শিল্প ও সংস্কৃতি

রাজধানীতে সাঁওতালদের জীবনযাত্রা নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী চলছে

রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে বরেন্দ্র অঞ্চল এবং সেখানকার সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে “বরেন্দ্র কাব্য- ২” নামে একটি চিত্র প্রদর্শনী চলছে। তরুন চিত্রশীল্পী সুমন কুমার সরকারের এটি তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী। গত ৪ মে সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে, প্রদর্শনীটি চলবে ১০ মে পর্যন্ত।
পৌরাণিক কাহিনীতে কথিত আছে ইন্দ্রের বরপ্রাপ্ত ভূমি ‘বরেন্দ্র’। এই অঞ্চলের ভূমি উঁচুনিচু। উঁচুনিচু ভূমির লাল মাটিতে গড়ে উঠেছে কৃষিনির্ভর সমাজব্যবস্থা। কৃষিনির্ভর এই সমাজব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আছে কৃষকদের গোটা পরিবার। সেই কৃষক এবং তাদের জীবনযাপনকে ফ্রেম বন্দী করেছেন সুমন কুমার সরকার।

প্রদর্শনীতে প্রায় তিরিশটি ছবি আছে, এর বেশির ভাগ ছবিই জল রঙে আঁকা। শিল্পী বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীন জীবন, সেখানকার মানুষ, সাঁওতালদের কৃষিভিত্তিক জীবনের নানা দিক, সাঁওতালদের সহজ স্বাভাবিক জীবন কে জল রঙের তারল্যে উপস্থাপন করেছেন।

শিল্পী সুমন কুমার সরকার আইপিনিউজকে জানান, আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা বরেন্দ্র অঞ্চলে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের প্রতিবেশী সাঁওতালদের বর্নিল জীবন, তাদের সারল্য এবং জীবনাচার দেখে বড় হয়েছি। সে কারনে সাঁওতালদের সংস্কৃতি আমার শৈশবের সব স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। আমার শৈশবে দেখা সাঁওতাল সমাজ আর এখনকার সাঁওতাল সমাজ, প্রাচীন জনপদ বরেন্দ্র অঞ্চলের চিত্র বদলে যাচ্ছে। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি তার শৈশবের জীবনকেই বেশি অনুভব করে। একদিন হয়তো এগুলো হারিয়ে যাবে। তাই এই প্রাচীন জনপদের এই চিত্রগুলি সংরক্ষণের জন্যই আমি সবসময়ই বরেন্দ্র অঞ্চল নিয়ে ছবি আঁকি। এই নগর জীবনের যান্ত্রিকতায় যখন হাপিয়ে উঠি তখন আমি আমার ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে আমার শৈশবে ফিরে যাই, আমার বরেন্দ্র অঞ্চলে ফিরে যাই। আমার যান্ত্রিকতা থেকে ক্ষণিকের ছুটি পেতেই আমি জল রঙের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় ফিরে যাই, এটা আমার কাছে এক ধরনের ধ্যান, আমার বিনোদন।

তিনি আরও জানান, জল রঙের একটি ঐতিহ্য আছে, এছাড়া এটিতে খরচ অনেক কম, মানুষ তার সাধ্যের মধ্যে ছবি সংগ্রহ করতে পারে। এজন্যই মুলত জলরঙকে বেছে নেওয়া। ধর্মান্তরিত হওয়া, যান্ত্রিকতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার কারনে সাঁওতালদের বর্নিল সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, তাদের উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন উৎসব থেকে যখন সরে যায়, তখন মানুষের আর কিছু থাকেনা। সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ আসলে শুধুমাত্র একটা মুখোশ, তার আর কিছু থাকেনা। সেকারনেই সংস্কৃতি ধরে রাখা, চর্চা করা, মানুষকে সচেতন করার জন্য এটি আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস। এই প্রদর্শনী থেকে যে অর্থ আসছে সেটি দিয়ে সাঁওতালদের জীবন এবং সংস্কৃতি তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি সংগ্রহশালা করতে চাই।

প্রদর্শনীটি আগামী ১০ মে পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২ তা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

Back to top button