সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা, উচ্ছেদ ও নির্যাতন: সার্বিক অনুসন্ধানের সারসংক্ষেপ
সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা, উচ্ছেদ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া হামলা, উচ্ছেদ ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণে কমবেশি একই ধরণের চিত্র পাওয়া যায়। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় নিপীড়কের ভূমিকায় রাজনৈতিক ক্ষমতাবান ও তাদের অনুসারীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা সুস্পষ্ট। অন্যদিকে সরকারী প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা হামলা ও উচ্ছেদের কোন কোন ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন, অন্যদিকে কিছু ঘটনায় তাদের নিস্ক্রিয়তা ও গাফিলতির সুযোগে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও ঘটনার তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই। সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো। ঘটনার পর সর্বশেষ অবস্থাও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানের পর্যবেক্ষণ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্যের আলোকে এই সারসংক্ষেপটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
১.রামু, কক্সবাজার
ফেসবুকে কোরআন শরীফ অবমাননা হয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাসহ কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও ও উখিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের একাধিক দল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরোনো ১২টি বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে এবং বৌদ্ধপল্লির ৪৫টির মতো বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর করে শতাধিক ঘরবাড়িতে। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় রামু সদর ইউনিয়নে। এতে আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে ট্রাকে করে কয়েক হাজার মানুষ প্রথমে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে একজায়গায় সমবেত হয়। রাত ১২টার পর সংঘবদ্ধ লোকজন বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এ ঘটনায় উস্কানীদাতা ও হামলায় নেতৃত্বদানকারী হিসেবে একইসাথে স্থানীয় জামাত, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকার তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যানুসন্ধান পর্যবেক্ষণে আরো প্রতীয়মান হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ সন্ধ্যা থেকেই যখন সাম্প্রদায়িক উস্কানীদাতারা সভা ও মিছিল করছিল তখন স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে । রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তখন আইন শৃংখলা বাহিনী এবং জনপ্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কিংবা ঘটনার ব্যাপকতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওই ঘটনায় দায়ের করা ১৯টি মামলার একটি প্রত্যাহার করা হয়। ৪টি মামলায় প্রকৃত সাক্ষী না পাওয়ায় পুনঃতদন্ত করছে পিবিআই। প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার লোকের নাম থাকলেও, পরে ১৯টি মামলায় ৩৮৪ জনের নামে অভিযোগ-পত্র দেয়া হয়। এরপর কোন মামলায় তদন্ত সঠিক হয়নি বলে অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলার বাদীদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান ভূক্তভোগীরা।
২.সাথিয়া, পাবনা
রামু ঘটনার এক বছর পর ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত আনার অভিযোগ এনে পাবনার সাথিয়ার বনগ্রামে হিন্দু পল্লিতে হামলা চালানো হয়। ঘটনার দিন এলাকায় ত্রিমুখী হামলা হয়। একদল বাজারে মিছিল বের করে, একদল পাবনা-নগরবাড়ী সড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়, অন্য দলটি লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হিন্দুবাড়ি ও মন্দিরগুলোতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় জামাত বিএনপি-র কর্মীদের পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু-র অনুসারী আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার পর উস্কানীদাতাদের তিনি আশ্রয় দিয়েছেন বলেও তথ্য রয়েছে। অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র, বনগ্রাম বাজারের দোকানমালিক বাবলু সাহার একমাত্র ছেলে। হাইকোর্ট বিভাগ বাবলু সাহাকে ৪৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে আদেশ দেয়, যদিও ওই টাকা তিনি এখনো পাননি। এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা না থাকায় পরে ওই কিশোর মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কে এ ধরণের পোস্ট ফেসবুকে দিয়েছে তা সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় করা তিনটি মামলার একটির দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়। বাকি দুই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তবে, ওই ঘটনায় আটক এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সবাই জামিনে রয়েছেন।
