অন্যান্য

সাংবাদিকতায় আদিবাসী তরুণ তুর্কি

শ্যাম সাগর মানকিন: গণমাধ্যম কর্মীরা সদা তৎপর থাকে বলেই আমরা জানতে পাই দেশ ও বিদেশের নানান তথ্য। কোথায় কি হচ্ছে, না হচ্ছে সেই সব তথ্য সংগ্রহ করতে এখানে ওখানে ছুটে বেড়ানো, ক্যামেরায় ধারণ করা, তথ্য সাজিয়ে উপস্থাপন করার কাজ করেন একজন গনমাধ্যম কর্মী। তাদের মধ্যে কাওকে আমরা প্রতিবেদক, কাওকে চিত্রগ্রাহক, কাওকে সম্পাদক, কাওকে উপস্থাপক বলে জানি । সবার উদ্দেশ্য মূলত একই, মানুষকে তথ্য জানানো। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আদিবাসী তরুনরাও কাজ করছেন, এটা খুব বেশি দিনের ঘটনা নয়। এই আয়োজন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সেই আদিবাসী তরুণ গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে, যারা আমাদের তথ্য জানাতে সদা তৎপর হয়ে কাজ করে চলেছেন।


ড্যানি দ্রং
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
চ্যানেল নাইন

শুরুটা করেছিলেন দেশ টিভি দিয়ে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করার পর ২০১১ সালে কিছুটা জীবিকার তাগিদেই গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজে যুক্ত হন। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কাজকে ভালোবেসে ফেলেন। সে জন্যেই কাজের অন্যান্য ক্ষেত্র খোলা থাকলেও আর কোথাও যাননি, থেকে গেছেন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে। এর মধ্যে পেড়িয়ে গেছে অর্ধযুগেরও বেশি সময়। শুরুর টিভি চ্যানেল ছেড়ে থিতু হয়েছেন চ্যানেল নাইনে। এখানে এসে পেয়েছেন আইন-আদালতের বিট। এখন ব্যাস্ত সময় কাটে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গনে। যেখানেই আইন-আদালত সংক্রান্ত কোন ঘটনা সেখানেই বুম হাতে পৌছে যান ড্যানি দ্রং।
একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজ করতে গেলে প্রচন্ড ধৈর্যের প্রয়োজন হয় বলে মনে করেন এই গারো আদিবাসী তরুন সাংবাদিক। গণমাধ্যমের কাজ খুবই চ্যালেঞ্জিং, এডভ্যাঞ্চারাসও বটে। টেলিভিশনের রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিতে গিয়ে কিছু বাঁধা পেরুতে হয়েছে। যেহেতু টেলিভিশন রিপোর্টার সেহেতু কন্ঠ এবং উচ্চারণের ব্যাপার সামলাতে হয়েছে তার, তাছাড়া অন্যান্যদের থেকে চেহারাটাও আলাদা হওয়ায় কিছুটা সংশয় তো ছিলোই। আদিবাসী হিসেবে বাংলা উচ্চারণে কিছুটা সমস্যা প্রায় সবারই হয়। কিন্তু সে সব বাঁধা পেরিয়ে নিজেকে একজন সাংবাদিক হিসেবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেকদূর।
সাংবাদিক হিসেবে সমাজের বা জাতির জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সাংবাদিকদের কাছে যেহেতু তুলনামূলকভাবে সবার আগে আসে, এবং সাংবাদিকের সুযোগ রয়েছে সে তথ্য যাচাই বাছাই করে সর্বাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার সেহেতু জাতি বা আদিবাসীদের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সমাজের জন্য অবদান রাখা যায় বলে জানান তিনি। আমাদের অনেক আদিবাসী তরুণ এই সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসলে সেই কাজ আরো সমৃদ্ধি ঘটবে বলেই তিনি মনে করেন। সেক্ষেত্রে তরুণদের ভাষা বা উচ্চারণের যে বাঁধা রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে বলে জানান তিনি। ড্যানি দ্রংয়ের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগের হালুয়াঘাট থানার মনিকুড়ায়।

