রাঙ্গামাটিতে ৬৯ গ্রামবাসী ও জেএসএস সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, নিরীহ ১৯ জনকে গ্রেফতার, ১২ জনকে হয়রানি
সম্প্রতি নভেম্বর-ডিসেম্বরে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবং সেনা-পুলিশের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গভীর রাতে তিন উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী অভিযান পরিচালনার নামে নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ঘরবাড়ি তল্লাসী, মারধর ও গ্রেফতার করে চলেছে। তিন উপজেলায় ৬৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর থেকে বিগত পাঁচ দিনে বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ নিরীহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ এবং ১২ জন মারপিট ও হয়রানি করা হয়। এতে করে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ কে বা কারা জুরাছড়িতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা অরবিন্দু চাকমাকে হত্যা ও বিলাইছড়িতে রাসেল মারমাকে মারধর, এবং ৭ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি শহরে মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে মারধর করে। কিন্তু এসব ঘটনায় জনসংহতি সমিতিকে দায়ি করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, পুলিশ ও সেনাবাহিনী অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং নিরীহ গ্রামবাসী ও জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দর্শক পূর্তি উপলক্ষ্যে জনসংহতি সমিতি ও দেশের নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন, বিভিন্ন আলোচনা সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বর্তমান সরকারের ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আপামর মানুষ সরকারের উপর চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে। জনমানুষের এই অসন্তোষকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সেনা-পুলিশের যোগসাজশে সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনায় জনসংহতি সমিতিকে জড়িত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে কোণঠাসা করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করা।
বিলাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা
গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য অমৃত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সাথে কে বা কারার মারামারি ঘটনায় জনসংহতি সমিতি ও সহযোগী সংগঠনের সদস্য ও নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীদের জড়িত করে অমৃত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা কর্তৃক জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত ১৮ জনের মধ্যে জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সহ সভাপতি চন্দ্র লাল চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক টিপু চাকমা ও সদস্য জ্ঞান রঞ্জন তালুকদার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিলাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি বীর উত্তম চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত চাকমা প্রমুখসহ ভাড়ায় চালিত ৫ জন নিরীহ মোটর সাইকেল চালকও রয়েছে। উক্ত মামলায় অভিযুক্ত জনসংহতি সমিতির সদস্য এবং নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীদের ধরতে বিলাইছড়ি সেনা জোনের সেনারা বিলাইছড়ির বিভিন্ন গ্রামে হয়রানিমূলক তল্লাসী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
বিলাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা, ৭ জনকে গ্রেপ্তার
গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাম চরণ মারমা ওরফে রাসেল (৫৬) কর্তৃক বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি শুভমঙ্গল চাকমা, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্যামা চাকমা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক অমৃতসেন তঞ্চঙ্গ্যা এবং জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যাসহ জনসংহতি সমিতি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। উল্লেখ্য যে, গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৭, বিকেলের দিকে, বিলাইছড়ি উপজেলার তিলিক্যাছড়ি গ্রামে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি কর্তৃক রাসেল মারমার উপর শারীরিকভাবে হামলা করা হয়। উক্ত ঘটনায় সাথে জনসংহতি সমিতির সদস্যদের জড়িত করে উক্ত মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়।
