মতামত ও বিশ্লেষণ

রানা প্লাজা ও নিরুদ্দেশ আদিবাসী নারীরা

পাভেল পার্থঃ

২৪ এপ্রিল ২০১৩ সাভারের রানা প্লাজায় ভবনধসে ১১৩৪ জন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হন। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই, আহত হয়েছেন অগণিত। রানা প্লাজায় কর্মরত শ্রমিকেরা কারখানা ভবনের নির্মাণজনিত সমস্যার কারণে এটি ভেঙে পড়ার আশংকার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। তারপরও তাদেরকে জোরজবরদস্তি করে টেনে হিঁচড়ে কারখানা ভবনে ঢুকানো হয়। ভবন ধসে পড়ার পর সর্বস্তরের জনগণ উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসে। প্রায় ১৭দিন পর জীবিত উদ্ধার হয় গার্মেন্টস শ্রমিক রেশমা। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার কারখানা নির্মাণ ও গার্মেন্টস বাণিজ্যের সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক উন্মোচিত হয়। কিন্তু বছর তিন গড়ালেও বিচারহীন রয়ে যায় সবকিছুই। এমন তো নয় যে, গার্মেন্টসে একবারই এই বহুজাতিক বলপ্রয়োগ ও অন্যায় খুনখারাবি ঘটেছে। গার্মেন্টস মানেই এটি শ্রমিকদের এই অন্যায় মৃত্যু ঘটে চলেছে।

২.
২০০৫ সনের ১১ এপ্রিল ঢাকার সাভারের স্পেকট্রাম সোয়েটার কারখানা ভবনটি পুরো আটতলা একেবারে ধসে পড়ে। মূলত নির্মাণত্রুটির কারণেই এ নির্মম ঘটনাটি ঘটে। তাছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষের আটতলা ভবন নির্মাণের কোনো বৈধতাও ছিল না। স্পেকট্রাম ভবন দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০ শ্রমিক নিহত হয়। ২০০৬ সনের ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত কেটিএস গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগে। পুড়ে ছাই হয় শ্রমিক, সেলাই মেশিন ও গরিবের সংসার। কারখানাটির অবস্থান এক দমবন্ধ চিপাগলিতে। দমকল বাহিনীর গাড়িও তাই আসতে না পারার দায় চাপিয়েছে চিপাগলির ঘাড়েই। কারখানার ভেতর প্রশস্ত সিঁড়ি, দরজাও অনেক। কিন্তু আগুন লাগার পর কারখানার সব দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে প্রহরীকে লাপাত্তা করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা মালিকের ভয় শ্রমিকেরা যদি আবার কাপড় টাপড় চুরি টুরি করে পালায়। কোনোভাবেই শ্রমিকেরা জ্বলন্ত কারখানা থেকে বের হতে পারেনি, বাইরের কাউকে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। চারপাশ ঘিরে ফেলে পুলিশ ও র‌্যাব। আশেপাশের গার্মেন্টস কারখানা থেকে শ্রমিক ও গরিব মানুষ ছুটে আসে। জান দিয়ে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। কেউ কেউ লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় কতজন মরেছে, কতজন আহত তার কোনো হদিশ আর থাকে না। ২০১২ সনের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগে। আগুন লাগার আগে কারখানাটির পাঁচটি তলায় প্রায় ১৮০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। আগুন লাগার পর ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলে শ্রমিকেরা সতর্ক হয়, কিন্তু মূল গেট থেকে বলা হয় আগুন নিভে গেছে। আগুনের ধোঁয়ায় আতকিংত শ্রমিকেরা আটতলা ছাদ থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করে। আগুনে পুড়ে নিহত হয় ১১১ জন শ্রমিক। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থিত খান মার্কেটের দ্বিতীয় তলার স্মার্ট ফ্যাশন গার্মেন্টসে আগুন লাগে ২০১৩ সনের ২৬ জানুয়ারি। এ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় ৭ নারী শ্রমিক। এ ঘটনায় নিহত শ্রমিক রাজিয়ার বাবা মোহাম্মদপুর থানায় গার্মেন্টসের পরিচালকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

