জাতীয়

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিপ্লবী লারমাকে স্মরণের প্রস্তুতি

সুলভ চাকমাঃ জুম্ম জাতীয় চেতনার অগ্রদূত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৪তম মুত্যুবার্ষিকী ১০ই নভেম্বর ২০১৭। মেহনতী ও শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজীবন নিবেদিত প্রাণ পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত এই বিপ্লবী নেতা বিভেদপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকদের অতর্কিত আক্রমণে ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর ৮জন সহযোদ্ধা সহ নিহত হন। বাংলাদেশ সংবিধান রচনার সময়ে আইন প্রণেতা হিসেবে গণপরিষদ বিতর্কের সময় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা উচ্চারণ করেছিলেন, –
“বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা জড়িত। সব দিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে বাস করছি। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ দাদা চৌদ্ধ পুরুষ কেউ বলেন নাই আমি বাঙালি।’’ ১০ নভেম্বর মানেই জুম্ম জনগণের কাছে শোকের দিন। ১০নভেম্বর আসলেই সাধারণ খেটে খাওয়া জনসাধারণ, ছাত্র-যুব কিংবা পেশাজীবী সকল স্তরের জুম্ম জনতা প্রিয় নেতার বিপ্লবী স্মৃতিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে থাকে।
চলতি নভেম্বর মাসের ১ তারিখ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সুমন মারমা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- “স্মরণীয় শোকাবহ নভেম্বর, জুম্ম জাতীয় শোকের মাস”।
প্রয়াত নেতাকে স্মরণ করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী দিনত চাকমা-একটি প্রোফাইল ক্যাম্পেইন ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে। ইতিমেধ্য দেখা যাচ্ছে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রয়াত নেতার সংগৃহীত ছবি নিজেদের প্রোফাইল ফটো হিসেবে স্থাপন করেছেন।
এবছরও যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হবে জুম্ম জাতীয় শোক দিবস। দেশের বিভিন্ন স্থানে নানান কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে প্রয়াত নেতার বিপ্লবী স্মৃতিকে স্মরণ করার জোর প্রস্তুতি চলছে। রাজধানী ঢাকায় ১০ নভেম্বর ২০১৭, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় এক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। কমিটির আহবায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: মুহাম্মদ সামাদ এবং সদস্য সচিব পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা। জাতীয় কমিটির অনুষ্ঠানমালায় থাকছে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মরণ সভা, কবিতা পাঠ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রতিবাদী গান।
এদিকে “পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী’ সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর আন্দোলন সংগঠিত করুন” এই আহ্বান রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা এবং উপজেলা সদরে প্রভাতফেরী,পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, স্মরণসভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন,ফানুস উত্তোলন প্রভৃতি কর্মসূচী পালন করবে। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরের ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জুম্ম শিক্ষার্থীরা এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রভাতফেরী, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং স্মরণ সভার আয়োজন করেছে। চট্টগ্রামে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়াত নেতার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন প্রকাশনাও প্রকাশিত হবে। জনসংহতি সমিতি বরাবরের মত স্মরণিকা প্রকাশ করছে । পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের মুখপত্র কেওক্রডং এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ হবে।

Back to top button