রাজশাহীতে আদিবাসী ছাত্র পরিষদের মিছিল ও সমাবেশঃ উচ্ছেদ বন্ধের দাবী
সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম।। রাজশাহী।। “সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, নীপিড়ন, ভূমি দখল, ধর্ষণ, হত্যা, জুলুম অত্যাচার মধুপুরে ইকোপার্কের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে” আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ২৫ মে বুধবার ২০১৬, সকাল ১১টায় রাজশাহী মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিলটি রাজশাহী নগরীর গণকাপাড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নকুল পাহান, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক হুরেন মুর্মু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী কলেজ শাখার আহ্বায়ক অজিত মুন্ডা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯ মে ২০১৬ তারিখ বিকেলে পার্বতীপুরের মোমিনপুর ইউনিয়নের কাউয়াটোলা গ্রামে আদিবাসীদের নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। (কাউয়াটলা গ্রাম) জমি-জমার সীমানা বিরোধ নিয়ে আদিবাসীদের সাথে স্থানীয় বাঙ্গালীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে গেলে নারায়ন মুর্মু জানান ৬৯২ দাগের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। এই দাগের জমিতে আদিবাসীরা বংশ পরস্পরায় বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ ভোগদখলীয় জমিতে প্রতিবেশী প্রভাবশালী একরামুল নামের এক ব্যাক্তি হামলা চালায়। তিনি এই জমি নিজের দাবী করে এখানে বাড়ী করার উদ্দেশ্যে লাঠিয়াল বাহিনীসহ বাড়ীর উঠানে ইট,বালু সিমেন্ট নিয়ে এসে গর্ত খুঁড়তে থাকে। বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ৪ আদিবাসী গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দিনাজপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে।
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাহোল গ্রামে গত ১ মে তারিখে শ্মশানের পুকুরসহ সম্পত্তির দখল নিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এর এক নেতা হামলা চালিয়ে রবিদাস সম্প্রদায়ের এক প্রচীন মন্দির ও শিব মুর্তি ভাংচুর করে। এতে সেখানে বসবাসকারী রবিদাস সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অপরদিকে, টাঙ্গাইলের মধুপুর বন থেকে ১৫ হাজার আদিবাসীকে উচ্ছেদের চক্রান্ত করা হচ্ছে। ন্যায্য পাওনা না দিয়ে মধুপুর বন থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হলে চরম মানবাধিকার লংঘনের সামিল। টাঙ্গাইল জেলা অরণখেলা ইউনিয়নের জলছত্র, গায়রা, টেলকি, সাধুপাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ জাঙ্গালিয়া, বেরিবাঈদ, গাছবাড়ী, আমতলী, ভূটিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। সরকার কোনো আলোচনা ছাড়াই এসব গ্রামের আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। যেখানে বহু বছর ধরে এতোগুলো মানুষের বসবাস, সেখানে কোনো ধরনের সংলাপ-আলোচনা ছাড়াই বিস্তীর্ণ এলাকাকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করা হয়। আদিবাসীরাই জানেন বনভূমিকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। এর আগে মধুপুরে ইকোপার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আদিবাসীদের রক্তাক্ত আন্দোলনে তা থেমে গিয়েছিল। সে সময় বনরক্ষীর গুলিতে নিহত হন পীরেন স্নাল, চলেশ রিছিল ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন উৎপল নকরেক। মধুপুর থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করলে আবারও একই ঘটনা ঘটবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ঘোষিত সংরক্ষিত বনভূমি এলাকার মধ্যে ভূমির ওপর কোন ধরনের দাবী-দাওয়া উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণার বিষয়টি এখনো বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নয়। আদিবাসীদের অজান্তেই সংরক্ষিত বনভূমি কাযর্ক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে।
সমাবেশ কর্মসূচি থেকে আদিবাসীদের প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন নীপিড়ন বন্ধ করে যান- মাল ও জীবনের নিরাপত্তার দাবী জানানো হয়।