রাজধানীতে উদীচীর সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব চলছে
‘আমার লড়াই আমার গান, উঠবে জেগে সর্ব প্রাণ’ মর্মবাণীকে উপজীব্য করে গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ‘অষ্টম সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা’। তিন দিনব্যাপী আয়োজনের আজ উৎসবের তৃতীয় এবং শেষ দিন। প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে, উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের গানের অ্যালবাম। উৎসবে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান লেখক-শিল্পী-সংগ্রামী-সংস্কৃতিকর্মীরা যোগ দিয়েছেন।
২৮ মার্চ বিকেল চারটায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উৎসব উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। এতে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিজন সৈয়দ হাসান ইমাম এবং গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অনুসারী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। সত্যেন সেনের গানের অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও গোলাম মোহাম্মদ ইদু।
বুধবার (২৯ মার্চ) আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় গণসঙ্গীত বিষয়ক সেমিনার দিয়ে। ‘সুর-অসুরের দ্বন্দ্ব ও গণসঙ্গীত’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক, লেখক দীপঙ্কর গৌতম।
ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন অধ্যাপক মতলুব আলী, মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার, রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, প্রদীপ ঘোষ এবং অধ্যাপক সায়েম রানা। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
সেমিনার শেষে জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র ও স্মারক তুলে দেয়া হয়। উদীচী আয়োজিত জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে অঙ্কুর সরকার, দ্বিতীয় নমৃতা বর্মণ সেতু এবং তৃতীয় হয়েছে স্বীকৃতি রাহা। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে সৌরভ দাস সন্তু, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ওয়াজীহা তাসনীম এবং তৃতীয় হয়েছে মায়েশা সুলতানা ঊর্বি। ‘গ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সুব্রত দাস, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন অরুণ চন্দ্র বর্মণ এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছেন বিজয় চক্রবর্তী। এছাড়া, ‘ঘ’ অর্থাৎ দলীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উদীচী যশোর জেলা সংসদ, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে উদীচী সিলেট জেলা সংসদ এবং তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
সনদপত্র ও স্মারক বিতরণ শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় তিনটি একক ও একটি দলীয় মোট চার বিভাগের চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগী ও দল। এরপর মঞ্চে পরিবেশনা নিয়ে আসে আদিবাসী গানের দল ‘মাদল’। এরপর জনপ্রিয় গানের দল ‘জলের গান’ তাদের পরিবেশনা দিয়ে প্রাঙ্গণে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
এছাড়াও, গান পরিবেশন করেন এবারের উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত গণসঙ্গীত শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন পশ্চিমবঙ্গের গণসঙ্গীত শিল্পী অসীম গিরি।
আজ ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে অতিথি শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের গণসঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন থাকবে।