জাতীয়

রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে ৩০ উপজেলা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনের বাংলাদেশের ভোটার হওয়া ঠেকাতে চট্টগ্রাম বিভাগের ৪টি জেলার ৩০ উপজেলাকে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও রাঙামাটির ৮টি করে এবং বান্দরবান ও চট্টগ্রামের ৭টি করে উপজেলা রয়েছে।

প্রত্যেক উপজেলায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির যাচাইবাছাই ছাড়া এই ৩০টি উপজেলায় কেউ ভোটার হতে পারবেন না।

শনিবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সভায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলাল উদ্দীন এসব তথ্য দিয়েছেন।

সভায় নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়টা মহামারি আকার ধারণ করেছে। তারা ভোটার হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ ভোটার হলে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছে এবং সরকারি সব সুযোগ সুবিধার দাবিদার হচ্ছে।

‘নজরদারির অভাবে অথবা প্রভাবশালীদের স্পন্সরশিপে আগে অনেক রোহিঙ্গাই ভোটার হয়ে গেছেন। অবস্থা এমন হয়েছে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত হয়ে গেছে। ’ বলেন শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী

ইসি সচিব জানিয়েছেন, গত ২৫ জুলাই থেকে সারাদেশে একযোগে ভোটার ‍তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয় যা শেষ হয়েছে ৯ আগস্ট। যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের যাচাইবাছাই ও নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

বিশেষ এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের সব উপজেলা অর্থাৎ আটটিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া।
রাঙামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮টিকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল।

বান্দরবানের সব উপজেলা অর্থাৎ সাতটিই চিহ্নিত হয়েছে বিশেষ এলাকা হিসেবে। এগুলো হচ্ছে সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি।

চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলার মধ্যে চিহ্নিত সাতটি উপজেলা হচ্ছে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী।

সভায় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা আরও কয়েকটি এলাকাকে বিশেষ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ করেন।

এসপি বলেন, চট্টগ্রামে বিশেষ এলাকা যেগুলো বলা হচ্ছে সবগুলো দক্ষিণ চট্টগ্রামের। পটিয়া এবং চন্দনাইশে প্রচুর পাহাড়ি এলাকা আছে যেখানে ভাসমান রোহিঙ্গারা থাকতে পারেন। এর বাইরে রাউজান এবং ফটিকছড়ি উপজেলায়ও পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গারা আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাইয়েও রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। কারণ সেখানে অনেক শিল্পকারখানা আছে, কাজের সুযোগ আছে। সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে এবং নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় রোহিঙ্গাদের বসবাস আছে। এসব উপজেলাকেও বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা উচিৎ।

জবাবে ইসি কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিশেষ এলাকার সংখ্যা ইতোমধ্যে আমরা বাড়িয়েছি। এছাড়া আরও যেসব সুপারিশ এসেছে সেগুলো কমিশনের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহার সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.মনিরুজ্জামান, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভীরও বক্তব্য রাখেন।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি জেলার পুলিশ, বিজিবি, জেলা প্রশাসক, ৩০ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তা, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

Back to top button