জুয়েল থিওটোনিয়াস মারাক
স্টাফ রিপোর্টার
ডিবিসি

ড্যানি দ্রং এর সাথে একই সময়ে দেশ টিভি চ্যানেলে নবীশ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জুয়েল মারাক। সাংবাদিকতায় আগে থেকেই একটা ভালোলাগা ছিলো বলেই এই পেশায় আসা। জুয়েল মারাক চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন, এডভেঞ্চার ভালোবাসেন। আর সাংবাদিকতায় এগুলো রয়েছে যা তার ধরণের সাথে যায় বলে কাজটার প্রতি অন্যরকম বন্ধন অনুভব করেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক স্নাতকোত্তর করা এই তরুন সাংবাদিক এরই মধ্যে নিজের যোগ্যতার প্রমান দিয়ে ডিবিসি চ্যানেলে সচিবালয়ের বিটে কাজ করে চলেছেন।
শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, প্রথম টিভি চ্যানেলে জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে তাকে এবং ড্যানি দ্রংকে নেয়া হবে কি হবেনা এমন বিষয় নিয়ে সেই টিভি হাউজের অভ্যন্তরে কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো, যেটা আবার অনেক পরে তিনি জানতে পান। যদিও সেখানেই যোগদান করেছিলাম তবুও একজনের কাছে কিন্তু আমরা গ্রহণযোগ্য ছিলামনা। সেটা পরে অবশ্য আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রমান করেছি যে আমরা এই সাংবাদিকতার জন্য যোগ্য।
তরুণ আদিবাসী সাংবাদিক হিসেবে জুয়েল মারাক মনে করেন সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজন সাংবাদিকতার বা সংবাদের সাধারণ বিষয়ে জ্ঞান, সাহস, আর শারিরীকভাবে সুস্থতা। সাংবাদিকদের মেধা মনন ও শরীর সুস্থ্য থাকলে এ ক্ষেত্রে কাজ করাটা সহজ হয়ে ওঠে বলে তিনি মনে করেন। সাংবাদিকতাকে তিনি মহৎ পেশা হিসেবেই দেখেন। সাংবাদিক হিসেবে সমাজে অবদান রাখা সম্ভব, সে কাজ এখনো করে যাচ্ছেন। যখনই আদিবাসী বিষয়ক কোন সংবাদ তার কাছে পৌঁছায় তখনি সেটার গুরুত্ব বিবেচনা করে এডিটর ও অন্যান্য সাংবাদিকদের কাছে সেটা জানিয়ে দেন। তাতে করে অনেক গণমাধ্যমেই সেই সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার সুযোগ হয়। গারো আদিবাসী তরুন জুয়েল মারাক ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বড় হয়েছেন যদিও তবু তার গ্রামের বাড়ি দূর্গাপুরের রানীখং গ্রামের প্রতি টান অনুভব করেন বরাবরই।

