সীতাকুণ্ডের শিশুরা ‘হামে’ আক্রান্ত হয়েছিল
হামের কারণে মারা গিয়েছে সীতাকুণ্ডে সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পাড়ায় নয়টি শিশু। সীতাকুণ্ডের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া অজ্ঞাত রোগটিকে হাম বলে শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ।
সোমবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাদান কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু সীতাকুণ্ড উপজেলায় সোনাইছড়ি ইউনিয়নের তালিকায় ত্রিপুরা পাড়ার নাম উল্লেখ নেই। ম্যালেরিয়া অন্যান্য কয়েকটি রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় থাকলেও ত্রিপুরা পাহাড়ের ৯টি এলাকায় ৩শ’ ৮৮ জন মানুষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ টিকাদান কর্মসূচির বাইরে ছিল। এ কারণে সেখানে কোনও টিকাদান কার্যক্রম ছিল না।
তবে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের সব ওয়ার্ডে টিকাদান পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন জনপদ যদি এ কর্মসূচির থেকে বাদ পড়ে থাকে সেটাকে এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা এলাকার পাহাড়ে নয়টি জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা স্বাস্থ্যসেবা নেয় না। উত্তর ত্রিপুরা পাড়ার পাহাড়ি টিলায় ৮৫টি উপজাতি পরিবার বাস করে, আধুনিক চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের অনীহা ছিল। তবে সীতাকুণ্ডের এ ঘটনার পরে আমরা চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি যেন কোন শিশু টিকাদান কর্মসূচির বাইরে না থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, কয়েকটি গোষ্ঠীর মানুষ বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাস করত। এ কারণে তারা আধুনিক শিক্ষা থেকে দূরে ছিল। বাচ্চাদের রোগবালাই ও চিকিৎসার বিষয়ে কোনও তথ্য জানতো না। এ কারণে ৮ জুলাই প্রথম একটি শিশু মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনার পরবর্তীতে ৯ জুলাই আরও দু’জন, ১১ জুলাই একজন ও ১২ জুলাই ৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে ঘটনাগুলো প্রকাশের পর আইইডিসিআর এর ৫ সদস্যের টিম সেখানে যায়। আক্রান্ত শিশুদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। পরে ল্যাব টেস্টে দেখা যায়, আক্রান্ত ও মৃত শিশুরা হাম রোগের জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল। তারা পুষ্টিহীনতায়ও ভুগছিল। এ কারণে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছিল। অপুষ্টির কারণে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছিল । কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকত না।
এ ঘটনার পরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্থানীয় বাসিন্দা বীরেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে অস্থায়ীভাবে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এসময় বাংলাদেশে শতভাগ শিশু হামের টিকা পায় কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি শতভাগ শিশু হামের টিকা পায় না। তবে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু সবগুলো টিকা পেয়ে থাকে। বাকিরা কর্মসূচির বাইরে থাকে ।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক মিরজাদী সেব্রিনা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. সানিয়া তহমিনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাম উন্নয়ন কর্মসূচির বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্ট্রিপেন চাকো।