আঞ্চলিক সংবাদ

লংগদুতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ

রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায় সেনা-সেটেলার কর্তৃক জুম্মদের গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ৩ জুন ২০১৭ইং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিকাল ৩.০০ ঘটিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম মহানগর,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মিলন চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য অনুজ চাকমা,পিসিপি চট্টগ্রাম প্যারামেডিকেল শাখার সভাপতি জুনি চাকমা,পিসিপি ইউ.এস.টিসি শাখার সাধারণ সম্পাদক মংজয় মারমা,পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মিটুল চাকমা(বিশাল),ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্ররাম জেলা সংসদের আহবায়ক সদস্য,শাহরিয়ার রাফি,নারী নেত্রী বিজয় লক্ষী দেবী,পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা,পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শরৎজ্যোতি চাকমা,বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ,চট্রগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ,বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ,চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড় এবং সভপতিত্ব করেন পিসিপি চট্রগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি ছাত্রনেতা বাবলু চাকমা(মণি)।

সমাবেশে বক্তারা বলেন,বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেখানেই বসবাস ভিন্ন ভাষাভাষি ১৪টি জুম্ম জনগোষ্ঠীর,যারা নিজেদেের স্বতন্ত্র স্বকীয়তা বজায় রেখে যুগ যুগ ধরে তাদের চিরায়ত ভূমিতে বসবাস করে আসছে। বৈচিত্র্যমন্ডিত সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তির বীজ সমতল থেকে পূনর্বাসিত বাঙালী সম্প্রদায় এবং সেখানকার সেনাবাহিনী।
প্রতিনিয়তই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীর উপর সেটেলারের নগ্ন থাবা আর সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের সাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে চলেছে। একের পর এক হত্যা,ধর্ষণ,লুন্ঠন আর অত্যাচারের জর্জরিত পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২ জুন লংগুদুতে পরিকল্পিতভাবে জুম্মদের গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে।

শরৎজ্যোতি চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও উত্তপ্ত হতে চলেছে।কোন প্রকার বাছ-বিচার ছাড়াই একটি লাশকে নিয়ে মিছিল করে জুম্মদের ঘরবাড়ি পোড়ানো কেবল সেনাবাহিনী আর প্রশাসনের ছত্রছায়ায়ই সম্ভব হয়েছে। বিচার চাওয়াটাও যদি হয় জুম্মদের ঘড়বাড়ি পোড়ানো,তাদের সম্পদ লুন্ঠন,হত্যা আর ধর্ষণ,মানবতা সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ।সেখানে জনসংহতির অফিস পোড়ানো হয়েছে,২০০ শতাধিক জুম্মদের বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে।মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামকে নস্যাৎ করে দিতেই প্রশাসনের এই পরিকল্পিত হামলা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও পৃরতিবাদ জানাই এবং অচিরেই সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে জুম্মদের গ্রামে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।

সভাপতির বক্তব্যে বাবলু চাকমা বলেন,লংগুদুর বুকে রক্তের হোলিখেলা আমরা ১৯৮৯ তে দেখিনি,কিন্তু তার মর্মব্যাথা অনুধাবন করার যথেষ্ঠ সক্ষমতা আজকের বর্তমান ছাত্র সমাজের রয়েছে। একজন ছাত্রের প্রধান কাজটা হচ্ছে পড়াশোনা করা,কিন্তু যখন নিজের ভিটেমাটি থেকে নিজের পরিবার,আত্মীয় স্বজনদের উচ্চেদ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়,সেখানে সেই ছাত্রের কাজ শুধু আর পড়াশোনাটার মধ্যেই সীমমাবদ্ধ থাকতে পারে না। ৭০ দশকের ছাত্র সমাজ দেখিয়ে গেছে নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য তারা কি করতে পারে,প্রয়োজনে আজকের ছাত্র সমাজও আবার সেই আগের বাস্তবতায় ফিরে যেতে বাধ্য হবে এবং তার জন্য এই ছাত্র সমাজ সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে বলেই আমরা মনে করি।

সমাবেশে বক্তারা অচিরেই সুষ্ঠ তদন্তের মধ্যদিয়ে দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়,মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে নন্দনকানন মোড় ঘুরে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ করা হয়।

Back to top button