ নেবে। পুলিশকে এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।