বাদুলা ত্রিপুরা
সিনিয়র চিত্র সাংবাদিক
৭১ টিভি

রিপোর্টারদের সাথে যাদের সবসময় দেখা যায় ক্যামেরা হাতে বিভিন্ন চিত্র ধারণ করতে তারাই চিত্র সাংবাদিক। বাদুলা ত্রিপুরা সেই দলেরই একজন। সাংবাদিক হবেন এই স্বপ্ন তিনি দেখেছেন হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই। ২০০২ সালে বাবা মারা যাবার পর কিছুটা অকুস্থলে পড়ে যান। তারপরও নিজের চেষ্টায় কলেজে ভর্তি হন, উচ্চমাধ্যমিক পাশও করেন। তারপর কক্সবাজারে মালুমঘাটে আমেরিকানদের একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে অডিও ভিজ্যুয়াল বিষয়ক কাজ শেখা ও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কাজ করে সেখান থেকেই ভিডিওগ্রাফির একটা মোটামুটি ধারণা তৈরি হয় তার। বাদুলা ত্রিপুরার সাথে এটিএন নিউজের নিরঞ্জন দেববর্মার সর্বদা যোগাযোগ হত। তার মাধ্যমেই খোঁজ পান এটিএন নিউজে লোক নেবার কথা। পরবর্তীতে এটিএন নিউজের একদম শুরুর দিকে চিত্র সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন ২০১০ সালে। তারপর কাজ করেছেন সময় টিভিতে ও বর্তমানে রয়েছেন ৭১ চ্যানেলে। ৭১ এ কাজ করেন পিএম(প্রধানমন্ত্রী) বিটে। বাদুলা ত্রিপুরার মতে, গণমাধ্যমে কাজ করতে এসে আদিবাসী হিসেবে খুব একটা বৈরিতার মধ্যে যেতে হয়নি। সবার মতনই সমান গুরুত্ব পেয়েছেন সেখানে তিনি। চিত্র সাংবাদিকতা পেশাকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবেই মনে করেন। ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে মারের মুখেও পড়েছেন কয়েকবার। কিন্তু সে সব বাঁধা পেরিয়েই সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। তার মতে, এই পেশায় থেকে আদিবাসীদের স্বার্থের পক্ষে নানানভাবে অবদান রাখা সম্ভব। এই পেশায় আরো অনেক আদিবাসী তরুনের এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি। বাদুলা ত্রিপুরা বাড়ি রাঙামাটির রাজস্থলীতে।

নিরঞ্জন দেববর্মা
সিনিয়র চিত্র সাংবাদিক
এটিএন বাংলা

ক্যামেরার পিছনে কাজ করার বয়স পেড়িয়েছে একযুগেরও বেশি। ২০০৫ সালে টেলিপ্রেসে কাজে যোগ দেন নিরঞ্জন দেববর্মা। সেই থেকে যাত্রা শুরু করে এখন অবধি ক্যামেরা নিয়ে ছোটাছুটি চলছেই অবিরাম। ছোট থেকেই বিভিন্ন চিত্র সাংবাদিকদের কাজ দেখে উৎসাহিত হয়েছেন। মনে মনে ভেবেছেন, ওরা যদি পারে তবে আমিও পারবো। সে চিন্তা থেকেই ভিডিওগ্রাফি বিষয়ে তিনবছরের কোর্স করেছেন তিনি। বলা যায় সেই উৎসাহেই আজ এতদূর আসতে পেরেছেন বলে তিনি মনে করেন।

বর্তমানে এটিএন বাংলা সিনিয়র চিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। সেখানে পিএম(প্রধানমন্ত্রী) বিটে কাজ করেন তিনি। এটাকে চিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজের মধ্যে তার অন্যতম অর্জন বলে মনে করেন নিরঞ্জন দেববর্মা। তার মতে নিজের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ রেখে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করে গেলে যতই বাঁধা আসুক সে সব পেরুনো খুব কঠিন কিছু নয়। নিজের জীবনে বরাবরই এই অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়েছেন।

কোন কোন সময় হয়তো নিজের চ্যানেলে আদিবাসী বিষয়ক কিছু প্রচার করানোর ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয়, তারপরও কিছু সময় সেটা করা যায় বলে জানান তিনি। তার মতে এটা কিছুটা চ্যানেলের নিজস্ব পলিসির কারনে হয়ে থাকে। তরুন যদি কেউ চিত্র সাংবাদিক হতে চায় সেক্ষেত্রে নিরঞ্জন দেববর্মা মনে করেন নিজে থেকে কাজের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে, লক্ষ্যের দিকে সর্বদা একনিষ্ঠ হতে হবে। তবেই সফলতা আসে বলে মনে করেন তিনি। ত্রিপুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরঞ্জন দেববর্মার বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জে।

