আন্তর্জাতিক

লংগদুতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে দিল্লিতে বিক্ষোভ

রাঙ্গামাটি লংগদুতে ২ জুন সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সমাবেশটি ৯ জুন ভারতের, দিল্লিতে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্মদের উপর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

বক্তারা বলেন, লংগদুতে গত ২ জুন সেটেলার বাঙালি কর্তৃক প্রায় ৩০০ বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট সহ পাহাড়ী নারীকে হত্যা করা হয়েছে। নুরুল ইসলাম নামে একজন সেটেলার বাঙালি লাশকে কেন্দ্র করে সেখানে সেনাবাহিনী-পুলিশের মদদে বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হামলা করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, লংগদু ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত যা সেখানে মুহুর্তের মধ্যে পেট্রোল ও কেরোসীন দিয়ে লাশবাহী মিছিল চলাকালে সেটেলাররা হামলা চালায়। এ সময় শত শত জুম্মরা প্রাণ বাঁচাতে ভয়ে বনে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। তারপর সেখানে সেনা-পুলিশের মদদে তাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ সহিত লুটপাট চালায়। তাদের হামলায় এক (জুম্ম মহিলাকে) আগুনে পুড়ে হত্যা করা হয়েছে।

বক্তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯৭ সালে সরকার আন্তরিকতা দেখিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরে ও তা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শান্তি চুক্তি মোতাবেক পাহাড় থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি,যার কারণে জুম্মরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়ে আসছে।

তারা বলেন, একটি লাশকে কেন্দ্র করে সেখানে পাহাড়ীদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া কোন মতে গ্রহনযোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিত বাঙ্গালী খুনীকে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা। কিন্তু তা না করে প্রসাশন বেইআইনিভাবে লাশবাহী একটি মিছিল করতে অনুমতি দেয়।এতে সেটেলার বাঙ্গালীরা সাম্প্রদায়িক হামলার করার সুযোগ পেয়েছে। অথচ পাহাড়িদের সাধারণ মিছিলে প্রসাশন বাঁধা দেয়। অধিকার আন্দোলন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীরা তাদের উপর হামলা করে।

সমাবেশে অন্যান্যরা বলেন, লংগদূর ঘটনা কেবল সম্প্রতি ঘটনা নয় এর আগেও খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় সেটেলাররা সাম্প্রদায়িক হামলা ,জায়গা দখল, লুটপাট,খুন,ধর্ষণসহ-অত্যাচার করে আসছে।সরকার দীর্ঘ বছর যাবত পাহাড়িদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে চুক্তি বাস্তবায়ন অচিরেই করা হবে।কিন্তু যখন ক্ষমতায় যায় তখন সে বাস্তবায়ন গাফিলতির কারণে উদাসীনতায় থেকেই যায়।যার কারণে পাহাড়িরা আস্থা হারিয়ে ফেলে।বক্তারা অভিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এসময় সকল চাকমা সোশাল ফোরাম (এআইসিএসএফ) কর্তৃক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীমতি সুষমা স্বরাজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দোষীদের শাস্তির দাবি সহিত হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয়।

এআইসিসির উপসচিব জেনারেল ভিক্টর তালুকদার চাকমা সুষমা স্বরাজকে অবহিত করে দাবি করেন যে বাংলাদেশের সরকারকে জুম্মদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যতগুলো সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার একটি ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়নি বরং প্রশাসন জুম্মদের সম্পাদ্য সমস্যার বিষয়গুলো সমাধান করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ও উদাসীন ভূমিকা পালন করছে যার কারনে নিরীহ খেতে খাওয়া জুম্মরা অহরহ নির্যাতিত শোষণ বঞ্চনার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। তিনি আরো বলেন লংগদুতে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হওয়া জুম্মরা বর্তমানে খোলা-আকাশের নিচে বসবাস করেছে। অনেকে পোড়া ভিটায় মনের দুঃখে ফিরছেনা।

তিনি বলেন, যারা এই হামলার সাথে জড়িত ও সেটেলারদের মদদ দিয়েছে তাদের নিরপেক্ষ তদন্তে সাপেক্ষে আইনের আওতায় এনে শাস্তি আর ক্ষতিগ্রস্থ জুম্মদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এছাড়া গতকাল লংগদুতে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যে আদিবাসী সম্প্রদায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।চাকমা সমাজিক পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন প্রায় কয়েকশ মানুষ। এ সময় বোরক পিপলস হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন (বি পি এইচআরও), ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া সংগঠনগুলো উপস্থিত ছিলেন।

আগরতলা দূতাবাসে বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনারের মাধ্যমে আইএফএফটি (এনডব্লিউ ডিবাবর্ম) যুব প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।উক্ত স্মারকলিপিটিতে আদিবাসীদের উপর চরম অত্যাচার করা হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।এসময় বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আগরতলায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আইএফএফটি (রানা কিশোর ও রাজেশ্বর দেববর্মা) গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লংদুতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার জুম্মদের বিচারের দাবিতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

Back to top button