৩.নাসিরনগর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া
২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামে জেলে পরিবারের এক নিরক্ষর যুবক ফেসবুকে পবিত্র কাবাঘর অবমাননা করেছে অভিযোগে তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় এক দল যুবক। এলাকায় মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে পরদিন ৩০ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ৩০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এবং ‘তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে পৃথক দুটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন। ১৩ কিলোমিটার দূরের হরিপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ থেকে ১৫টি ট্রাক ভরে মানুষ আসার পর হামলা হয় নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে। যেসব ট্রাক ও ট্রাক্টরে চড়ে হামলাকারীরা এসেছিল সেগুলোর ব্যবস্থা ও অর্থের যোগান আওয়ামীলীগ দলীয় স্থানীয় চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি দিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এরপর সমাবেশস্থল থেকে ৮টি হিন্দু পাড়ায় অন্তত ৩০০টি বসত ঘর ও ১০টি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর এ ঘটনায় ৮ টি মামলা হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে। এখন পর্যন্ত গত ১০ ডিসেম্বর একটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করতে পেরেছে পুলিশ। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী রসরাজ দাসের মোবাইল থেকে কাবাঘর অবমাননার ছবি আপলোডের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার পর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বিচারক রসরাজকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু বছর পার হলেও সে মামলার কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় অভিযুক্ত হিসেবেই রয়ে গেছেন রসরাজ দাস।
৪.ঠাকুরপাড়া, রংপুর
ফেসবুকে মহানবী (স)-কে অবমাননা করা হয়েছে এমন পোস্ট শেয়ারের অভিযোগ তুলে ১০ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখ রংপুরের গঙ্গাচড়া ও সদর উপজেলায় সীমানায় অবস্থিত ঠাকুরপাড়ায় হামলা চালিয়ে ১৫ টি বাড়ীঘরে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে চা দোকানদার আলমগীর হোসেন (২৮) ঘটনাস্থলে নিহত হন। গত ৬ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখে স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী রাজু মিঞা বাদী হয়ে আইসিটি অ্যাক্টে’র অধীনে টিটু রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর পাশর্^বর্তী হরিয়ালকুঠি, মোমিনপুর, শলেয়াশাহ ইউনিয়নে তিনদিন ধরে প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ ও মাইকিং করে লোক জড়ো করা হয়। এরপর সেখান থেকে কয়েক হাজার মানুষ রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের পাশর্^বর্তী ঠাকুরপাড়ার দিকে অগ্রসর হয়, পুলিশ বাধা দিলে তারা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে যাবার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালায়, লুটপাট করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কয়েকজন তাদের বাধা দিতে আসলে তারা নির্যাতনের শিকার হয়। এ ঘটনায় ফজলার রহমান নামে রংপুর জেলা পরিষদের কর্মরত একজন প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ মদদের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি ও জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া ও কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়। মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবির ওপর। এ ছাড়া কথিত পোস্ট শেয়ারকারী হিসেবে টিটু রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার পর পরই রংপুর জেলা পরিষদের প্রকৌশলী আত্মগোপন করেন। এরপর ২১ ডিসেম্বর ঢাকার শ্যামলী থেকে ডিবির একটি দল ফজলারকে গ্রেপ্তার করে রংপুরে নিয়ে আসে এবং ২৪ ডিসেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫.লংগদু, রাঙ্গামাটি
গত ১ জুন (২০১৭) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ খাগড়াছড়ি সদরের চারমাইল এলাকায় রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। পরের দিন তার লাশ নিয়ে বের হওয়া মিছিল থেকে লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা পাড়া, মানিকজুড়ছড়া ও বাত্যাপাড়া গ্রামে ২ শতাধিক বাড়ি ও ২২টি দোকানে আগুন দেয়া হয়। চালানো হয় লুটপাট। ওই এলাকা থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় কয়েক হাজার পাহাড়ী আদিবাসী নারী-পুরুষ। এ সময় লংগদু ইউপি চেয়ারম্যানের ঘরের ভেতরে আগুনে পুড়ে মারা যান গুণমালা নামের এক বৃদ্ধা। ভয়াবহ এ ঘটনার ছয় মাস কেটে গেলেও এর সঙ্গে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্তকারি কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে আইন অনুযায়ী কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে গত ২১ আগস্ট রুল জারি করেছে হাইকোর্ট বিভাগ। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতির নিরুপণ কমিশন কেন করবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
