সাজেক দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় ‘সাজেক ত্রাণ সহায়তা কমিটি’র ত্রাণ বিতরণ
মানবতা সেবায় হোক আমাদের আদর্শ, সাজেকের দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান’- এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গত ৩১ মে ২০১৭ রোজ বুধবার সাজেক ত্রাণ সহায়তা কমিটি পক্ষ থেকে সাজেকের দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় অসহায় মানুষের মানবতার সেবায় প্রায় ৬৬৫ পরিবারের কাছে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি করে ১৩.৩ মেট্রিক টন (তের হাজার তিনশত কেজি) চাউল বিতরণ করা হয়।
চাউল বিতরণের সময় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীপ চাকমা, সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জৈববোই তাং ত্রিপুরা, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল বিহারী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য বাচ্চু চাকমা প্রমুখ।
এর আগে সরকারের উদ্যোগে এবং বেসরকারিভাবেও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ সাজেকের দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষের খাদ্য সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিয়মিত চাউল বিতরণ করে সাজেকের দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষের মানবিক সহায়তা প্রদান করতে সকলকে এগিয়ে আসতে বলা হয়। সারা বাংলাদেশের জুম্ম শিক্ষার্থীরা সাজেকের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাসব্যাপী রাত-দিন কষ্ট করে দোর-টু-দোর গিয়ে এই চাউল সংগ্রহ করেছেন।
অপরদিকে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাজেকবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান। তার মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী ও ঢাকা মহানগরের জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, সিলেটের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, রাঙ্গামাটিতে জুম্ম শিক্ষার্থীবৃন্দ ও রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের জনসাধারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তত্ত্বাবধানে রাঙ্গামাটি শহরের প্রতিটি এলাকা, রাঙ্গামাটি সদর থানাস্থ বালুখালী, মগবান, বন্দুকভাঙা, জীবতলী, সাপছড়ি ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ প্রতিটি ইউনিয়নের জনসাধারণ এবং নান্যাচর উপজেলা হতে সাজেকের দুর্ভিক্ষ কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।
সাজেক পাহাড়ের দুর্গম এলাকা থেকে একদিনের পথ হেঁটে ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসেছেন দুর্ভিক্ষ কবলিত অনেক অসহায় মানুষ। তাদেরকে দেখে বুঝা যায় যে, চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে এক ধরনের অসহায়ত্ব চিহ্ন। দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষের করুণ আর্তনাদ ও হাহাকারের নির্মম চিত্র দেখে মানবতা গুমরে কেঁদে উঠেছে।
উল্লেখ্য যে, সাজেক এলাকায় জুম্ম অধিবাসীরা মূলত জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুম চাষ করে বড়জোর তারা ৬ থেকে ৯ মাসের খাদ্য যোগাড় করতে পারে। বাকি ৩ থেকে ৬ মাস তাদের মধ্যে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এই খাদ্য সংকট জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জুমের ধান পাকলে ধীরে ধীরে এই খাদ্য সংকট কেটে যায়। আরো উল্লেখ্য যে, গত বছর জুম চাষে তেমন ভালো ফসল হয়নি। ফলে জুমচাষী পরিবারগুলোতে ৩ মাস ধরে খাদ্য সংকট চলছে। সাজেকের কমপক্ষে ২৫টি দুর্গম গ্রামে আর্থিক অভাব দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্যে।
ত্রাণ বিতরণের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সহ-সভাপতি উৎপলাক্ষ চাকমা, জেএসএস বাঘাইছড়ি থানা কমিটির ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক শ্রী বুদ্ধাকর চাকমা ও দপ্তর সম্পাদক নয়ন জ্যোতি চাকমা।