জাতীয়

আদিবাসীদের ৫% কোটা বহাল রাখার দাবী জানিয়েছে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ

সরকারী চাকুরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীসহ সকল শ্রেণীতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা বহাল রাখতে হবে বলে দাবী জানিয়েছে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সন্মেলনে এ দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সন্মেলনে সরকারি চাকুরিতে কোনো কোটা না রাখার সচিব কমিটির সুপারিশ ও ‘আদিবাসীরা অনেক অগ্রসর হয়েছে’ মন্ত্রিপরিষদ সচিবের এমন বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে জানান আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ । তারা বলেন, আদিবাসীরা মনে করছে আদিবাসীদের মাঝে এখনও এমন পরিবর্তন আসেনি যে, এখনি চাকুরি ক্ষেত্রে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা তুলে দিতে হবে।

সেখানে আরো জানানো হয়, উন্নয়নসহ যে কোনো সেক্টরে দেশের গড় হিসাবের চেয়ে আদিবাসীদের আলাদা করে বের করা হিসাবের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন, দেশে সরকারি হিসাবে এখন দারিদ্র্যের হার ২৪.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশে কমে এসেছে (ভিএনআর, ২০১৭)। কিন্তু প্রফেসর আবুল বারাকাতের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, আদিবাসীদের দারিদ্র্যের হার এখনও ৬৫ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪৪ শতাংশ (আবুল বারাকাত, ২০১৬)। আদিবাসীরা প্রান্তিকতা থেকে আরও প্রান্তিক হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা কী করে বলতে পারি আদিবাসীদের অবস্থা এখন অগ্রসর হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা পড়ার সমান সুযোগ, পর্যাপ্ত স্কুল কলেজ, ভাষার ভিন্নতার কারনে ঝরে পড়ে বলেও জানায় আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ। সেজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে সমানচোখে দেখা বা সমান প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়া সঠিক হবে না। যদি এমনটি করা হয় তাহলে আদিবাসীরা অচিরেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে এবং আরও প্রান্তিকতার শিকার হবে নিঃসন্দেহে। তারপরও, আদিবাসীদের প্রতি বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সারা বছরজুড়ে লেগেই আছে। ভূমি সমস্যা, উচ্ছেদ, নিপীড়ন, নারী ও শিশু নির্যাতন এসব ঘটনাগুলো আদিবাসীদের অস্তিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। ফলে চাকুরিক্ষেত্রে আদিবাসী/নৃ-গোষ্ঠী কোটা তুলে দেয়া মানে তাদের প্রতিনিধিত্ব বন্ধ করার শামিল বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সন্মেলনে জানানো হয়, দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা কোটার ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছেন, কোটা বাতিল নয়। বর্তমানে ৫৬% কোটা কমিয়ে আনার দাবি করেছেন। অন্যান্য কোটা সম্পর্কে বিতর্ক ও ভিন্নমত থাকলেও আমরা দেখেছি আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা রাখার পক্ষে সবার মত রয়েছে। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ এই অনগ্রসর অংশের জন্য ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছেন। তাই কোটা সংস্কার হতে পারে কিন্তু একদমই কোটা তুলে দেয়া আদিবাসী ও অনগ্রসরদের জন্য কল্যাণকর হবে না।

সংবাদ সন্মেলনে থেকে কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের প্রতিবাদে এবং সরকারী চাকুরিতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা বহালের দাবীতে আমাদের কর্মসূচিগুলো ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হলো- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৪টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদী অবস্থান, ২৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র সমাবেশ,
৩০ সেপ্টেম্বর আদিবাসী সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে সচিবালয়ের অভিমুখে পদযাত্রা।

সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়ক উইলিয়াম নকরেক, আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক উন্নয়ন ডি শিরা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন ঢাকা মহানগরের সভাপতি অলিক মৃ, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রলয় নকরেক, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুমিতা রবিদাস, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তমাল স্নাল প্রমূখ।

Back to top button