শাসকগোষ্ঠী জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের জন্য দমনপীড়নকে বেছে নিয়েছে- রাঙ্গামাটিতে নিরুপা দেওয়ান
“শাসকগোষ্ঠী আজ আমাদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের জন্য দমনপীড়নকে বেছে নিয়েছে। দমনপীড়নের অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময়ে অপহরণ, খুন, গুম তথা জেল-জুলুম জারি রেখেছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ সেই নিপীড়নের অংশ ছিল” রাঙ্গামাটিতে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার ২৬ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান এ মন্তব্য করেছেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে নিরুপা দেওয়ান আরো বলেন, কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল, কারণ কল্পনা চাকমা সংগ্রামী ছিলেন। অন্যায়ের বিপক্ষে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং আমাদের প্রতিবাদী চেতনাও। শুধু কল্পনা চাকমা নয়, আমরা জুম্ম জনগণ অধিকারকামী। অধিকারকামী বলেই আমরা প্রতিবাদ করছি, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার তথা এদেশের শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আত্মপরিচয়কে অস্বীকার করেছে, ফলে তারা আমাদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে তকমা দিয়েছে।
গতকাল ১২ জুন পাহাড়ের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৬ বছর উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নিরুপা দেওয়ান একথা বলেন।
মহিলা সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমার সভাপতিত্বে এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি শ্রী বিজয় কেতন চাকমা, কল্পনা অপহরণ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান, অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা।
কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তারই প্রেক্ষিতে সরকার বিচারপতি জলিলের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ‘কল্পনা চাকমা স্বেচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক অপহৃত হয়েছেন। কিন্তু, কারা অপহরণ করেছে তা তারা খুঁজে পায়নি’। আসলে কি কেউ নিজে স্বেচ্ছায় অপহৃত হতে পারেন কিনা?
অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, কল্পনা ছিলেন একজন জীবন সংগ্রামী। তিনি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রামে অবিচল ছিলেন। রাষ্ট্রের বৈষম্যের কারণে কল্পনার অপহরণের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার কারণে ন্যায়বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। কল্পনা চাকমা সংগ্রামের প্রতীক। জুম্ম নারী শিক্ষার্থীদের কল্পনার সংগ্রামী পথ ধারণ করা দরকার। অধিকার আদায়ে নারীদের সংগ্রামে আরও যোগ দিতে হবে। কল্পনা পাহাড়ের অনুপ্রেরণা। আমরা আশাবাদী, বিচার পাবো।
আলোচনার শুরুতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিবৃতি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক এলি চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি ম্রানুচিং মারমা। সভাপতির বক্তব্যে রিতা চাকমা কল্পনা চাকমা অপহরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সবাইকে সামিল হওয়ার আহবান জানান।