সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, তিনদিনের আল্টিমেটাম
আজ সরকারি চাকরিতে ৫% কোটা বহালের দাবীতে আদিবাসী কোটা সংরক্ষন পরিষদের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে। সচিবালয় অভিমুখে মিছিলটি দোয়েল চত্ত্বরে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কোটা বহালের জন্য তিনদিনের আলটিমেটাম দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
এর আগে সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে আদিবাসী কোটা সংরক্ষন পরিষদ। সমাবেশে বক্তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীসহ সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা বহালের দাবী জানান। আদিবাসী কোটা সংরক্ষন পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক অলিক মৃ তার বক্তব্যে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে, অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখবেন বলেছিলেন। আমরা আশায় বুক বেধেছিলাম, কিন্তু তা আর রইলোনা, মন্ত্রী পরিষদের সচিবদের সুপারিশে। আমাদের স্বপ্ন ভেঙে দেয়া হল।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীপরিষদের সচিব আপনারা সরকারি নানান সুযোগসুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে, মোবাইল কেনার জন্য ৭০-৭৫ হাজার টাকা পেয়ে হয়তো অগ্রসর হতে পারেন। কিন্তু এদেশের আদিবাসী মানুষ প্রতিবন্ধীরা এখনো অগ্রসর হতে পারেনি। নিজেরা এসি রুমে বসে সবাইকে সুখী ভাবেন আপনারা।’
‘আদিবাসী বা প্রতিবন্ধীরা অগ্রসর হয়ে গেছে এটা কিসের ভিত্তিতে সচিবরা বললো তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেখানে অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ এখনো শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্যের চরম অভাবের মধ্যেই আছে। আপনারা দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্বহীনের মতন মন্তব্য করেছেন’ বলেও অলিক মৃ মন্তব্য করেন। তিনি অবিলম্বে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ ৫% কোটা বহাল রাখার ঘোষণা দিতে সরকারকে আহবান করেন।
চানচিয়া সংগঠনের সমন্বয়ক আন্তনী রেমা বলেন, ‘আদিবাসী বাঙালি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান সকলে মিলেই মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। অথচ ৭২ সংবিধানে রাষ্ট্র আমাদের স্বীকার করেনি। এমন করে প্রতিনিয়ত আমাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এখন অবধি। সর্বশেষ কোটা বাতিল তারই এক নমুনা।’
তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্র দেশের মানুষের সার্বিক অধিকার দিতে পারেনাই, আদিবাসীদের অধিকার দিতে পারেনাই এই ব্যর্থ রাষ্ট্র। পাহাড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো অনেক জায়গায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হয়নি। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হয়না সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা আমাদের আশ্চর্য করে।’
‘আদিবাসীদের জন্য সরকারী চাকরিতে ৫% কোটা লড়াই করে আদায় করা হয়েছিলো, এখন তা বাতিল করে দিতে চাইছে সরকার। রাষ্ট্র যখন তার জনগনকে বঞ্চিত করে ন্যায্য অধিকার থেকে তখন জনগন তার অধিকার ছিনিয়ে নিতে লড়াই করে। আমরাও তাই লড়াইয়ে নেমেছি’ বলে আন্তনী রেমা মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক যোনাথন চাম্বুগং বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আদিবাসীরা এ দেশে নানা ভাবে নিপীড়িত হয়ে আসছে। পাকিস্তান আমলেও তারা নির্যাতিত স্বাধীন বাংলাদেশেও তাই।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী পরিষদের সচিব কিসের ভিত্তিতে আদিবাসী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীদের সম্পর্কে এমন ঢালাও মন্তব্য করেছেন তা বোধগম্য নয়। এদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের কোটা বাতিলের কোন যৌক্তিকতা নেই।’
যোনাথন আরো জানান, ‘সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা আছে, অথচ এদিকে সরকার কোটা বাতিলের কথা বলছে যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।’
গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল ঘাগ্রা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। চাকমা, মারমা গারোসহ অনেক আদিবাসী বাঙালি যুদ্ধ করেছে। তখন কেউ আলাদা করে ভাবেনি। কিন্তু স্বাধীন দেশেই তা আলাদা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কদিন আগে সরকার দেশকে উন্নয়নশীল ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু আদিবাসীদের পিছিয়ে রেখে উন্নয়নশীল বা উন্নত কোন কিছুই সম্ভব নয়। তাই কোটা বহাল রেখে আদিবাসীদের এগিয়ে যাবার সুযোগ দিন।’
গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের নেতা জুয়েল হাউয়ে বলেন, ‘নতুন করে কিছু বলার নাই আমাদের অধিকার, আমাদের দাবী আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা রাখার জন্য আমরা সচিবালয় ঘেরাও করবো, লড়াই করবো।’
মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি নিশু মং মারমা বলেন, ‘সচিবদের বক্তব্য যদি সত্য হয়, তবে একবার পাহাড়ে কিংবা সমতলে গিয়ে আদিবাসীদের দেখে আসুন। তাদের শিক্ষার কি অবস্থা। আদিবাসীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কোটা না থাকলে আদিবাসীরা আরো পিছিয়ে পড়বে।’
তরুন ছাত্রনেতা সতীর্থ চিরানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী কোটা সংরক্ষন পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক উন্নয়ন ডি শিরা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্ত্বরে পৌছালে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে আদিবাসী কোটা সংরক্ষন পরিষদ। সেখানে সরকারকে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সুপারিশ অনুমোদন করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়।