৬.নানিয়ারচর, রাঙ্গামাটি
২০১৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সকালে রাঙ্গামাটির নানিয়ার চর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ি-চৌদ্দমাইল এলাকায় তিনটি পাহাড়ি গ্রাম সুরিদাশ পাড়া, বগাছড়ি ও নবীন তালুকদার পাড়ায় আদিবাসীদের ৭টি দোকান ও ৫৪টি বসত বাড়ি জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও নিঃশেষ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গোলার ধান-চালসহ সবকিছু। নিজেদের আনারস ও সেগুন বাগান নষ্টের অজুহাতে বাঙালী সেটলাররা এ সহিংস হামলা করে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানান, সেটেলার বাঙালিরা উত্তেজিত হয়ে দলবদ্ধভাবে পাহাড়িদের ওই তিন গ্রামে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা বাড়িঘরে আগুন দেয়। বাঙালিদের আক্রমণের মুখে তাৎক্ষণিক বাড়িঘর ছেড়ে পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যায় তারা। করুণা বন বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ওবাসা ভিক্ষু জানান, হামলার সময় তাকে মারধর ও মন্দিরের ভেতরে বুদ্ধমূর্তি ভাংচুর করা হয়। পাঁচটি পিতলের বুদ্ধমূর্তি লুট হয়েছে। হামলার ঘটনায় ৪ টি মামলাসহ মোট ৬ টি মামলা হয়েছে। সরকারিভাবে ৬১ টি পরিবারের জন্য একটি করে ঘর নির্মান করে দেয়ার কথা থাকলেও প্রাথমিকভাবে কিছু ঘর নির্মান করার পর বরাদ্দ না থাকার কথা উল্লেখ করে বাকী ঘর নির্মানকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
৭.মালোপাড়া, অভয়নগর, যশোর
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভোট গ্রহণ শেষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এলাকা ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি ক্যাডাররা আশপাশের গ্রাম রূপদিয়া, বসুন্দিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, জিয়াডাঙ্গা, মাগুরা, শিবানন্দপুর, বাহিরঘাট এলাকা থেকে ১৫টির মতো নছিমন ভরে স্থল পথে এবং দু’টি ট্রলারে করে নদীপথে এসে হামলা চালায় যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মালো পাড়ায়। এই আক্রমণে মালো পাড়ার বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়। ভেঙ্গে দেওয়া হয় মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় আহত হন আরো দশজন। অনেকেই শীতের সন্ধ্যায়ই ভৈরব নদীতে ঝাঁপিয়ে ওপারের দেয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেন। জামাত শিবির ও বিএনপি প্রকাশ্যে হামলায় অংশ নিলেও ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্কোন্দলের কারণে স্থানীয় এমপি পদপ্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা এতে মদদ দেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহসীন হাওলাদার বাদী হয়ে ৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভয়নগর থানায় মামলা করেছিলেন। এর একবছর পর দায়েরকৃত মামলায় ১শ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) চার্জশিট দাখিল করে। পুলিশ এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে বেরিয়ে এসেছেন এবং বাকীরা পলাতক বলে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
৮.গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
গত বছরের (২০১৬) ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন সাহেবগঞ্জ ফার্মের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করার সময় পুলিশ, চিনিকলের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলীয় নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ তার অনুসারী নেতা-কর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে সাঁওতালসহ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এক পর্যায়ে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শ্যামল হেমব্রম ও রমেশ টুডু। পরে আখক্ষেতে মঙ্গল মার্ডির মরদেহ পাওয়া যায়। চরণ সরেন, বিমল কিসকু পায়ে এবং দ্বিজেন টুডু চোখে গুলি লেগে হাসপাতালে ভর্তি হন। সাঁওতালদের ছোড়া তীরের আঘাতে ৯ জন পুলিশসহ উভয়পক্ষের প্রায় ৩০ জন এ ঘটনায় আহত হন। উচ্ছেদ অভিযানের একপর্যায়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য ও অন্য কয়েকজন ব্যক্তি সাঁওতালদের ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে জ¦ালিয়ে দেন। পরেরদিন পাশর্^বর্তী মাদারপুর গ্রামে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়। সাঁওতাল ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর রাতে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এসআই কল্যান চক্রবর্তী বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অঞ্জাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৪ জন সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সাঁওতালদের ৩ জন নিহত হলেও তৎক্ষণাৎ কোনো মামলা হয় নি। ঘটনার ১১ দিন পেরিয়ে যাবার পর ১৬ নভেম্বর রাতে স্বপন মুর্মু নামের একজন আদিবাসী অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের ওপর হামলা, ঘরে আগুন, পুরোনো বসতবাড়িতে লুটপাট ও সাঁওতাল হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলা করেন। পরে উচ্চ আদালত দুটি অভিযোগকে সমান মর্যাদায় এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশনা দেয় এবং মামলার তদন্তভার পিবিআই-কে প্রদান করা হয়। তবে ১ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। উচ্ছেদের শিকার অনেক পরিবারগুলো অন্যের জমিতে কিংবা পতিত জায়গায় কোনো মতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের সহযোগিতায় কিংবা পুনর্বাসনে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
৯.বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও
২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নে স্থানীয় সাংসদ দবিরুল ইসলামের চা-বাগান কোম্পানীর লোকজন কয়েকটি হিন্দু পরিবারের জমি জবর দখলের চেষ্টা চালান। ঐ বছরের ১০ জুন অকুল চন্দ্র সিং তাঁর ৩৯ শতাংশ জমির অর্ধেকে চা গাছের চারা রোপণ করলে সাংসদের লোকজন হাল চষে চারাগুলো নষ্ট করে দেয়। ১৭ জুন সাংসদের ছেলে মাজহারুল ইসলাম অকুল চন্দ্রকে শাসিয়ে আসেন। ১৯ জুন সাংসদের ছেলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অকুল চন্দ্র সিং, ভাকারাম সিং ও জনক সিংসহ কয়েকজনকে ধাওয়া করে। অকুল সিং ভারতীয় ভূখ-ে আশ্রয় নেন। তাদের হামলায় ভাকারাম সিং সহ আট-দশজন আহত হন, কয়েকজন নারীকেও মারধর করা হয়। ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেতা হেলকেতু সিংয়ের পরিবারের লোকজন তাদের জমিতে চাষ করতে পারেন না। সাংসদ ও তার চাবাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের চেষ্টা ছাড়াও ঐ স্থানের অধিকাংশ সরকারি খাসজমি দখল করে রেখেছেন। হামলার ঘটনা এবং জমি জবরদখলের ঘটনা একাধিকবার গণমাধ্যমে আসলেও কোনো মামলা হয় নি কিংবা অভিয্ক্তুদের বিরুদ্ধে আইননানুগ কোনো ব্যবস্থা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় নি।
১০.চণ্ডিপুর, পার্বতিপুর, দিনাজপুর
দিনাজপুরের পার্বতিপুর উপজেলার চ-িপুর ইউনিয়নে ২৫.৭৮ একর জমি থেকে ৪০টি হিন্দু ক্ষত্রিয় পরিবারসহ ৫৫টি পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও প্রেসক্লাবের সাংবাদিকসহ ভাড়াটে লোকদের ব্যবহার করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী। উল্লিখিত জমিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর সদস্যদের মধ্যে বেছে বেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধানকাটা, গাছকাটা, গমকাটা, পাওয়ার টিলার ভাংচুর, ভ্যান ভাংচুর, মোটরসাইকেল ভাংচুরের অভিযোগে ২০টিরও অধিক মামলা করেছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের ব্যবহার, ভাড়াটে লোকদের দ্বারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আক্রমণ এবং সর্বোপরি পুলিশী হয়রানীসহ নানা কৌশল ব্যবহার করে এমদাদ চৌধুরী বর্তমানে পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কৌশলে পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি এবং একটি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে তিনি জমিগুলো জবরদখলের চেষ্টা করছিলেন তিনি। উচ্ছেদের জন্য পরিবারগুলোর ওপর কয়েকদফা হামলাও করা হয়। হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করলেও আসামীদের গ্রেপ্তার ও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
১১.নাহার (আসলম ও কাইলিন) খাসীপুঞ্জি, মৌলভীবাজার
২০১৪ সালের ৩০ মে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের আসলম পুঞ্জিতে (নাহার-১) খাসিয়াদের একটি বসত ঘর নির্মাণকালে নাহার চা বাগানের লোকজন খাসিয়া নারী ও শিশুদের ওপর এই অতর্কিত হামলা চালায়। এতে শিশু-নারীসহ প্রায় ১৫জন আহত হয়। তাছাড়া হামলাকারীরা খাসিয়াদের জীবিকার অন্যতম ফসল বেশ কিছু পান গাছও কেটে ফেলে। নাহার চা বাগান কর্তৃপক্ষ পুঞ্জির বাসিন্দাদের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করার কারণে খাসিয়ারা প্রায় বন্দি ও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। উপরন্তু চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিরীহ আদিবাসীদের ওপর মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে বাড়ীছাড়া করতে বাধ্য করে। গত ২১ জুলাই ২০১৪ তারিখে খাসিয়ারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত তাদের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু নিন্ম আদালত ১৮ আগস্ট ২০১৪ সালে খাসিয়াদের জামিন বাতিল করে নারীসহ খাসিয়াদের জেল হাজতে প্রেরণ করে। বর্তমানে অরক্ষিত পুঞ্জিতে খাসিয়া নারী ও শিশুরা চরম উৎকন্ঠায় দিন যাপন করছে। বেশ কিছু সময় ধরেই এই হামলা ও মামলার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে খাসিয়াদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছে নাহার চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন গহীণ বনের বিভিন্ন অংশে খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায় বহুকাল যাবত বসবাস করে আসছেন। এসব বনের কোন জমির লিখিত মালিকানা তাদের দেয়া না হলেও শত বছরের দখলী স্বত্বে খাসিয়া সম্প্রদায় এসব জমি ভোগ দখল করে বেঁচে আছেন। কথিত দুই নাহারপুঞ্জির প্রায় ৪৫০ একর ঘন পাহাড়ী বনের জীব-বৈচিত্রের কোন মৌলিক ক্ষতি না করেও এখানে খাসিয়ারা পান চাষ করে আসছেন, এটিই তাদের একমাত্র পেশা। তাদের ওপর হামলা হয়রানীসহ বিভিন্নভাবে উচ্ছেদের চেষ্টা হলেও প্রশাসনকে তাদের নিরাপত্তায় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় নি। বরং খাসিয়াদের অভিযোগ প্রশাসনের সহযোগিতায় চাবাগান কর্তৃপক্ষ বন্দোবস্ত নেয়া জমির বাইরেও ২০০ থেকে ৩০০ একর জমি দখল করে রেখেছে।
এছাড়া দুই সংখ্যালঘু তরুণ ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছে এমন অভিযোগ তুলে কুমিল্লার হোমনায় বাগসিতারামপুরের জেলেপাড়ায় হামলা হয় ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি মাদ্রাসার দুজন শিক্ষক ছাত্রদের নিয়ে হামলা চালান। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নঈম মোল্লা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ওই দুই সংখ্যালঘু তরুণ ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছেন এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায় নি।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক স্বার্থে ও ভূমিগ্রাসের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, নির্যাতনসহ তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সরকারি প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এসব ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, ঘটনা ঘটার আগের মুহূর্তে প্রশাসন, পুলিশকে জানালেও তারা হয় ঘটনার বিস্তার, হামলার তীব্রতা সম্পর্কে আঁচ করতে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণে অবহেলা ও গাফিলতি দেখিয়েছেন। গোবিন্দগঞ্জের ঘটনায় তো তারা নিজেরাই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি কিংবা অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো নজির নেই। বরং হামলা, নির্যাতনের বিচার পাবার বদলে ভুক্তভোগীরা তাদের দ্বারাই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন এমন ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি ঘটনায় ভুক্তভোগীরা তাদের নিজ বসতবাড়ি, সহায়সম্পত্তি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকদেখানো কিছু সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ তারা পান নি। একটি ঘটনায় তো উচ্চতর আদালত থেকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদানে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর মামলার তদন্তেও সরকারি তদন্তকারী সংস্থার গড়িমসির চিত্র খুবই সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও বেশিরভাগ মামলারই কোনো চার্জশিট বা অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করতে পারেনি পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ইত্যাদি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষসমূহ। অভিযোগপত্রে মূল অপরাধীকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিচার না হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতা ও একই কায়দায় হামলা ঘটে যাবার শঙ্কা বাড়ছে। ভবিষ্যৎ সাম্প্রদায়িক হামলার শঙ্কার মধ্যে অন্য স্থানের সংখ্যালঘুরাও দিনানিপাত করছেন।
সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের নিরাপত্তার আশঙ্কা দূর করে তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রের উচিত তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বছরের শুরুতে আমরা দেখেছি গাইবান্ধা-১ আসনের সাংসদ হত্যা মামলায় পুলিশ প্রায় ক্লুলেস একটি ঘটনার তদন্তে আড়াইমাসের মধ্যে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে তিন মাসের মাথায় অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। অথচ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর পার হয়ে যায় কিন্ত মামলার কোনো সুরাহা হয় না। বিষয়টি কেবল দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার কিংবা জাতীয় ভাবমূর্তির সাথে জড়িত নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের একটি বিরাট অংশের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত। কাজেই এ সত্যটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনবে এটিই আমাদের দাবি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের হামলার ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
(সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ‘‘বিশ^ মানবাধিকার বনাম বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা’’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে উপস্থাপিত)