জাতীয়

রোহিঙ্গা সহায়তায় জাতিসংঘের তহবিল সংগ্রহে হিমশিম

তিন লাখ শরণার্থীর হিসাব ধরে জরুরি সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে যে অর্থ জাতিসংঘ চেয়েছিল, তার অর্ধেকও এখনও জোগাড় হয়নি, অথচ এরইমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে চলেছে।
জাতিসংঘের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে যে ধারণার ভিত্তিতে তারা রোহিঙ্গাদের সহায়তার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ওই সময় পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গার জন্য সমন্বিত ত্রাণ তৎপরতায় প্রাথমিক হিসাবেই অন্তত ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার প্রয়োজন।

এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৬৪ হাজার ডলার জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে, যা প্রাথমিক পরিকল্পনার ৪৭ শতাংশ।

কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মিলিয়ে শরণার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং সে অনুযায়ী বেড়ে গেছে চাহিদাও।

এই বিপুল জরুরি সহায়তার চাহিদা মেটাতে সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে ত্রাণ পরিকল্পনা পর্যালোচনা করার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক সোমবার বাংলাদেশে আসছেন। দুই দিনের সফরে তারা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ও সঙ্কটের মাত্রা নিজের চোখে দেখবেন।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও এবার তারা যে সংখ্যায় এসেছে, তাতে এ অঞ্চলে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম এবং তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি, তারা একপ্রকার খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটাচ্ছে। তাদের কাছে খাবার, চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়াও কঠিন হয়ে উঠেছে ত্রাণকর্মীদের জন্য।

প্রতিদিনের বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জমে যাচ্ছে পানি। সেই পানিই ব্যবহার করছেন অনেক শরণার্থী, যার ফলে কলেরার মত মারাত্মক পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে আইওএম।
রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার কাজে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) জানিয়েছে, গত পাঁচ সপ্তাহে আসা রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক চাহিদা মেটাতেই এখন প্রতিদিন অন্তত ৫ কোটি ৯০ লাখ লিটার নিরাপদ সুপেয় পানি আর ১৮ হাজার ল্যাট্রিন প্রয়োজন।

কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার শরণার্থীর জন্য সুপেয় পানি ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পেরেছে।

Back to top button