ম্যাথিউজ চিরান
নগর প্রতিবেদক
ডেইলি স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশুনা করেছেন। সেই সুবাদেই সাংবাদিকতায় আসা। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা করবেন এমন কোন আলাদা স্বপ্ন ছিলোনা ম্যাথিউজ চিরানের। ডেইলি স্টারে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৬ সালে। তার সাংবাদিকতার বয়স ২ বছর পেরিয়েছে, সে কারনেই বলা যায় একদম তরুন সাংবাদিক ম্যাথিউজ চিরান। ডেইলি স্টারে নগর জীবনের নানান ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করা তার কাজের আওতার মধ্যে পড়ে।
ম্যাথিউজের মতে, নিজের মধ্যে ইচ্ছে থাকলে সব জায়গা থেকেই নিজের সমাজের জন্য কাজ করা বা নূন্যতম অবদান রাখা সম্ভব। তবে গণমাধ্যম হলো এমন একটা জায়গা যেখান থেকে চাইলে আদিবাসী কি বাঙালি সকল শ্রেণীর মানুষের কথা তুলে ধরা যায়। সেটা সাংবাদিকের নিজের সৎ ইচ্ছা বা চাওয়ার উপর নির্ভর করে থাকে বলেই তিনি মনে করেন। ডেইলি স্টারে সে কাজের সুযোগ বা ক্ষেত্রটা রয়েছে বলেও তিনি জানান। কাজ করতে এসে একজন আদিবাসী হিসেবে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বা আলাদা করে কোন বাঁধা পেরুতে হয়নি কর্মস্থলে। গারো আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ম্যাথিউজ চিরানের বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতির ভাঁটপাড়া গ্রামে।

দ্রিঞ্জা চাম্বুগং
নগর বিষয়ক প্রতিবেদক
প্রথম আলো

দ্রিঞ্জা চাম্বুগং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশুনা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়াশুনা শেষ করে প্রথম আলোতে সাংবাদিকতায় ঢুকেছেন ২০১৬ সালে। সে হিসেবে সাংবাদিকতায় পথ চলা খুব বেশিদিনের না হলেও যোগ্যতার প্রমান রেখে চলেছেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। প্রথম আলোতে তার কাজের আওতাধীন হচ্ছে নগর। নগর জীবনের নানান ঘটনাকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত করার জন্য সদা তৎপর এই তরুন সংবাদ কর্মী।
প্রথম আলোতে কাজ করতে এসে প্রতিষ্ঠানের অনেকের কাছে নানান সহযোগিতা পেয়েছেন। আদিবাসী হিসেবে ভাষাগত সীমাবদ্ধতা থাকেই, সেটা যদিও প্রিন্ট মিডিয়াতে খুব বেশি সমস্যা হয়না বলে তিনি জানান। তবে কখনো কখনো সাক্ষাৎকার নিতে গেলে কিছুটা নিজের সীমাবদ্ধতা টের পাওয়া যায়, কিন্তু সেটাও কাজ করতে করতে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই তিনি মনে করেন।
গণমাধ্যমে কাজ করে নিজের জাতিসত্তার নানান বিষয় তুলে ধরা সম্ভব। কেবল সম্ভব সেটাই নয়, সেটাকে অনেক ক্ষেত্রেই আরো আরো ভিন্ন মাত্রায় ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলেই তিনি মনে করেন। সাংবাদিকতা করেন, টাকা পয়সা দেয় কিনা? সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সমাজের অনেকের কাছে এমন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আস্তে আস্তে ধারণা পালটে যাচ্ছে। সাংবাদিকতা বিষয়ে তরুনদের এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, সুসম্পর্ক তৈরি করার দক্ষতা, লেখালেখির চর্চা করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। দ্রিঞ্জা চাম্বুগংয়ের বাড়ি মধুপুরের গারো অধ্যুষিত গায়রা গ্রামে।

Back to top button