৩.
২০০৫ সন থেকে দেশে গার্মেন্টস কারখানায় ভয়াবহ ভবনধসের বড়রকমের সূত্রপাত ঘটলেও দীর্ঘ দশ বছরেও রাষ্ট্র ভবনধস থেকে জানমাল সুরক্ষার কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ গার্মেন্টস শ্রমিকের শরীরের উপর দিয়ে রাষ্ট্র কামাই করছে কোটি কোটি টাকা। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ড, ভবনধসসহ গার্মেন্টসের বিপর্যয় ও নিপীড়নে কত শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছে তার কোনো তালিকা ধারে কাছে কোথাও নেই। শ্রমিকের লাশের গণিত যখন সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় তখন এ নিয়ে দিনকয়েক গণমাধ্যম ‘সরব’ থাকে। আর লাশের সংখ্যা যেখানে গোনাগুনতির পর্যায়ে পড়ে না সেসব ‘গার্মেন্টস-দূর্ঘটনা (?/!)’ এখন আর কেউ আন্দাজ করে না। গত দশ বছরেই দেশে অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসে সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের মরণ হয়েছে।

৪.
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে বিসিক শিল্পনগরীতে ১৯৭৭ সনের ২৭ ডিসেম্বর গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস কারখানা ‘দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড’। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬-১৯৭৭ সনে। ওভেন, নিটওয়্যার ও সোয়েটার মূলত এ তিন ধরনের গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদনের ভেতর দিয়েই প্রতিদিন বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প খাত। বিজিএমইএর হিসেব মতে দেশে ২০১২-২০১৩ সনে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫,৬০০টি গার্মেন্টস কারখানা আছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সূত্র মতে, ১৯৭৩ সনে নিটওয়্যার গার্মেন্টস পণ্যই প্রথম দেশ থেকে রপ্তানি হয় এবং ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৭ সনে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিটওয়্যারের অবদান ৪৮.৬৯ ভাগ। ১৯৮৪-১৯৮৫ সনে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ০.১২ মিলিয়ন, ২০১২-২০১৩ সনে যা প্রায় চার মিলিয়নে পৌঁছায়।

বাংলাদেশে গার্মেন্টসই সবচেয়ে বড় আয়মূলক রপ্তানিনির্ভর উন্নয়ন খাত। এখানে নানান বয়স, লিঙ্গ, জাতি ও ধর্মের মানুষ নানান কাজের সাথে জড়িত। বিজিএমইএ সভাপতির এক আলোচনা থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৪৪ লাখ মানুষ গার্মেন্টস শিল্পে এবং ৮০ লাখ টেক্সটাইল খাতে কাজ করে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এত বড় খাতের শ্রমিকদের কোনো পূর্ণাঙ্গ দলিল কোথাও নেই, না মুদ্রিত না অনলাইনে। প্রতিটি কারখানার সকল শ্রমিকের নাম-পরিচয়সহ তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ কোথাও একত্রে নথিভুক্ত করা নেই। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী প্রতিজন শ্রমিকের একটি ‘সার্ভিস বুক’ থাকবার কথা। রানা প্লাজা হত্যাকান্ডের পর অনেক শ্রমিক নিখোঁজ থেকে যায়, অনেকেরই নাম পরিচয় সঠিকভাবে মেলেনি। পরিবার পরিজন স্বজন বন্ধু সমাজ আজও পায়নি ফিরে প্রিয়জনের নাগাল। রানা প্লাজা হত্যাকান্ডের পর নিহত-আহত ও নিখোঁজ শ্রমিক তালিকা নিয়ে রাষ্ট্র ও বহুজাতিক এজেন্সিগুলো বাহাদুরি করেছে, করেছে আড়াল ও গায়েব করে ফেলবার ঐতিহাসিক দরবার। সেসময় তিন আদিবাসী শ্রমিকের করুণ মৃত্যু ঘটে, আহত হন অনেকেই। রানা প্লাজা কেন্দ্রিক তথাকথিত মূলধারা থেকে শুরু করে সক্রিয় সমব্যাথী নথি ও দলিলগুলোতেও নিহত তিন আদিবাসী নারী নিখোঁজ হয়ে যান। এ যেন প্রান্তিকতার প্রান্তসীমার বাইরের প্রান্তিকতা। রাষ্ট্র, এজেন্সি এমনকি সক্রিয় নাগরিক আওয়াজগুলোও প্রান্তিকতার এই বৈষম্যমূলক মনস্তত্ত্ব ধারণ করেছে। চলতি আলাপখানি রানা প্লাজা বা নিহত-আহত-নিখোঁজ শ্রমিকদের নিয়ে নয়। দলিলায়নের নানা ফিরিস্তি থেকে রানা প্লাজায় নিহত তিন আদিবাসী শ্রমিক বাদ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে চলতি আলাপখানি চলমান সমাজের অধিপতি মনস্তত্বকে পাঠ করতে চেয়েছে। যে মনস্তত্ব সক্রিয় হলেও বিবাজনের সকল সূত্রকে খারিজ করতে পারছে না।

