মতামত ও বিশ্লেষণ

রাঙ্গামাটি আসনে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করে ঊষাতন তালুকদারের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন এবং গণমুখী ও পরিবেশ-বান্ধব সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ মার্কায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটিবাসী আমার পক্ষে রায় দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জোরালো দাবিতে সোচ্চার থাকায় এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আপামর রাঙ্গামাটিবাসী পূর্বের মতো আমাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিতে এগিয়ে এসেছেন।

৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ২৯৯-পার্বত্য রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নজিরবিহীন কারচুপি, কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষ পোলিং এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া কিংবা ঢুকলেও পরে বের করে দেয়া, ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা, পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ও তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। সকাল ৮ টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আওয়ামীলীগের কর্মীরা প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় লংগদু উপজেলার ১৭টি কেন্দ্র, বাঘাইছড়ি উপজেলার ১৭টি ভোটকেন্দ্র, কাপ্তাই উপজেলার ৬টি কেন্দ্র, কাউখালী উপজেলার ১৩টি কেন্দ্র, নানিয়ারচর উপজেলার ২টি কেন্দ্র, বিলাইছড়ি উপজেলার ২টি কেন্দ্র এবং রাজস্থলী উপজেলার ১টি ভোটকেন্দ্র দখল করে আমার পোলিং এজেন্টদেরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। এ সময় রিটার্নীং অফিসার সহকারি রিটার্নীং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। ভোট গ্রহণকালে দুপুর ১২ টার দিকে এসব অনিয়ম ও কারচুপি বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদানে বাধা দান করে। প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাজস্থলী উপজেলার বলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া ভোটদানে বাধা প্রদান করে। রাইখালী ইউনিয়নের রাইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, চন্দ্রঘোনা কেপিএম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদানে বাধা প্রদান করা হয়। রাইখালী ইউনিয়নের ভালুক্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা বিদেশী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জাল ভোট প্রদান করে। যার অন্যতম উদাহরণ হলো বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৩% ও নারানগিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯২% ভোট কাস্ট করা হয়। এত উচ্চ হারে ভোট কাস্ট হওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার।

আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় লংগদু উপজেলার ভাসান্যা আদাম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল ও আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালেট বাক্স ছিনতাই করে জাল ভোট প্রদান করে। একই ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা পাহাড়ি ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দিয়ে জাল ভোট প্রদান করে। ফলে ভাঙ্গামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯১% ও খাগড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯% ভোট কাস্ট হয়েছে। গুলশাখালী, বগাচতর ও ভাসান্যাদাম ইউনিয়নের পাহাড়ি ভোটারদের উপর হামলায় ১০-১২ জন জুম্ম ভোটার মারাত্মক আহত হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত প্রতুল চাকমা, বাধিধন চাকমা ও শুভলক্ক চাকমাকে লংগদু সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

