আঞ্চলিক সংবাদ

সরকার পার্বত্য চুক্তির মূল বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে- ঊষাতন তালুকদার এমপি

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে; কিন্তু চুক্তির মূল বিষয়সমূহ সরকার এখনও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করার পাশাপাশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, আভ্যন্তরীণ ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী পুনর্বাসন, পার্বত্য পুলিশ বাহিনী গঠন, জনগণের নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি নিশ্চিত করা যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এখানে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংস্থা। কিন্তু রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের দলীয়করণ ও দুর্বৃত্তায়ন এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাম্প্রদায়িক ও চুক্তি বিরোধী ভূমিকার কারণে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথভাবে তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করতে পারছে না।
গত ১৪ অক্টোবর ২০১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর ২০১৭ রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সফরকালে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার এই মতামত তুলে করেন। জনসংযোগকালে তিনি সিজক কলেজ, সিজক মুখ বিহার, খেদারমারাস্থ নরেশ মৈত্রী বিহার, খেদারমারা উচ্চ বিদ্যালয়, উলুছড়ি মৌজা হাইস্কুল, উলুছড়ি জীবমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, বঙ্গলতলী এলাকা, বিটি হাইস্কুল, তুলাবান হাইস্কুল, নূর আলী মাদ্রাসা, কাচালং ডিগ্রি কলেজ, জীবঙ্গছড়া নবরত্ম বৌদ্ধ বিহার, বাঘাইছড়ি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘাইছড়ি ধর্মাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহার, নবজ্যোতি বৌদ্ধ বিহার, দোজর বেনুবন ভাবনা কুটির, দোজর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সার্বোয়াতলী হাইস্কুল, উত্তর সার্বোয়াতলী বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি পরিদর্শন করেন এবং মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলার সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনময় সভায় মিলিত হন।
মতবিনিময় কালে ঊষাতন তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জাতিসমূহের অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জুম্মদেরকে দূরে ঠেলে দিয়ে নয়, বরং তাদের কাছে টেনে নিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। জুম্মরা দেশের স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং বর্তমানেও তারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রশংসীয় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু শাসকশ্রেণির একটা কায়েমী স্বার্থান্বেষী অংশ যারা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক তারা জুম্মদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে একেবারে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। এটা জুম্মদের সাথে সরকারের চরম প্রতারনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। শ্রী তালুকদার আরো বলেন, বিগত সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে জয়যুক্ত করতে সহযোগিতা দিয়েছে। কিন্তু তারা নির্বাচিত হয়ে জুম্মদের জাতিগত পরিচয় এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখেনি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
উষাতন তালুকদার এমপির জনসংযোগে অন্যান্যের মধ্যে তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল খীসা, সুশীল জীবন চাকমা জহন এবং জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা শাখার কর্মীবৃন্দ।

Back to top button