সিলেটের হবিগঞ্জে অনাহার-অর্ধাহারে সাত চা শ্রমিকের মৃত্যু
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানে শ্রমিকদের বেতন, রেশন ও চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহার-অর্ধাহারে সাত শ্রমিক ও কর্মচারী মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের ৪১৫ শ্রমিক ও আট কর্মচারীর পরিবারের আড়াই হাজার সদস্য মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গত ১০ মে থেকে বাগান মালিকের অব্যবস্থাপনার কারণে চা বাগানের শ্রমিক ও স্টাফরা নিয়মিত মজুরি, রেশন ও ওষুধ পাচ্ছেন না। চা শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন।
অর্ধাহার-অনাহারে থেকে ইতিমধ্যে চা শ্রমিক নিতাই সাঁওতাল, প্রবণ সাঁওতাল ও লক্ষ্মীমনি বুমিজসহ পাঁচ শ্রমিক মারা গেছেন। বেতন না পেয়ে ও শ্রমিকদের চাপের কারণে স্ট্রোক করে বাগানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও মরণ চক্রবর্তী মারা গেছেন বলে শ্রমিকরা জানান।
বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৯৫৫ একর জমিতে ব্যক্তিমালিকানায় বৈকুণ্ঠপুর চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৪১৫ শ্রমিক ও আটজন স্টাফ নিয়ে বাগানের চা উৎপাদনের কাজ চলে আসছে।
চা শ্রমিক নেতা শাওন রবিদাস জানান, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ২৪ মাসের ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৯ টাকা বাগান মালিকপক্ষ আত্মসাৎ করেছে। চার মাসের স্টাফ বেতন তিন লাখ ৫৯ হাজার ২৫ টাকা, শ্রমিকদের মজুরি ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ২০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করেই মুখার্জি কম্পানির চা বাগানটির ম্যানেজার শাহজাহান ভুঁইয়া লাপাত্তা হয়ে যান।
শ্রমিকরা বলেন, ন্যায্য মজুরি-বোনাস, রেশন না পেয়ে আমরা এখন খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি। ৪১৫ শ্রমিক পরিবারের আড়াই হাজার সদস্য অর্ধাহার-অনাহারে দিন যাপন করছে।
শ্রমিক লীলা শীল আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বহু কষ্ট করে কাজ করেন। কিন্তু মজুরি না পাওয়ায় নিজেই যেখানে ভালো করে খেতে পারছেন না, সেখানে পেটের শিশু কিভাবে পুষ্টি পাবে—এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তার। আর শরীর সব সময় খারাপ থাকলেও চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।
সোমবার দুপুরে বাগানের ফ্যাক্টরির কাছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজন করে শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠান। ফেসবুকের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের কৃষিজমি রক্ষা সংহতি কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৪২ বস্তা চাল, আট বস্তা ডাল, ২০০ কেজি লবণ, ১২ বস্তা আটা ও পাঁচ বস্তা আলু বিতরণ করা হয়।
গত রবিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব শ্রমিকের মাঝে ২০ বস্তা করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। তবে শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে সাহায্য গ্রহণ করলেও তারা কাজ ও মজুরি চান।
চা শ্রমিকদের নারী সর্দার অমলা র্যালী জানান, চার মাস ধরে বেতন ও রেশনের টাকা না পাওয়ায় বাগানের শ্রমিকরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই ছেলেমেয়েদের খাতা, কলমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ কিনে দিতে পারছেন না। হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এর পরও তারা বাগানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি এবং তথ্যসুত্রঃ অনলাইন বাংলা