রাজশাহীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা ও সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত
সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম; রাজশাহীঃ ভূমিদস্যুদের কারণে আদিবাসীরা প্রাপ্য জমির দখল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দখল হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা। বর্তমানে আদিবাসীদের লাশ দাফন করার মতো জায়গা জমি থাকছে না। এক সময়ে জলাকীর্ণ বরেন্দ্রভূমি অমানুষিক পরিশ্রমের বিনিময়ে যে ফসলি জমিতে পরিণত করেছিল আদিবাসীরা সেই আদিবাসীরা আজ পর্যায়ক্রমে ভূমিহীন। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্য। তারা যতদিন ধরে নির্যাতিত হয়েছে ততদিনই তাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে তাদের ভিটেমাটিসহ তাদের ঐতিহ্য। ভূমি সমস্যা সমাধানে সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই। জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের বন্ধুর অঞ্চল ও সমতল ভূমি এলাকায় বহু আদিবাসী জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে করে বসবাস আসছে।
এসব আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল, মাহলী, মুন্ডারী, ওরাও, পাহাড়িয়া, মাহাতো (কুর্মি) পাহান, সিং, রাজোয়ার কর্মকার, মুসহর, রাজবংশী, মুড়িয়ার, মালো, ক্ষত্রীয় বর্মন, গন্ড, রাই, বেদিয়া, কোল, বাগদি তরী প্রমুখ। দীর্ঘদিন ধরে এসব আদিবাসীরা প্রকৃতির মাঝে বসবাস করে আসছে। ২৬ শে মে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা ও সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন, সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা ও সমাধানের করণীয় বিষয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। আদিবাসীদের মধ্যে মতানৈক্য দূর করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিভাজন কমিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উত্থাপিত দাবিগুলো পূরণ করতে হবে। আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজন থাকলে ভূমিদস্যুরা তার সুযোগ নিবেই। আদিবাসীদের সমস্যাগুলো আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য রাজনীতিবিদদেরও সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। কারণ রাজনীতিবিদরা সরকারের সেতু। গতকাল সকালে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একজন পরিপূর্ণ মানুষ মানুষের মধ্যে পৃথক করে না। মানুষ হিসেবেই দেখে। দেশের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর একটা ঠিকানা থাকা প্রয়োজন। যাযাবর মানুষের ঠিকানা লাগে না। সরকারি অফিসগুলোতে আদিবাসী বা বাঙালি সবার সঙ্গে সম আচরণ করতে হবে। আইনের সাম্য বজায় রেখে আদিবাসীদের সেবা দেয়া হবে। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিভাগের সব জেলা প্রশাসককে আদিবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য দিক নির্দেশনা দিবেন বলে জানান।
এনএনএমসি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও হেকসের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, আরকোর নির্বাহী পরিচালক ও এনএনএমসির সভাপতি সজল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিল মারান্ডী, হেকস/ইপার কান্ট্রি ডিরেক্টর অনীক আসাদ। স্বাগত বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ও এনএনএমসির কোষাধ্যক্ষ সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনএনএমসির কো-অর্ডিনেটর মনজুন নাহার।
এনএনএমসির অ্যাডভোকেসি ও কমিউনিকেশন অফিসার তনু শ্রী মাঞ্জির পরিচালনায় মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী নেতৃবৃন্দ সূর্য্য হেমব্রম,রাজকুমার শাও, রঘুনাথ রবিদাস, খ্রিস্টিনা বিশ্বাস, নন্দলাল টুকু, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, কল্পনা তির্কি, হুরেন মুর্মু, হেমন- মাহাতো, নকুল পাহান, অজিত কুমার মুন্ডা প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসীরা।