লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ পূনর্বাসন করে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি

শ্যাম সাগর মানকিনঃ আজ সকালে লংগদুর অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলার একবছর ‘গৃহনির্মাণসহ সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ পূনর্বাসন ও হামলায় জড়িতদের বিচার করে শাস্তি দেয়ার দাবি করা হয়েছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এক সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকারের কথা বলা আছে। সে গুলো কেবল কথার কথা হয়ে আছে। এদিকে আদিবাসীদের দুঃখ চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ে।’
‘রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায়ের মানুষদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল করে কথা বলা হয়। সংখ্যালঘু, আদিবাসী হলে সেটা আরো বেশি হয়’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্র একদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতা দেখাচ্ছে, অন্যদিকে নিজ দেশের নাগরিকদের সাথেই অমানবিক হয়ে উঠছে বলে তিনি তার বক্তব্যে বলেন।
আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান তার বক্তব্যে বলেন, প্রশাসনের লোকজন লংগদু গেলেন, দেখেও আসলেন, একবছর পার হয়ে গেলো অথচ পূনর্বাসনের বাড়ি নির্মান হলোনা।
তিনি আরো বলেন, আপনারা আমলাদের গাড়ি, মোবাইল কেনার জন্য বরাদ্দ দিতে পারেন,অথচ এক বছরেও লংগদুতে বাড়ি নির্মাণ করতে পারেন না, এ লজ্জাজনক।
লংগদুতে কেবল আবাসিক পূনর্বাসন হলে হবেনা, সেখানে মানসিক ও মানবিক পূনর্বাসন দরকার বলে মন্তব্য করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে শান্তি আসতে সময় লাগবেনা। কিন্তু চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা কারন এটা রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনা শাসনাধীন বলে তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া বাংলাদেশের এক অংশ সেনা শাসনে থাকবে তা হতে পারেনা। রাষ্ট্রের এমন দ্বিচারিতা মানা যায়না।’
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আমরা আজ এমন ঘটনা স্মরণ করছি যে ঘটনা বর্বরতার। রাষ্ট্র মানবিক হলে এটার প্রয়োজন হতোনা।’
‘লংগদুতে মানুষের পূনর্বাসনের পাশাপাশি খুব বেশি দরকার হলো ঘটনার তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করা। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরী। তা না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বর্বর রাষ্ট্র চাইনা, চাই মানবিক রাষ্ট্র। যেখানে সবাই নিরাপদে থাকতে পারে তেমন রাষ্ট্র আমরা চাই।’
আলোচনা সভার সভাপতি ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাঙালিরা বাস করেন, তাদের মধ্যে অনেকে সে দেশে মাইনরিটি হিসেবে নানান সুযোগ পান, কিন্তু দেশের মাইনরিটি নাগরিকদের সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
তিনি চীনের উইঘুর মুসলমান সম্প্রদায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন সে অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের জমি কেনা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে যা হয়না বলে তিনি মন্তব্য করেন। শান্তি চুক্তিও এমন জায়গা থেকেই বাস্তবায়িত হচ্ছেনা বলে তিনি জানান।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন লংগদু থেকে আসা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কুলীন মিত্র চাকমা, মঙ্গল কান্তি চাকমা ও হামলায় নিহত গুনেমালা চাকমার কন্যা কালাসোনা চাকমা। তাদের বক্তব্যে সেদিনের ঘটনার কথা উঠে আসে। কুলীন মিত্র চাকমা জানান, সেদিন প্রশাসনকে নিরাপত্তার জন্য জানানো হলে তারা আশ্বস্ত করে। কিন্তু বারবার সংশয় জানানো সত্বেও তারা যথাযথ নিরাপত্তা দেয়নি। কালাসোনা চাকমা তার বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার মায়ের হত্যার যথাযথ দাবী জানান।
সভা থেকে আদিবাসী পাহাড়িদের বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার, ক্ষতিগ্রস্থদের আরো ৩ বছর রেশন প্রদান, হামলার পর পাহাড়িদের উপর দেয়া মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানানো হয়।
তারিক মিঠুলের সঞ্চালনায় সভার মূল বক্তব্য পাঠ করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির আহবায়ক ডা. মুশতাক হোসেন।