রাণী ইয়েন ইয়েন উপর হামলার প্রতিবাদে চাকমা রাজবাড়ী প্রাঙ্গণে সংহতি সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাঙামাটির বিলাইছড়ির ওরাছড়ি গ্রামে দুই বোন ধর্ষণ-যৌন হয়রানী ও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাকমা সার্কেলের রাণী য়েন য়েনের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তিন (চাকমা, মং, বোমাং) সার্কেলের প্রজারা।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে রাণীর উপর হামলার ঘটনায় চাকমা রাণী ও রাজ পরিবারের প্রতি সংহতি জানাতে এসে এ দাবী করেন তিন সার্কেলের প্রজারা।
এর আগে সোমবার সকাল থেকে তিন (চাকমা, মং, বোমাং) সার্কেল থেকে হাজারো প্রজারা বিভিন্ন দাবী সংবলিত ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে রাজবাড়িতে হাজির হন।
সংহতি অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন রাণীর উপর আঘাত করা মানে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রথাগত আইন ব্যবস্থার প্রতি আঘাত করা। যারা রাণীর উপর হামলা চালিয়ে তারা আদিবাসী ও আদিবাসীদের প্রথাগত আইনের প্রতি হামলা করেছে। এ হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এসব ঘটনার সুষ্ঠ বিচার করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, ওরাছড়িতে দুই বোন যে নিপীড়নের শিকার হল আমরা তার বিরুদ্ধে কথা বলছি। না হলে এ ধরণের ঘটনা আরো হত।
রাজা বলেন, ধর্ষণ করে হামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা আরো সংগঠিত হব। যারা জোর করে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানীর শিকার দুই বোনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে এবং যারা রাণী ও সেচ্ছাসেবকদের উপর হামলা করেছে তারা কাপুরুষের কাজ করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।
রাণী য়েন য়েন বলেন, ঘটনার দিন আমরা আদিবাসী দুই বোন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমরা তার বিচার চেয়েছি। আমরা কোন রকম আইন লংঘন না করে আইন মেনে তার প্রতিকার চেয়েছি। আমরা যে কজন অন্যায় মেনে নিতে পারি না তারা হাসপাতালে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যারা ছিল তাদের সবকিছুই ছিল। যখন আমাদের সাথে তারা বুদ্ধিতে, কৌশলে পেরে উঠতে পারছিল না তখন তারা অন্যায়ভাবে কাজটি করেছে। তারা সেখানে জিতে গেছে বলে আমাদের লড়াই থেমে যাবে তা নয়। এত সহজ নয়। ঘটনার সময় আমাদের যে মনোবল ছিল তা এখন আরো বেড়েছে, আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তারা যখন আমাদের মারছিল তখন ঐ দুই বোন আমাদের সামনে ছিল। এর অর্থ ছিল ঐ দুই বোনকে বুঝিয়ে দেওয়া যে যাদের প্রতি তাদের আস্থা তারা আসলে কিছুই না। অর্থাৎ তারা চাইলে সব কিছু করতে পারে। এ লড়াই আমাদের থেমে যায়নি। আমরা এর ন্যায় বিচার চাইব।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, রাণীর উপর হামলা মানে আমাদের সবার উপর হামলা। এ ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত করে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, বিলাইছড়িতে দুই বোন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানীর শিকার হল। ভিকটিমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। তাদের পাশে রাণী হাসপাতালে ছিলেন। আদালত ভিকটিমদের তার মা বাবার হেফাজতে দেওয়ার জন্য রায় দিয়েছে। কিন্তু ভিকটিমরা তার মা বাবার সাথে যেতে রাজি হয়নি। তারা রাণীর হেফাজতে যেতে রাজি ছিল।
কিন্তু ভিকটিমদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাণীর উপর হামলা করে জোর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে প্রথাগত আইনকে পুরো বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর পাশাপাশি রাণীর উপর হামলা করে দু:সাহস দেখানো হয়েছে। ভিকটিমদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী বল প্রয়োগ করে।
সংহতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বোমাং সার্কেল প্রতিনিধি চলাপ্রু মারমা, অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী প্রমূখ।
প্রসঙ্গত গত ২১ জানুয়ারী বিলাইছড়ি উপজেলার ওরাছড়ি গ্রামে দুই মারমা তরুণীর একজন ধর্ষণ ও একজন যৌন হয়রানীর শিকার হয়। এ ঘটনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যর উপর অভিযোগ ছিল। গ্রামবাসীর সহযোগীতায় তারা রাঙামাটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা শেষে তারা মা বাবার জিম্মায় যাওয়ার অপারগতা প্রকাশ করে চাকমা সার্কেলের রাণীর জিম্মায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
কিন্তু রাণীর জিম্মায় দেয়নি প্রশাসন। এ নিয়ে আদালত পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। ১৫ ফেব্রুয়ারী আদালত মা বাবার জিম্মায় যাওয়ার নির্দেশ দিলেও ভুক্তভোগী দুই তরুণী মা-বাবার জিম্মায় যেতে অপারগতা জানালে সন্ধ্যায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে হাসপাতালে ভিতিকর পরিস্থিতি তৈরি ও রাণীর য়েন য়োনের উপর হামলা করে দুই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।