৫.
মার্থা শিখা হাঁসদা, পেঁপেতুয়া হাঁসদা ও শেফালী মার্ডী এই তিন আদিবাসী নারী রানা প্লাজা হত্যাকান্ডে খুন হন। মণিকা, মেরিনা, খ্রিস্টিনা, তেরেজাসহ আহত হন অনেকেই। মার্থা শিখা হাঁসদা মাহালী। মা কসতানন্তিনা ও বাবা রেনাতুশ হাঁসদা। রাজশাহীর দামকুড়াহাটে বসতি হলেও সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে তাদের পরিবার চলে আসে কয়েরদাড়া কলিমনগর খৃস্টান পাড়ায়। আটকুশি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন শিখা। দিনাজপুরের সুইহারীতে ‘নভেরা টেকনিক্যাল স্কুলে’ ২০১২ সনে গার্মেন্টস সেলাই প্রশিক্ষণ নেন। তারপর ২০১৩ সনে সাভারের রানা প্লাজায় জুনিয়র সুইং অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। পেঁপেতুয়া হাঁসদা ও শেফালী মার্ডী জাতিতে সাঁওতাল। পেঁপেতুয়ার বাড়ি দিনাজপুরের বিরলের শাইখডাঙা। মায়ের নাম চিচিলিয়া মুর্মু ও বাবা রাফায়েল হাঁসদা। শেফালী মার্ডীর বাড়িও দিনাজপুর সদরের ভাটপাড়ায়। শেফালীর মা আগ্নেশ হাঁসদা ও বাবা স্যামুয়েল মার্ডী। এরা সকলেই রানা প্লাজায় জুনিয়র সুইং অপারেট হিসেবে কাজ করতেন।

