মতামত ও বিশ্লেষণ

সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে আদিবাসী সাঁওতালদের পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত দাও

সম্মানিত সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ
সংগ্রামী শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আপনারা অবগত আছেন যে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শত শত আদিবাসী সাঁওতাল-বাঙালি ৮ দফা দাবির প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলনরত। আপনারা নিশ্চয়ই জেনেছেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের ১৮৪২.৩০ একর জমিতে সুদীর্ঘকাল ধরে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমাধীন গোবিন্দগঞ্জ থানার মহিমাগঞ্জে রংপুর সুগার মিল প্রতিষ্ঠা করে। এর জন্য সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকার আদিবাসী ও বাঙালি পরিবারবর্গের ভোগদখলীয় ১৮৪২.৩০ একর জমি The East Bengal (Emergency) Requisition of Property Act 1948 (No. VIII of 1948) এর বিধান অনুসারে সুগার মিলের ইক্ষুচাষ ও ইক্ষু সরবরাহ করার জন্য রিকুইজিশন (Requisition) করা হয় এবং ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার উক্ত আইন মোতাবেক পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের সাথে একটি চুক্তিপত্র সম্পাদন করে। চুক্তিতে বলা হয়, যে কাজের জন্য (ইক্ষুচাষ) জমি রিক্যুইজিশন করা হয়েছে তা করা না হলে খেসারতসহ পূর্বমালিকদের কাছে ফেরত দিতে হবে।

তৎকালীন সরকার জোরজুলুম ও নানা ছলনার মাধ্যমে রিক্যুইজিশন করলেও সুগার মিলের স্বার্থে আদিবাসীরা বাপদাদার ভিটা-জমি-বাড়ি-ঘর ছেড়ে যায়। ২০০৪ সালে রংপুর সুগার মিল বন্ধ ঘোষণা হলে মিল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাঝে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার ১৮৪২.৩০ একর জমি অবৈধভাবে লিজ প্রদান করতে থাকে। লিজ প্রদানের বিরুদ্ধে আদিবাসী-বাঙালী প্রতিবাদ করলে অসাধু মিল কর্মকর্তারা প্রভাবশালী স্থানীয় কুচক্রিমহলের যোগসাজসে উক্ত জমিতে ইক্ষুচাষ বাদ দিয়ে অন্যান্য ফসলাদি আবাদ শুরু করে। ইক্ষুচাষ ও মিল বন্ধ হওয়ার ফলে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার আদিবাসীদের জমি পৈত্রিকসূত্রে ফেরত পাবার অধিকার তৈরি হলে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা পৈত্রিকভিটায় চলে আসে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের সংহতির মাধ্যমে পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। আদিবাসী-বাঙালিদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে মিল কর্তৃপক্ষ জমির অবৈধ লিজ বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে কুচক্রি প্রভাবশালীদের স্বার্থহানি ঘটে। আদিবাসী বাঙালি সম্মিলিতভাবে পৈত্রিক জমি ফেরতের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করে। তখন মিল কর্তৃপক্ষের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী কুচক্রীমহল যোগসাজস করে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে জুলুম ও নির্যাতনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে আদিবাসী-বাঙালী ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় এবং ন্যায়সংগত ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়। সেসময় আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিদের হয়রানি ও উচ্ছেদের জন্য বিভিন্ন জুলুম নির্যাতন নিপীড়ণসহ তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলা করা হয়।

গত ৬ই নভেম্বর ২০১৬ মিল কর্তৃপক্ষ বেআইনীভাবে (কোর্টের আদেশ ব্যতীত) পুলিশ, প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের দ্বারা উচ্ছেদের নামে নিরীহ আদিবাসীদের উপর হামলা, বসতবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করে। গুলি ও নির্যাতনে শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মারডি ও রমেশ টুডু নিহত হন এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে পুলিশ অনেককে গ্রেফতার করে। এমনকি পুলিশ আদিবাসী-বাঙালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে অনেককে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এখন পর্যন্ত আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিদের ওপর হয়রানীমূলক ৮ থেকে ১০টি মিথ্যা মামলা ঝুলছে।

মামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন পুলিশ ও কুচক্রী প্রভাবশালীমহল থানায় ভিকটিমদের মামলা গ্রহণ না করে দীর্ঘ ১০দিন পর স্বপন মুরমু নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে অজ্ঞাত ৫০০/৬০০ জনকে আসামী করে মামলা রেকর্ড করে। স্বপন মুরমু আদিবাসী ভিকটিম পক্ষের প্রতিনিধি নন, অথচ ভিকটিমদের প্রতিনিধি থমাস হেমব্রম কর্তৃক স্থানীয় সাংসদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অভিযোগ/এজাহার অজ্ঞাতকারণে থানা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। উল্লেখ্য, আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে ইউনিফরম পরিহিত পুলিশ কর্তৃক অগ্নিসংযোগের দৃশ্য আল জাজিরা টিভিসহ দেশীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ফলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে গাইবান্ধা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচারিক তদন্তে পুলিশ কর্তৃক আদিবাসীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। অগ্নিসংযোগকারী ৩ পুলিশ বিভাগীয় তদন্তে চিহ্নিত ও সাময়িক বরখাস্ত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চিহ্নিত ৩ পুলিশকে এখনো এ অপরাধ সংঘটনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়নি বা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা হয়নি। ঐ তিন পুলিশকে রিমান্ডে নিলে অগ্নিসংযোগকারী, লুটপাটকারী, সন্ত্রাসী, খুনিদের সনাক্ত করা যাবে বলে অভিজ্ঞমহল দাবি করেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেফতার করেনি। উপরন্তু আদিবাসীদের বাড়িতে আগুন দেয়া, হামলা-নির্যাতনের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। গত ২৪ মার্চ দিবাগত রাতে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা আদিবাসী ওরাওঁসহ ভূমিহীনদের বাড়িঘরে হামলা ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে ৩৬ টি পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়। স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। আমরা অবিলম্বে আদিবাসীদের ওপর হামলা ও বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনার জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ
৬ নভেম্বরের বর্বরোচিত হত্যা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে স্বপন মুরমু ও থমাস হেমব্রমের দায়ের করা পৃথক দুটি এজাহারকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও তারা এ তদন্তের কাজ এখনো শেষ করেনি। অথচ একই জেলায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় তিনমাসের মধ্যে পুলিশকে আদালতে চার্জশীট দাখিল করতে আমরা দেখেছিলাম। সাংসদ লিটন হত্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রায় ক্লুলেস একটি হত্যাকা-ে জড়িতদের যদি আড়াই মাসের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তাহলে ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখ প্রকাশ্যে শত শত মানুষ এবং গণমাধ্যমের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কারা জড়িত সেটি আড়াই বছরেও কেন উদঘাটন করা সম্ভব হয় না? সেটাই আমাদের প্রশ্ন। দেশবাসীও তা জানতে চায়।

৬ নভেম্বর ২০১৬ বর্বরোচিত তা-বলীলার পর আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিলে দেশের বিভিন্ন সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, গণমাধ্যম এবং প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ও আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। যারা আদিবাসীদের সাহস ও প্রেরণা দিয়েছেন, এখনো দিয়ে যাচ্ছেন, আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে আদিবাসীদের সহমর্মিতা দেখিয়েছেন ও সহায়তা করেছেন তাদের আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে আদিবাসীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। একইসাথে আমাদের আন্দোলনের ৮ দফা দাবি আপনার সামনে তুলে ধরছি।

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ৮ দফা দাবি
১. গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম-এর রিক্যুইজিশন (Requisition) করা ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি আদিবাসীদের ফেরত দিতে হবে। সেই লক্ষে অবিলম্বে সংগ্রামরত স্থানীয় সাঁওতাল ও বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাঙ্গালী পরিবারের কাছে স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

২.আদিবাসীদের সম্পত্তি কোন সরকার/কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিক্যুইজিশন (Requisition) করা এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আদেশ বাতিল ও পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করে আদিবাসীদের সম্পত্তি দেবার উদ্যোগ নিতে হবে।

৩.(ক) আদিবাসী সাঁওতালপল্লীতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং গুলি করে নিহত ও গুরুতর আহত করার সাথে জড়িত উস্কানীদাতা ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং নিহত ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

