সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
ইতোমধ্যে সরকারি হিসাবে ২০ জেলার ৩৫৬টি উপজেলার ৩৫৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নদ-নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের ৬৯টিতে পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ২৭টি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারায় সমান তালে পানি বেড়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে ধরলা, তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধলেশ্বরী, গুর, ধলেশ্বরী, ইছ-যমুনা, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, আত্রাই,পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, যদুকাটা, সোমেশ্বরী ও কংস নদীতে পানি বিপদসীমার উপরে বইছে।
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করে এ কর্মকর্তা বলেন, যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে সোমবার বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা ছিল বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপরে, যা এ পয়েন্টের রেকর্ড। এর আগে গতবছর বিপদসীমার ১২১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠেছিল।
এছাড়া কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ও সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদী বিপদসীমার ৯৬-১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মাও বিপদসীমা ছাড়িয়েছে; এখন ১৬ সেন্টিমিটার উপরে।
আর যমুনেশ্বরী বদরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার এবং কংস নদী জারিয়া ঝঞ্জাইল পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
আগামী কয়েকদিনে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্যার বিস্তার বাড়বে বলে আভাস দেন সাজ্জাদ হোসেন।
চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ পর্যন্ত ২০ জেলার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলছেন, দেশের উজানে তিনটি অববাহিকায় (গঙ্গা, বহ্মপুত্র ও মেঘনা) গত দুই-তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ফলে এসব অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে অধিদপ্তর। পানি বৃদ্ধির হার অন্তত আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে তাদের বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় চলমান বন্যা গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।
বৃষ্টি কমতে পারে বৃহস্পতিবার থেকে
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে আরও দু’দিন।
বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে, ৮৫ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসেরও আশঙ্কা থাকে।