মারিশ্যাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পাহাড়ি ভোটারদের উপর হামলায় ৪০-৫০ জন জুম্ম আহত অবস্থায় মারিশ্যাচর মুসলিম ব্লক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আটকা পড়ে। অনেক জুম্ম পালিয়ে বন জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভাইবোনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এজেন্টদের মারধর ও ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয়। এতে দু’জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। মাইনীমুখ ইউনিয়নের হাজাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও আটারকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাতিন্দ্র লাল চাকমা-সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে সকাল থেকে ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
তাতিন্দ্র লাল চাকমা-সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের খেদারমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাবলাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান করে ও ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে ভোটারদের ফিরে যেতে বাধ্য করে এবং ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান করে। যার মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হলো রূপালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৭% ও কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৫% ভোট কাস্ট করা। এ সময় বাঘাইছড়ি উপজেলায় আওয়ামীলীগ, তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতাত্বাধীন সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলায় তুলাবান গ্রামের রূপায়ন চাকমাসহ ৫ জন ভোটার মারাত্মক আহত হন এবং তুলাবান নবরত্ম বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ আর্যকীর্তি স্থবিরকে তাতিন্দ্র লাল চাকমা-সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আহত করে। এ ঘটনার পরে ওই এলাকায় পাহাড়ি ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিজিবি সদস্যরা উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে কেবল পাহাড়ি ভোটারদেরকে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে।
নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বুড়িঘাট পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা প্রদান করে। নানিয়ারচর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা করে। এছাড়া নানিয়াচর পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বগাছড়ি পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা প্রদান ও ব্যাপকভাবে জাল ভোট দেয়া হয়।
কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের নিম্ন কচুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জুম্ম ভোটারদের ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা ছিড়ে ফেলে। ঘাগড়া ইউনিয়নের আইডিয়াল কেজি স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা জুম্ম ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে পথে বাধা প্রদান ও কলমপতি ইউনিয়নের পোয়া পাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে। ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ডাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান করে। কাউখালী উপজেলার অন্তত ১৩টি ভোটকেন্দ্র আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা দখল করে একচেটিয়া জাল ভোট প্রদান করে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের কিচিং আদাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইঞ্জিন চালিত বোটগুলো নিরাপত্তা বাহিনী ঘরে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার আসামবস্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা মার্কায় জাল ভোট দেওয়ার সময় সিংহ মার্কার পোলিং এজেন্টরা একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলে আওয়ামীলীগ নেতারা তাদের কর্মী দাবি করে পুলিশের কাছ থেকে আটককৃতকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের বড়নাছড়ি জোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ভূষণছড়া ইউনিয়নের ভূষণছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছোট হরিণা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদানে বাধা ও ভোটারদের উপর হামলা চালায়। এসব কেন্দ্রগুলো দখল করে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান করে।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাচন পরিচলনা কমিটি আহ্বায়ক বীরত্তম তঞ্চঙ্গ্যাকে নিরাপত্তা বাহিনীর জনৈক হাবিলদার কর্তৃক আটকে রাখা হয়। ফারুয়া ইউনিয়নের গোয়াাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এজেন্ট শম্ভু লাল তঞ্চঙ্গ্যা ওরফে সতেজ তঞ্চঙ্গ্যাকে ফারুয়া ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। ফারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জুম্ম ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা প্রদান করে। ফারুয়া ইউনিয়নের তারাছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিংহ মার্কার এজেন্ট মিলন তঞ্চঙ্গ্যাকে আনুমানিক দুপুর ১:০০ ঘটিকায় ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। বিলাইছড়ি ইউনিয়নের বিলাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের স্থানীয় ইউপি মেম্বার জয়ত্তন তঞ্চঙ্গ্যাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের কেংড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার সময় জনসংহতি সমিতি বিলাইছড়ি থানা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ১২:৩০ ঘটিকা থেকে বেলা ২:০০ ঘটিকা পর্যন্ত আটক করে রাখে। বিলাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের এজেন্ট প্রিয় রতন তঞ্চঙ্গ্যাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান করে।
রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের বাঙালহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকায় বাঙালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ঞোউমং মারমার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যাপকভাবে জাল ভোট প্রদান করে। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বরের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালহালিয়া বাজারে আমার পূর্ব-নির্ধারিত ও রিটানিং অফিসার থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত নির্বাচনী পথসভার স্থান আগে ভাগে দখল করে রাখে ও পথসভায় বাধা প্রদান করে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
২৮ ডিসেম্বর আলিক্ষ্যং ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাহিনীর বিলাইছড়ি উপজেলাধীন পাংখো পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সমীর কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, উক্ত কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট মঞ্জু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও নির্ভয় তঞ্চঙ্গ্যাকে অবৈধভাবে আটক করে। নানাভাবে হয়রানির পর বিলাইছড়ি সেনা জোন থেকে পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঐদিন তক্তানালা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা বিলাইছড়ি উপজেলার তক্তানালা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব রবিন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, নিলু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও ভরত কুমার তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ব্যাপকভাবে ভাংচুর ও তল্লাসী চালায়। ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ কাউখালী উপজেলার কচুখালী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কাউখালী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সোহেল চৌধুরীকে এবং কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম বাজার থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা প্রচারকর্মী বাচ্চু মারমাকে তুলে নিয়ে আসে এবং বহু জিজ্ঞাসাবাদের পর উৎকোচের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
শুধু তাই নয়, আওয়ামীলীগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ছত্রছায়ায় তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তত ৯টি ভোটকেন্দ্রের ভোটারদেরকে এবং লংগদু উপজেলার অন্তত ৪টি ভোটকেন্দ্রের ভোটারদেরকে মোবাইল নম্বর থেকে সিংহ মার্কায় ভোট না দেয়ার জন্য মৃত্যুর হুমকি দিয়ে স্থানীয় জনগণকে ফোন করে। এতে এলাকার জনমনে চরম ভীতি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রাতে সশস্ত্র সংস্কারপন্থীরা সুনীল চাকমা নামে বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থেকে আমার এক সমর্থককে প্রচারনার সময় অপহরণ করে। এ ধরনের হুমকি ও অপহরণ নির্বাচন আচরনবিধির সরাসরি লঙ্ঘন এবং সুষ্ঠু, ভয়ভীতি মুক্ত, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে হুমকি বিধায় এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের নিকট অভিযোগ দিয়েও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামীলীগ ও নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নানাভাবে মদদ দিয়ে থাকে। এলক্ষ্যে আওয়ামীলীগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ছত্রছায়ায় ২১ ডিসেম্বর তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় আনা হয়। এছাড়া সিংহ মার্কায় ভোটদানে বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দুরছড়ি ইউনিয়নের নলবন্যা ও বড় দুরছড়ি গ্রামের নিরীহ চারজন গ্রামবাসীর বাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়িতে ব্যাপক তল্লাসী চালায় ও জিনিসপত্র তছনছ করে। ফলে এলাকার পাহাড়ি ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ব্যাপক কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদের উপর হামলা ও কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া কিংবা ঢুকলেও পরে বের করে দেয়া, ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা, পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধাদানের মধ্য দিয়ে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে রাঙ্গামাটি জেলাবাসীর সংবিধান-স্বীকৃত ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটা রাঙ্গামাটি জেলাবাসী কখনোই গ্রহণ করবে না। তাই দেশের গণতান্ত্রিক শাসনের বৃহত্তর স্বার্থে এবং রাঙ্গামাটি জেলাবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার জোরালো অভিমত হচ্ছে যে,
* ২৯৯-পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখান করছি।
* নির্বাচনকালীন আটককৃতদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।
২৯৯-পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে দায়ি থাকবে।

পরিশেষে নির্বাচন চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনী, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপ এবং তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা, আটক, হুমকি, অপহরণ ও বাধা প্রদান সত্ত্বেও সিংহ মার্কায় লক্ষাধিক ভোটার আমাকে ভোট দেয়ায় এবং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কারচুপির কারণে যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি তথা রাঙ্গামাটিবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

…………………………………….
ঊষাতন তালুকদার
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী (সিংহ মার্কা)
২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

Back to top button