(খ) আমরা একই সাথে গত ২৪ মার্চ ২০১৯ ধামইরহাটে আদিবাসীদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ওই আদিবাসীদের পরিবারের জন্য তাদের বাড়ি ও জমিতে দখল ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী-বাঙালিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আদিবাসী-বাঙালি নারী-পুরুষের উপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের জুলুম ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৫. ১৯৪৮ সালের The East Bengal (Emergency) Requisition of Property Act 1948 (No. VIII of 1948) মোতাবেক যে কার্যের জন্য (ইক্ষুচাষ) রিকুইজিশন করা হয় তা না করা হলে খেসারতসহ পূর্বমালিক আদিবাসীদের ফেরতের বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬.আদিবাসী সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগকারী চিহ্নিত পুলিশ কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৭. ২০০৪ সালে সুগার মিল বন্ধের পর প্রভাবশালীদের মাঝে লিজের নামে যে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি হয়েছে সেই দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮.বাগদা ফার্মের উচ্ছেদকৃত সাঁওতাল ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অসহায় পরিবারের বিদ্যমান অসাহয়ত্ব বিবেচনায় নিয়ে তাদের জরুরি সহায়তার জন্য বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা, খাদ্য, পুষ্টি ও অন্যান্য মানবিক চাহিদা পূরণে জরুরি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর অধিকার সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ,
আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, আদিবাসী সাঁওতালগণ দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারাও এদেশের নাগরিক, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, রাষ্ট্রীয় চিনিকলের কর্মকর্তা কর্মচারী, তৎকালীন সাংসদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাংশ ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা ও নির্যাতনে তিন জন আদিবাসী নিহত ও অনেকে গুরতর আহত হন। স্থানীয় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ও সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল তৎকালীন স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্র যোগসাজসে সাঁওতাল পল্লীতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ সাঁওতালদের প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তছনছ করেছে। আমরা পূর্বের স্থানে আদিবাসী সাঁওতালদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবী জানাচ্ছি।
দুঃখের সাথে উল্লেখ করছি যে, ২০১৪ সালে ১১ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের ২৭তম বিসিএস ক্যাডারভূক্ত এসি (ল্যান্ড) অবিডিয় মার্ডিকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়। প্রভাবশালী ষড়যন্ত্রকারী চক্রের প্রভাবে দূর্ঘটনাজনিত হত্যাকা- হিসাবে দেখিয়ে ময়নাতদন্ত না করেই তার লাশকে সমাহিত করা হয়েছিল। এসি ল্যান্ডের পরিবার এটিকে সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবী করলেও নিরপেক্ষ তদন্ত না করেই মনগড়া রিপোর্ট দাখিল করা হয়। যা প্রহসনমূলক বটে। আপনার আরো অবগত হয়েছেন যে, সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ মাদকের গডফাদার হিসেবে (১৭ মে ২০১৮ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত) তালিকাভূক্ত আছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক ও মহামান্য হাইকোর্টেও সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যা ইতিমধ্যে আইনী প্রক্রিয়ায় আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পন্থায় নামে বেনামে বহু সম্পদের মালিক হয়ে তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র দিয়ে নিরীহ আদিবাসী সাঁওতালদের স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত। ফলে তার বা সন্ত্রাসী চক্রের ভয়ে নিরীহ সাঁওতাল-বাঙালিগণ ভীতসন্ত্রস্ত ও নিরাপত্তাহীন। তার অপকর্ম ও কুকীর্তির বিরুদ্ধে আদিবাসী জনগণসহ স্থানীয় জনমানুষ, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ সোচ্চার হওয়ার কারণে তিনি এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। আমাদের আশঙ্কা এ কারণে তিনি ও তার সন্ত্রাসী চক্র প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে যে কোনো মুহূর্তে বিগত সময়ের মতো হামলা, নির্যাতন কিংবা লুটপাটের মত হীন পন্থা বেছে নিতে পারেন। আমরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই এবং মিথ্যা মামলা, হয়রানী ও নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।

সম্মানীত সাংবাদিকবৃন্দ,
আমরা গোবিন্দগঞ্জে নিরীহ সাঁওতাল জনগোষ্ঠি ও বাঙালিদের সহায়তায় ৮ দফা দাবি পূরণকল্পে সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে ন্যায়সংগত আন্দোলন চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আপনাদের কাছে মিডিয়ায় বাস্তব চিত্র ও তথ্য উপস্থাপন করার মাধ্যমে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রত্যাশা করছি।
আমরা আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় নিজস্ব সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা নিয়ে আদিবাসী-বাঙালি মিলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আদিবাসী-বাঙালিদের ন্যায়সংগত আন্দোলন সংগ্রামের খবর ও তথ্য মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ যেভাবে সাহসিকতার সাথে উপস্থাপন করেছেন সেজন্য আমরা সকল মিডিয়াকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগামীতেও আপনাদের বস্তুনিষ্ট তথ্য সমৃদ্ধ খবর পরিবেশন করে দেশবাসীকে ন্যায়সংগত আন্দোলনের খবর অবহিত করবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও এএলআরডি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পঠিত মূল প্রবন্ধ।

Back to top button