আঞ্চলিক সংবাদ

হাজং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে

গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিতে বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন-এর উদ্যোগে ‌’মানবাধিকার, ভূমি অধিকার ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক কর্মশালা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন ঐতিহ্যবাহী হাজং ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে যেতে এখন শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। হাজং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় যেমন হাজং আদিবাসীদের আরো সচেতন হতে হবে তেমনি সরকারকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও বক্তারা হাজংদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ, শিক্ষা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং এর সঞ্চালনায় এবং সংগঠনের সভাপতি খগেন্দ্র হাজং এর সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক খান। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রিন্সিপাল রেভাঃ মনীন্দ্র নাথ মারাক, লেখক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব, লেখক ও ট্রেজারি অফিসার আবু সাঈদ কামাল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক সাকার মুস্তাফা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কালচারাল একাডেমির পরিচালক শুভ্র চিরান, হাজং মাতা রাশিমণি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মতিলাল হাজং, বাংলাদেশ কৃষকলীগ, দুর্গাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন হাজং, বাংলাদেশ হাজং তিমাদ(নারী) সংগঠনের সভানেত্রী সন্ধ্যা রানী হাজং, সংগঠনের শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল হাজং, হাজং ছাত্র সংগঠন, দুর্গাপুর শাখার সভাপতি ছোটন হাজং প্রমুখ। জাতীয় হাজং সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল হাজং কর্মশালার উদ্দেশ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালাগুলোর আলোকে ওঠে আসা ১২টি সুপারিশমালা তোলে ধরেন। সুপারিশমালা ও দাবিগুলো হলো: ১. হাজংসহ সমতলের সকল আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে ও ভূমি রক্ষায় একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে, ২. হাজংভাষার চলমান বিলুপ্তি ঠেকাতে হবে এবং সরকারিভাবে হাজং ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে, ৩. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আদিবাসী কোটা ১০০% পূরণ করতে হবে এবং অবহেলিত হাজং বেকারদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, ৪. হাজং সংস্কৃতি মানে শুধু হাজং নাচ-গান নয়। তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমির আওতায় তাদের জন্য একটি থোক বরাদ্দ ছাড়াও তাদের সংস্কৃতি যথা জীবন-ব্যবস্থা, আচার-আচরণ ও রীতি সংরক্ষণ ও বিকাশে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করত হবে, ৫. স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে আলোচনা ও মতামত গ্রহণ ব্যতিরেকে সরকারি/বেসরকারি কোন উন্নয়ন কাজের নামে বা স্থানীয় খনিজ সম্পদ উত্তোলনের নামে আদিবাসীদের নিজস্ব ভূমি হতে উচ্ছেদ করা যাবে না, ৬. আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত সকল ধরণের সহিংসতার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে এবং ‘আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন করতে হবে, ৭. আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষর করতে হবে, ৮. আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, ৯. সমাজে হাজং নারীদের মর্যাদা ও নারীদের উত্তরাধিকার আইন বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে, ১০. হাজং সংগঠনগুলোকে নিজেদের অধিকার আদায়ে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং একাজে সকলের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে, ১১. হাজং আদিবাসীদের মাঝে মানবাধিকার, ভূমি অধিকার ও আদিবাসী অধিকার বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে আরো বেশি বেশি কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ১২. দেশের আদিবাসীদের দেখভাল করা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দিনব্যাপি আয়োজিত এ কর্মশালাটির সহযোগিতায় ছিল ‘ল্যান্ড ইজ লাইফ’ এবং ‘হাজংমাতা রাশিমণি কল্যাণ পরিষদ’ নামে দুটি সংগঠন। এ কর্মশালায় শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার শতাধিক হাজং প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

Back to top button