অন্যান্য

লংগদু হত্যাকান্ড স্মরণে ঢাবি তে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

সতেজ চাকমা: আজ ৪ মে । ঐতিহাসিক লংগদু গনহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা “স্মরন সভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ।প্রথমেই গনহত্যায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্বা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় ।
সংগঠনটির তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সতেজ চাকমার সঞ্চালনায় সহ-সাধারন সম্পাদক জিনেট চাকমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক লিটন চাকমা ।
এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জনি তঞ্চঙ্গ্যা, কুইবি জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্য সমার দেওয়ার, পিসিপি ঢাবি শাখার সিনিয়র সদস্য সরল তঞ্চঙ্গ্যা, অর্থ সম্পাদক ধুদুক দেওয়ান প্রমুখ ।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জুম্মদের নিশ্চিহ্ন করনের জন্য শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের উপর বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে । আশির দশকে জিয়াউর রহমান সরকার কর্তৃক পাহাড়ে পুনর্বাসিত করা সেটলার বাঙালিরা সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ সহায়তায় ডজনের অধিক গনহত্যা সংগঠিত করে । এই গণহত্যাগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুম্মদেরকে নির্মুল করে দেয়া ।যে প্রচেষ্টা আধো পাহাড়ে চলমান ।
বক্তারা আরো বলেন, এ গণহত্যার বিভৎষতা মেনে নিতে না পারা তৎকালীন জুম্ম ছাত্র নেতৃত্ব রাস্তায় নামে প্রতিবাদের মিছিলে সমবেত হয় ।সে সময়ের পাহাড়ের তরুণ শিক্ষিত ছাত্র সমাজ রাজপথে নেমে আসে। অস্তিত্বকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য এ গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিছিলে সামিল হওয়া একঝাক আত্মপ্রত্যয়ী ও নিবেদিতপ্রাণ পাহাড়ী তরুণের হাতে গড়ে ওঠে পাহাড়ের দশ ভাষাভাষী এগারটি জুম্ম জনগোষ্ঠীর ছাত্র যুব সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী লড়াকু সংগঠন “পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ”।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৯ সালের ৪ মে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায় চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকারের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত করে বর্বরতম এক গণহত্যা। এদিন সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা জুম্মদের অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করে এবংতারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় । বৌদ্ধ মন্দির ও বুদ্ধ মুর্তি ধ্বংস করে সেনা-সেটলাররা লুটপাত চালায়।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে বিকাল ৪-৫ টা নাগাদ লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার তার অফিসের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় । এ ঘটনার আড়াই ঘন্টা পর লংগদুতে জুম্ম গ্রামবাসীদের উপর সেনা-সেটলাররা প্রতিশোধ মূলক হামলা শুরু করে। এই হামলায় কমপক্ষে ৩৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশু মারা যায়। তবে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরো অধিক হতে পারে বলে রিপোর্টে বলা হয়। চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকারের মৃত্যুর জন্য তৎকালীন শান্তিবাহিনীকে দায়ী করা হলেও এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর কোন নির্ভরযোগ্য কারণ খুঁজে পায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বলা হয়, জুম্মদের প্রায় ৬টি গ্রাম আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয় ।জুম্মদের শত শত বাড়িঘর ও অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার ও খ্রিস্টানদের দু’টি গীর্জা পুড়িয়ে দেয়া হয়। যারা বেঁচে যায় তারা আশ্রয়ের জন্য পাহাড়ে কিংবা জঙ্গলে পালিয়ে যায় এবং তাদের একটা বিরাট অংশ সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ।

Back to top button