সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষঃ ৩০০ কর্মী আহত, আটক ১০০
ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ফি বাড়ানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কর্মীরা ঢাকার শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে টিএসসি মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় পুলিশের জল কামান ও টিয়ার শেলের জবাবে আন্দোলনকারীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এলেও বেলা দেড়টা দিকে ওই রাস্তা দিয়ে মিছিল নিয়ে আসা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কর্মীদের পুলিশ বাধা দিলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে অবস্থানরত ম্যাটস শিক্ষার্থীও সে সময় সংঘর্ষে যোগ দেয়।
এরপর বেলা আড়াইটার দিকে জাদুঘরের সামনের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে তৃতীয় দফা সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রফ্রন্টের কর্মীরা।
ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটায় তাদের ৩০০ কর্মী আহত হয়েছেন; আটক করা হয়েছে অন্তত একশ শিক্ষার্থীকে।
বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য শুনে দাবি পূরণের ব্যবস্থা না নিলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন শুরুরও ঘোষণা দিয়েছেন তার।
পুলিশের রমনা জোনের ডিসি মো. মারুফ হোসেন সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, “আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য ছিল মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়া অথবা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বসে পড়া।
“শাহবাগ মোড়ে বড় দুটি হাসপাতাল। সেখানে যদি তারা বসে পড়ে তাহলে পথচারীরদের পাশাপাশি রোগীরাও সমস্যায় পড়বে… তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে, কিন্তু সবাই সেখানে যেতে পারে না। সকাল থেকে তাদের এ বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তারা আমাদের কথা না শোনায় বাধ্য হয়ে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়েছে।”
মেডিকেল অ্যাসিসটেন্স ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা, ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড বাংলাদেশ’ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকারিভাবে দশ গ্রেডে নিয়োগ, বেসরকারি ক্লিনিক-হাসাপাতালে ম্যাটস থেকে পাস করা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য পদ সৃষ্টি এবং ইন্টার্নশিপে ভাতার দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে ‘লংমার্কের’ কর্মসূচি ছিল ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় টিএসসি এলাকায় পুলিশ তাদের পথ আটকায়।
সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ বাদানুবাদের এক পর্যায়ে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুলিশ জলকামান থেকে রঙিন পানি ও টিয়ার শেল ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এই সংঘর্ষের মধ্যে ওই এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। স্কুল ফেরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে দেখা যায়।
ছাত্রফ্রন্টের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুক হেলাল অনিক বলে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল কলেজের ফি আসন্ন বাজেটে পাঁচ গুণ বাড়ানোর উদ্যোগে নিয়েছে সরকার। এর প্রতিবাদে এবং ইউজিসির ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র বাতিল ও শিক্ষা খাতে বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবিতে তারা ইউজিসি ঘেরাওয়ের এই কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
কিন্তু পুলিশের বাধায় শাহবাগ থেকেই ফিরে যেতে হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন বলেও ছাত্রফ্রন্টের নেতারা জানান।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল খন্দকার ফাহিম বলেন, পুলিশের টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠির আঘাতে তাদের সভাপতি মুরাদ হোসেন লিমন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, সাইক ম্যাটসের কর্মী কানিজ ফাতেমা, আঁখি, পিয়াস এবং টাঙ্গাইল ম্যাটসের আমিনুল হকসহ অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রিফাত বলেন, “পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করেছে প্রায় ১০০ জনকে তারা আটক করেছে।”
পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আবার শহীদ মিনারে অবস্থান নেব। প্রধানমন্ত্রী যদি আজকের মধ্যে আমাদের সঙ্গে কথা না বলেন, কাল থেকে ওখানে আমরা অনশনে বসব।”
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ২৪ ডটকম