অন্যান্য

শেষ হল শত প্রাণের সমাবেশ ২০১৮

উইলিয়াম নকরেক: কারিতাস ময়মনসিংহ, যুব কমিশন, বিসিএসএম, মিক্রাকবো ও শান্তিমিত্র এর আয়োজনে শেষ হল শত প্রাণের সমাবেশ ২০১৮।দেশের বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২১-২৩ জুন, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় শতপ্রাণের সমাবেশ ২০১৮। নবীন ও প্রবীনের স্বপ্ন, দর্শন ও অভিজ্ঞতার সহভাগিতা ও সেতুবন্ধন তৈরি, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার গঠনমূলক চর্চা, সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত জাতি গঠনে স্বপ্নগুলোর সংকলন ও সমন্বিত উদ্যোগের ভাবনা এ উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সুভাষ জেংচাম। তিনি তার উদ্বোধনী বক্তবে বলেন, আদিবাসীদের যে মূল্যবোধ তা অন্য কোন জাতির মধ্যে দেখা যায় না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন,আদিবাসীরা কখনো তাদের কাজের স্বীকৃতি চায় না নীরবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যান। আমাদের মান্দি তথা আদিবাসীদের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধশীল। অন্যেরা স্বীকার করুক বা না করুক। আদিবাসীদের এ বৈচিত্র্যেও ও সৌন্দর্যের জন্যই পৃথিবীটা এত সুন্দর।

এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার রবার্ট মানখিন, কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলে পরিচালক অর্পূব ম্রং, মিকরাকবো এর পরিচালক সুপার চিসিম, শান্তিমিত্র এর পরিচালক সুবর্ণা পলি দ্রংসহ বিসিএসএম’র জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি উইলিয়াম নকরেক।

তিনদিনব্যাপী এ সমাবেশের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পল কুবি, সিএসসি বলেন, জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শিক্ষিত সবাই হয় কিন্তু কতজন স্বশিক্ষিত প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমাদেরকে স্বশিক্ষিত হতে হবে এবং সুশৃঙ্খল একটি জাতি গঠনে সহযোগীতা করতে হবে। আমাদের সমাজের কোন পরিবার বা কোন মানুষ যেন অভুক্ত না থাকে, চিকিৎসার অভাবে মারা না যায়, কোন শিক্ষার্থী যেন টাকা পয়সার অভাবে পড়াশুনা থেকে ঝরে না যায় সেদিকে আমাদের সবার লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে চিন্তা করলে হবে না, জাতি, সমাজ, মন্ডলী ও দেশকে নিয়েও ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। আশাকরিসবার সুন্দর প্রচেষ্টায় আমাদের জাতি, সমাজ, মন্ডলী ও দেশ এগিয়ে যাবে সেই বিশ্বাস করি।

তিনব্যাপী এ সমাবেশের উল্লেখ্যযোগ্য ইভেন্টগুলো ছিল জীবনমুখী খেলাধূলা/নাটিকার মধ্য দিয়ে নিজেকে জানা, গারো লেখক, কবি ও গবেষকদের বই প্রদর্শনী, গারো চিত্রশিল্পী ও ফটোগ্রাফারদের ছবি প্রদর্শনী, মানুষ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পরিচিতি ও দায়িত্ব, অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত, সমাজ ও দেশ নিয়ে স্বপ্ন ও ভাবনা,প্রবীন ও নবীনদের মধ্যে সংলাপ, সফল জীবনের সহভাগিতা, বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপভোগসহ আদিবাসী নারী ব্যান্ড এফ মাইনর ও আদিবাসী শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর বিশেষ পরিবেশনা।

তিনদিন ব্যাপী এ সমাবেশে বিভিন্নসময় সহভাগিতায় সরকারী, বেসরকারী, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাবৃন্দ উপস্থিত থেকে তাদের কর্মজীবনের সহভাগিতা করেন। আলোকচকবৃন্দ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করে বলেন, জীবনে যত বাধা বা সমস্যাই আসুক না কেন লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সফলতা আসবেই। এপিজে আবদুল কালামের উক্তি দিয়ে বলেন, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। সামনে এগিয়ে যেতে হলে, কষ্ট করতেই হবে।

সমাবেশে এ আলোচনায় বিভিন্ন সময় অংশ নেন, ফাদার শিন হাচ্ছা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট সঞ্জীব দ্রং, সিডিআই এর পরিচালক থিওফিল নকরেক, বিশিষ্ট কবি মতেন্দ্র মানখিন, বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপসচিব হেমন্ত হেনরী কুবি, আইএলও’র জাতীয় সমন্বয়কারী আলেক্সিউস চিছাম, কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক অপূর্ব ম্রং, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী রাকেশ রেমা, স্কয়ার গ্রুপের সহকারী মানবসম্পদ ও এডমিন ম্যানাজার সাইমন নকরেক, ডাক্তার রজার দারু, প্রকৌশলী অন্ত ঘাগ্রা, ড. অঞ্জন চিছাম, উদ্যোক্তা চম্পা বর্মনসহ শান্তিমিত্র সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সুবর্ণা পলি দ্রংপ্রমুখ।

Back to top button