জাতীয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাবি ও রাবি’র জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার মিলনমেলা সম্পন্ন

সতেজ চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার দু’দিন ব্যাপী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬-৭ মার্চ ২০২০ এ দু’দিন ব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক জুম্ম শিক্ষার্থীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মিলন মেলার প্রথম দিন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচে ১-০ গোলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম একাদশকে পরাজিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থীদের একাদশ।
এছাড়া পরবর্তী দিন সকাল বেলায় অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ। উক্ত ম্যাচেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম একাদশকে পরাজিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের একাদশ ।এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের জুমীয় অতিথেয়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় শতাধিক জুম্ম শিক্ষার্থী একসাথে উপভোগ করে জুম¥দের স্বকীয় রান্নার আয়োজনে দুপুরের খাবার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের অতিথেয়তায় মুগ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড় থেকে এত দূরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেও জুমীয় আয়োজনের আবহে যে আতিথেয়তা পেলাম তা ভুলবার নয়। এ ধরণের অতিথেয়তা এবং পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলো আরো ঋদ্ধ হবে এবং জুম্ম তরুণরা শেকড়ের আহ্বানে আরো সংগঠিত হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের চতুর্থ বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়াহ্ন সুলভ চাকমা আইপিনিউজ এর এই প্রতিবেদককে জানান, পারষ্পরিক সৌহার্দ এবং অতিথি পরায়নতাই জুম্মদের অন্যতম সামাজিক মূল্যবোধ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরাও তাঁদের নিজস্ব অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছে এ চিরাচরিত মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে। এ ধরণের পারষ্পরিক যোগাযোগই পার্বত্য চট্টগ্রামের তারুণ্যকে সাংঘিক মেলবন্ধনে সামিল করবে।
প্রীতি ভোজের পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় দুই বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের (ছেলে এবং মেয়ে ) মধ্যেকার বেট মিন্টন, লুডু এবং মিউজিক্যাল চেয়ার। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় আনুষ্ঠিক গেট-টুগেদার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী অরুণ বিকাশ চাকমার পরিচালনায় এবং একই বিশ্ববিদদ্যালয়ের আরেক সিনিয়র শিক্ষার্থী রাসেল চাকমা’র সভাপতিত্বে আনুষ্ঠিক হয় উক্ত গেট-টুগেদার ।এই গেট-টুগেদারের আলোচনায় সংহতি বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সিনিয়র শিক্ষার্থী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, এধরণের মিলনমেলার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–শুনার সুযোগ পেয়েছে তাঁরা যত সংগঠিত হবে এবং নিজেদেরকে জানবে ততই জুম পাহাড় হাসবে। পাহাড়ের সামগ্রিক অনিশ্চয়তা এবং অবরুদ্ধতার বাতাবরণ থেকে উত্তোরণের জন্য এ ধরণের গেট-টুগেদার আয়োজন জরুরী বলেও মত দেন ঢাবির এ সিনিয়র শিক্ষার্থী।
এরপর উক্ত মিলন মেলা উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের আয়োজনে একটি লাকী কুপনের মাধ্যমে কিছু পুরষ্কারের আয়োজনে উপভোগ করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা।এরপর উক্ত আনুষ্ঠানিক গেট-টুগেদারের সভাপতি রাসেল চাকমা’র সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় উক্ত আনুষ্ঠানিক গেট টুগেদারের আয়োজন। তিনি বলেন, কেবল মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগেই এ মিলন মেলা সম্ভব নয়। এ মিলন মেলা সফল করতে গেলে প্রয়োজন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার পারষ্পরিক সহযোগীতা ও সৌহার্দ, যা রাজশাহী এবং ঢাকা এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে। আবারো এ ধরণের আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের জুম্ম শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নিজেদেরকে জানবে এবং স্ব স্ব ভাবনা এবং চিন্তাগুলোর সহভাগীতায় যুথবদ্ধভাবে পথ চলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Back to top button