জাতীয়

লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের দুইশতাধিক ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সাম্প্রদায়িক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

আজ রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা ও পার্শ্ববর্তী মানিকজুরছড়ায় সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এ হামলায় লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট এবং মানিকজুরছড়ায় কমপক্ষে ৪০টির ঘরবাড়িসহ জুম্মদের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।

জানা যায় যে, খাগড়াছড়িতে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে একজন সেটেলার বাঙালি মোটর সাইকেল চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় লংগদু উপজেলায় বাত্যা পাড়া থেকে সেটেলার বাঙালিদের এক জঙ্গী সাম্প্রদায়িক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আনুমানিক ১০টার দিকে লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় পৌঁছলে সেটেলার বাঙালিরা কোন উস্কানী ছাড়াই জনসংহতি সমিতির অফিসসহ জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ঘরবাড়ি লুটপাটসহ জুম্মদের উপর হামলা করতে শুরু করে। এতে তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের ২০০-এর অধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয় বলে জানা যায়। এরপর সেনা ও পুলিশ প্রহরায় সেটেলার বাঙালিরা পার্শ্ববর্তী মানিকজুরছড়ায় হামলা করতে যায়। এতে জুম্মদের বসতিতে অগ্নিসংযোগ করলে কমপক্ষে ৪০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ছাই হয়ে যায়।

বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখার সময় সেনাবাহিনীর প্রহরায় সেটেলার বাঙালিরা দক্ষিণ মানিকজুরছড়া, বাত্যা পাড়া ইত্যাদি জুম্ম গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

লাশ নিয়ে সেটেলারদের জঙ্গী মিছিল বের করার খবর গতরাতে জানাজানি হলে স্থানীয় জুম্ম জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ লংগদু সেনা জোন ও লংগদু থানা কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানান। আজ সকালে সেনা জোনের পক্ষ থেকে টুআইসি মেজর রফিক জুম্মদেরকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ‘মিছিল করা সেটেলারদের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলটি করবে। কোন অঘটন ঘটতে দেয়া হবে না।’ তাই নিরাপত্তা নিয়ে জুম্মদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে জুম্ম জনপ্রতিনিধি ও জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দসহ জুম্মদেরকে তিনি আশ্বস্থ করেন। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক যে, লংগদু সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার লে: কর্ণেল আবদুল আলিম চৌধুরী পিএসসি, টুআইসি মেজর রফিক ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে সেনা-পুলিশের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে এবং লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।

উক্ত জঙ্গী মিছিল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি, জামায়াতে ইসলাম প্রভৃতি জাতীয় রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এবং তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন ও অন্যান্য সেটেলার বাঙালিদের সংগঠনের লোকজন অংশগ্রহণ করে বলে জানা যায়। তারই অংশ হিসেবে আজ সকল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত মোটর সাইকেল চালককে হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি শহরে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ এক জঙ্গী মিছিল বের করে। এতে জুম্ম বিরোধী সাম্প্রদায়িক শ্লোগান প্রদান করা হয় বলে জানা যায়।

সেনা জোন ও থানার পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস প্রদান করা সত্ত্বেও এবং তাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে জুম্মদের ঘরবাড়িতে সেটেলার বাঙালিদের অবাধে এই অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলার ঘটনা থেকে এটা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, সেনা-পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের যোগসাজশে জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলার পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে সেটেলার বাঙালিরা লাশ নিয়ে মিছিল করার আয়োজন করেছিল।

জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল ও স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, সর্বোপরি জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকশ্রেণির মদদে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতি মনে করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জরুরী ভিত্তিতে সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালিদের এই হামলা বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে এবং এই অগ্নিসংযোগ ও হামলার সাথে জড়িত সেনা-পুলিশ ও সেটেলার বাঙালিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।

Back to top button