৬.
দেখা যাচ্ছে পাহাড় কি সমতলের আদিবাসী নারীদের বয়:সন্ধিকাল উত্তীর্ণ হতে না হতেই এক করুণ অভিবাসন ঘটছে শহরের গার্মেন্টস বা বিউটি পার্লার গুলোতে। চাকমা, মান্দি, বর্মণ, ত্রিপুরা, মারমা আদিবাসীদের সংখ্যা এক্ষেত্রে অনেক বেশি হলেও গত পাঁচ-সাত বছরে সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহালী আদিবাসীরাও গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আদিবাসী অঞ্চল গুলোতে স্থানীয় সম্পদ নির্ভর নিজস্ব উৎপাদন রীতি ও ধারাবাহিকতাকে সমূলে ভেঙেচুরে দিয়েছে রাষ্ট্রের তথাকথিত উন্নয়ন বাহাদুরি। বনজংগল, ছড়া-ঝর্ণা, পাহাড়-টিলা, জুম-জমিন সব কিছু দখল ও ছিনতাই করে আদিবাসীদের নিরন্তর উদ্বাস্তু ও নিরুদ্দেশ হতে বাধ্য করা হচ্ছে। জান টিকিয়ে রাখতে আদিবাসীরাও বাধ্য হচ্ছেন গার্মেন্টসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়। এ যেন দেশে আদিবাসী কি বাঙালি সকল গরিব মেহনতি মানুষের অনিবার্য নিয়তি। একজন বাঙালি নারীকে গার্মেন্টসে কাজ করতে গেলে পুরুষতান্ত্রিক বলপ্রয়োগ আর বহুজাতিক মারদাঙ্গা সামাল দিতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন আদিবাসী মেয়েকে সামাল দিতে হয় আরো অনেক চোখরাঙানি আর নিপীড়ন। বাঙালি বলপ্রয়োগ আর রাষ্ট্রীয় জাত্যাভিমান। তাই দেখা যায় রানা প্লাজার মতো এক করুণ আখ্যানেও আদিবাসী নারী শ্রমিকদের সমমর্যাদা মিলে না। জাত্যাভিমানী রাষ্ট্র ও চলমান অধিপতি মনস্তত্ত্ব লাশেরও বাছ-বিচার করে। বাহাদুরি জিইয়ে রাখে। এখনও পর্যন্ত রানা প্লাজায় নিহত ও আহত আদিবাসী পরিবারে রাষ্ট্র কোনো সমবেদনার হাত বাড়ায়নি। আগলে ধরেনি দু:সহ যন্ত্রণায় কাতর ছলছল কলিজাগুলো। অধিপতি এ মনস্তত্ত্ব বাতিল করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে সকলের জন্য সমর্যাদার আত্মপরিচয়ের সীমানা। তিন বছর পেরিয়ে গেল বিচারহীন কায়দায়, জনগণের রক্তপ্রবাহকে নির্দয়ভাবে অস্বীকার করে চলেছে বহুজাতিক গার্মেন্টস কোম্পানিগুলো। রাষ্ট্রও নির্বিকার, কেবলি কর্পোরেট এজেন্সির স্বার্থ সুরক্ষা করে চলেছে।

হাজার বছর ধরে আদিবাসী কি বাঙালি, বাংলাদশের গ্রামীণ নিম্নবর্গ কেবল বুনেই চলেছে। এ অঞ্চল বুনন-বয়নের এক অবিস্মরণীয় আঁতুড়ঘর। এখানেই জন্ম নিয়েছে আদি মিহি তাঁতবস্ত্র মসলিনের যাদু। ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইল-পাবনা-কুষ্টিয়ার তাঁত, মণিপুরী তাঁত, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেইন তাঁত, রুহিতপুরী লুঙ্গি, বাবুরহাটের তাঁত, মান্দিদের বারা-সিকগা, হাজংদের বানা তাঁত, হাওরের উঠান তাঁত, কুমিল্লার খাদি বুনন ও বয়নবিদ্যার এমন ঐশ্বর্য দুনিয়ার আর কোথায় আছে! বাংলাদেশে বাঙালি কি আদিবাসী সকল সমাজে নারীই গ্রামীণ গৃহস্থালী বয়ন ও বুনন বিদ্যার অগ্রদূত। আর বিস্ময়করভাবে আজও কর্পোরেট বুনন-বাণিজ্য এই গার্মেন্টস শিল্পের হালও ধরে আছে দেশের বুননউদ্বাস্তু নারীরাই। রাষ্ট্রকে নারীর বুনন ঐতিহাসিকতাকে সম্মান জানাতে হবে। রানা প্লাজায় নিহত-আহত ও নিখোঁজ সকলের করুণ মৃত্যুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

………………………………………………………..
লেখক ও গবেষক। [email protected]

Back to top button