শিল্প ও সংস্কৃতি

রাজধানীতে ওয়ানগালা উৎসব পালিত

গতকাল শুক্রবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে রাজধানীতে উদযাপিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ওয়ানগালা এবং রাজধানীতে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপনের ২৫ বছর পুর্তি।

শুক্রবার ফার্মগেটের বটমূলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত উৎসবে অসংখ্য গারো নর-নারীর সমাগম ঘটে। শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর তারা নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে থাকে। স্কুল মাঠে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী স্টল। ওই সব স্টলে স্থান পায় গারো সংস্কৃতি ও আবেগবিজড়িত পোশাক, খাবার, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ানগালা উৎসবে আগত প্রায় সব নারীর শরীরে গারো সংস্কৃতির ছাপ। গারো পোশাক নকমান্দা ও টি শার্ট পরে স্কুল প্রাঙ্গণের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঞ্চে চলছে গারো নাচ ও গান। মনের অজান্তেই নিজেদের সংস্কৃতির অতি পরিচিত গানের তালে তালে নাচতে কেউ কেউ। বছরে একদিন এমন পোশাক পরার এবং সকলের সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পায় তারা। শুক্রবার ঢাকায় বসবাসরত সব বয়সের কয়েক হাজার গারো আদিবাসী করে তাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ ওয়ানগালা’।

ঢাকা ওয়ানগালার-২০১৮ এর নকমা থিওফিল নকরেক জানান, ওয়ানগালা’ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্য দেবতা বা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভালো শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোন খাদ্য ভোগ করে না। ‘ওয়ানগালা’ আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দেড় এক যুগ ধরে প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বসবাসরত গারোরা এ উৎসব আয়োজন করছে।

দেবতাদের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ‘ওয়ানগালা উৎসব ’। ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মতো ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে শোনান গারো শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ বেতারের সালগিত্তাল এর প্রযোজক মাইকেল মৃত্যুঞ্জয় রেমা, এসপি প্রলয় চিসিম, ওয়ার্ল্ড ভিসন বাংলাদেশের ডিরেক্টর শৈবাল সাংমা, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সুভাষ জেংছাম, আশা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন, ময়মনসিংহ -১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের সাবেক এমপি জুয়েল আড়েং প্রমুখ।

উৎসবে উপস্থিত গারারো জানায়, ওয়ানগালা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ি জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার পরে নকমা (গ্রাম প্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন।

Back to top button