অন্যান্য

শিপেন তির্কীর সংগ্রামী জীবন

গ্রামের যুবকরা যখন মাদকাশক্ত শিপেন তির্কী তখন জীবিকার সন্ধানে দিশেহারা। দরিদ্র পিতা-মাতার সংসারে জন্ম তাই পড়ালেখা করাও অনেক কষ্টের। শুধু মনের জোরে আর কতটুকুইবা পড়ালেখা করা যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। তাই মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা আর চালানো আর সম্ভব হয়নি। তাইবলে থেমে গেলেতো আর চলবেনা। জীবিকার সন্ধানে তিনি হন্নে হয়ে ছুটতে থাকেন।
এমন সময়ে একদিন আইইডির দুই কর্মী হরেন্দ্রনাথ সিং এবং অলি কুজুর তাদের গ্রামে যান। সেখানে তারা যুব ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে একটি সচেতনতা মুলক সভা করেন । তারা আইইডির আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতাবৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষাজীবন থেকে ঝরেপড়া সমতলের আদিবাসী যুবদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য হাতে কলমে বিভিন্ন ধরনের কারিগরী শিক্ষা বা দক্ষতা প্রশিক্ষণের বিষয়ে বিশদ আলোচন করেন। কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নয়, শহরে ব্যক্তিমালিকানাধীন সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবস্থা করবে আইইডি, যেন সেখানে কাজ শিখার মাধ্যমে বাজার ও সেবাগ্রহণকারীদের সাথে তাদের একটি জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রশিক্ষণ শেষে এসব যুবরা যেন মূল শ্রোতধারার সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং সেখানেই যেন তাদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এটাই ছিলো এ প্রকল্পের মূল লক্ষ।
শিপেন তির্কীর জন্ম ১২ মে ১৯৯৫ বাবা প্রয়াত রামকান্ত , মা বুলি রাণী কৃষি কাজ করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিল মাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া গ্রামে। থাকবার ভিটেমাটিটুকুও তাদের নিজের ছিলনা, মামার জমিতে ঘর বেঁথে কয়েকটা গরু চাগল, হাঁস মুরগী পালনে মা আর দুই ভাই এক বোনের পরিবারের দিন কাটতো অনাহারে-অর্ধাহারে। এমন সময় শিপেন আইইডির কর্মীদের আলোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কম্পিউটার মেরামতের প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুধু কম্পিউটার মেরামতের কাজ শিখেই খান্ত হননি মোবাইল মেরামরতের কাজও শিখেছেন। কষ্টে উপার্জিত টাকা সঞ্চয় করে গ্রামের মোল্লাপাড়া বাজারে একটি দোকান খুলে বসেছেন। মামার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন বাড়ীভিটার ৬ শতাংশ জমি। প্রতিদিন সেবাগ্রহণকারীরা তার দোকানে সারিবদ্ধভাবে বসে অপেক্ষা করে সেবা গ্রহণের জন্য । সেবাদানে তার আন্তরিকতার কোন কমতি নেই তাই সেবাগ্রহণ করে তারাও অনেক খুশি।
এখন তিনি উপার্জিত অর্থে ক্রয় করা জমিতে বাড়ি তৈরী করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন।

Back to top button