সিলেটে এক মণিপুরী পরিবারকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ অপচেষ্টার অভিযোগ
সিলেট নগরীর অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র শিবগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থিত মনিপুরী সম্প্রদায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি ভূমি দস্যু সন্ত্রাসীদের দারা অবৈধ দখল, অব্যাহত উচ্ছেদ অপচেষ্টা, প্রান নাশের হুমকি এবং দেশ ত্যাগে বাধ্য করার হুমকির প্রতিবাদে গত ২২ শে অক্টোবর,২০১৭ইং সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসরাণী দেবী।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী এসরাণী দেবী জানান, দীর্ঘদিন থেকে তার প্রয়াত স্বামী অমৃত সিংহ ও তার পিতা অম্বিকাচরণসিংহ এবং পিতামহপূর্ণ চন্দ্র সিংহেরনামে রেকর্ডপত্র থাকা জমি তে তিনি ও তার পরিবার বসবাস করে আসছে। ০৮/০৯/১৯৯৯ সালেতার স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে মনিপুরীহিন্দু আইন মতো এসরাণী দেবী ও তারপুত্র সন্তানেরা এই জমির মালিক হন। তার মেয়ে সন্তানেরা বিবাহ পূর্ব পর্যন্ত এই সম্পত্তির মালিক। সিলেট শহরের অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র শিবগঞ্জ বাজারস্থ কিচেন মার্কেট ও মকবুল টাওয়ারের বিপরীতে থাকা রায়নগর মৌজাধীন ৩৬৬ খতিয়ানভূক্ত ৩৫০, ৩৫৪, ৩৫৫, ৩৫৬, ৩৫৭, ৩৫৮, ৩৫৯ দাগ সমূহে .৪৪ শতক জমিতে তাদের ওয়ার্কশপ,বসতঘর, ছোটকারখানা এবং পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে তাদের দোকানাপাঠ রয়েছে।
২০০৬ সালের ১৩ মার্চ হঠাৎ ৭০/৮০ জনের এক দল ভূমি দস্য আজিজুর রহমান মানিক মিয়ার (প্রাক্তন চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে এসরাণী দেবীর ভূ-সম্পত্তিঅবৈধ দখলের উদ্দেশ্যে নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ শ্রমিক নিয়া হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তৎকালীণ কোতয়ালী থানায় জিডি নং ৯৩৭, তাং ১৩/০৩/২০০৬, দায়ের করা হয়। কোতয়ালী থানার পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ তৎপরতায় ভূমি সন্ত্রাসীরা তখন ব্যর্থ হয়। ঐ ঘটনায় পরে জানা যায় যে এসরাণী দেবীর ভোগ-দখলে থাকা বৈধ ভূ-সম্পত্তি অবৈধ দখল করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি ভূয়া/ জাল বিনিময় দলিল তৈরি করেছে ভূমি সন্ত্রাসীরা, যার নং- ১৫৮৬৫। ঐ জাল দলিলে ১ম পক্ষ দেখানো হয়েছে আব্দুস সালাম, পিতা- মৃত মোঃআব্দুল আউয়াল, গ্রাম- টিলাগড়, শাপলাবাগ, সিলেট। ২য় পক্ষ দেখানো হয়েছে, অমৃত সিংহ, পিতা- মৃত অম্বিকাচরণ সিংহ মনিপুরী, গ্রাম- শিবগঞ্জ মনিপুরী বস্তি, থানা কোতয়ালী, সিলেট। ঐ ভূয়া দলিলে দেখানো হয়েছে উভয়পক্ষ ‘স্ব’ ‘স্ব’ জমি বিনিময় করেছেন। যাতে ১ম পক্ষ ২য় পক্ষের .৪৪ শতকজমি নেন এবংবিনিময়ে ২য় পক্ষ অমৃত সিংহকে বিভিন্ন দাগের ৭৮ শতকজমি দেন। কিন্তু ঐ দলিল যেহেতু ভূয়া বাজাল তাই জমি বিনিময়ের কোন প্রশ্নই আসেনা এবং অমৃত সিংহকে কোন জমি দেয় নাই। তিনি ও তাদের কোন জমি দেন নাই। ১৪/১১/২০০৯ তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর দেয়া ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখাযায় ১ম পক্ষ আব্দুস সালাম যে সকল জমি বিনিময় দেখিয়েছে তার মধ্যে ১৪৪৯, ১৪৫০ দাগের জমিগুলো আব্দুস সালামের নিজ আত্মীয় মোঃ মুস্তাক মিয়া, মোঃ ছইদ মিয়ারা ভোগ দখলে আছেন। তখন এসরাণী দেবী স্বামীর সম্পত্তির স্বত্ত্ব পাওয়ার জন্য ৯ জনকে বিবাদী করে মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে স্বত্ত্ব মোকদ্দমানং ৫২/০৬ দায়ের করেন, যা বিচারধীন আছে। ভূমি সন্ত্রাসীরা পরস্পরের যোগ সাজসে, শুধু ৮৮ সালের ভূূয়া দলিইনয়, ঐ দলিল মূলে পরবর্তীতে আরো ৬টি (১) ১৩১৩০/৯৩ইং, (২) ৭০৩০/৯৫ইং, (৩) ৭০৯৩৬/৯৭ইং, (৪) ৭০৯৩৭/৯৫ইং, (৫) ৭০৯৩৮/৯৭ইং, (৬) ৬০১৬৫/২০০২ সাল দলিল তৈরী করে। তাদের এই ভূয়া ও জাল দলিল বাতিলের জন্য আমার ৫২/২০০৬ইং করা মামলাটি ২০১২ সালে স্থানান্তরিত হয়ে, মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ অতিরিক্ত আদালত সিলেট-এ বিচারাধীন এবংবর্তমানে যা শুনানীর শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিবর্তীত আদালতে মামলানং- ৬৮/২০১২ইং ।
এসরাণী দেবী আরো জানান যে, উক্ত ভূয়া ও জাল দলিল মূলে ভূমি দস্যু সন্ত্রাসীরা তার ভূ-সম্পত্তি তাদের নামে নাম জারী করানোর জন্য বারবার স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করে। স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারের নিদের্শে তদন্ত করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবেদনকারী সন্ত্রাসীদের পক্ষে কোন স্বত্ত্ব না পেয়ে নাম জারীর আবেদন খরিজ করে দেন।
এমতা বস্থায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরেও ভূমি সন্ত্রাসীরা এসরাণী দেবীকে তার জমি থেকে উচ্ছেদের জন্য নানা জোর-দবরদস্তি, হুমকি-ধামকি এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার ষড়ডন্ত্র করে যাচ্ছে। এসরাণী দেবী তার পরিবারকে ভূমি সন্ত্রাসীদের দখল চক্রান্তের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে বলেন, – “আমরা অসহায় একটি মনিপুরী পরিবার। কয়েক শতাব্দী যাবৎ পুরুষানুক্রমে এই বসত ভিটায় বসবাস ও ভোগ দখল করে আসছি। ভূমি সন্ত্রাসীদের দখল চক্রান্তের শুরু থেকে স্থানীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়, র্যাব, গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ, মাননীয় রধানমন্ত্রী ও মাননীয় অর্থমন্ত্রী দপ্তর এবং সচেতন সাংবাদিক মহলের সঠিক ভূমি কায় আমরা এখনো এই মাটিতে টিকে আছি। এই মাটিতে আমাদের জন্ম এই মাটিতে আমরা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। কোন সন্ত্রাসী ভূমি দস্যুদের ভয়ে আমরা দেশ ত্যাগ করতে চাইনা।”