এ ঘটনার পর গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বিলাইছড়ি উপজেলার দীঘলছড়ি সেনা জোনের ১৩ বেঙ্গলের একদল সেনাসদস্য উপজেলার দীঘোলছড়ি ও কেরংছড়ি গ্রামে এক অভিযান চালিয়ে নিম্নোক্ত ৪ ব্যক্তিকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন-
১. সুমন চাকমা (২৮), পীং-অমরেন্দ্র লাল চাকমা, ঠিকানা- দীঘলছড়ি গ্রাম;
২. বুদ্ধ বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা (২৫), পীং- লাম্বাহুলা তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা- দীঘলছড়ি গ্রাম;
৩. বিটোমনি চাকমা, পীং- নলিনী চাকমা, ঠিকানা- কেরংছড়ি গ্রাম;
৪. সুনীল কান্তি চাকমা, পীং- কালিমন চাকমা, কেরংছড়ি গ্রাম।
অপরদিকে, উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তক্তানালা সেনাক্যাম্পের সুবেদার মিজান এর নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য তক্তানালা গ্রামে তল্লাশী অভিযান চালায় এবং এক ফারুয়া ইউনিয়নের মহিলা সদস্য রান্যাবি চাকমা ও তাঁর স্বামীসহ নিরীহ তিন জুম্মকে আটক করে। সেনা সদস্যরা প্রায় সারা রাত ধরে রান্যাবি ও তাঁর স্বামীকে তাদের সাথে তল্লাশী অভিযানে ঘুরতে বাধ্য করে। পরে স্বামী-স্ত্রী ছেড়ে দিলেও নিম্নোক্ত চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
৫. চন্দ্রা তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮), স্থানীয় এক দোকানদার।
অপরদিকে, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ভোর সকালে, সেনা ও পুলিশের একটি দল রাঙ্গামাটি শহরস্থ আসামবস্তি এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভমঙ্গল চাকমা ও তাঁর পুত্রকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের সময় বাউন্ডারীর গেইট ভেঙ্গে পুলিশরা প্রবেশ করে এবং বাউন্ডারীতে ঢুকে একনাগারে ঘরের চারদিকে জানালা-দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। সশস্ত্র সামরিক অভিযান পরিচালনার মতো চারদিকে রাইফেল তাক করে এ সময় এক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শুভ মঙ্গল চাকমার স্ত্রী দরজা খুলে দিলে দরজা খুলতে না খুলতে তাঁকে ঠেলে পুলিশ সমস্যরা সরাসরি তাঁদের বেডরুমে ঢুকে পড়ে এবং শুভমঙ্গল চাকমাকে আটকিয়ে অশালীনভাবে পাকঘরসহ ঘরের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাসী চালাতে থাকে। গ্রেফতারের কোন কারণ না জানিয়ে কেবল ‘থানা যেতে হবে’ বলে পুলিশ সদস্যরা শুভমঙ্গল চাকমাকে নির্দেশ দেয়। তাঁর সাথে তাঁর ছেলেকেও যেতে হবে বলে পুলিশরা জানায়। এসময় শুভমঙ্গল চাকমাকে গরম কাপড় পরতেও পুলিশ সদস্যরা সময় দিচ্ছিল না। ৩০/৪০ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনীও এই গ্রেফতারে অংশ নেয় বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ৬. শুভমঙ্গল চাকমা (৫৮), চেয়ারম্যান, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ও সভাপতি, জনসংহতি সমিতি, বিলাইছড়ি থানা কমিটি।
৭. সমর বিজয় চাকমা (২৫), পীং-শুভমঙ্গল চাকমা।
বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আটককৃত উল্লেখিত ৭ জনকে ৮ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এরপর যথাক্রমে ১০ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর পর পর দুইবার পুলিশ আদালতে আটকৃকতদের ৫ দিনের রিমান্ড দাবি করে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর রিমান্ডের উপর শুনানীর দিন ধার্য হয় বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ৮ ডিসেম্বর ২০১৭, দিবাগত রাত আনুমানিক ২:৩০ টায়, সুবেদার মিজান এর নেতৃত্বে তক্তানালা সেনাক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য ফারুয়া ইউনিয়নের তক্তানালা এলাকার রয়াপাড়া গ্রামে তল্লাশী অভিযান চালিয়ে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের আটক করে-
১. পুতুল তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮), পীং-আঙ্কারা তঞ্চঙ্গ্যা;
২. অমরধন তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), পীং-মুক্তধন তঞ্চঙ্গ্যা;
৩. সিদ্দিকা তঞ্চঙ্গ্যা (৩৬), পীং-বিয়োং তঞ্চঙ্গ্যা;
৪. বোধিচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, পী-মঘাচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা;
৫. জনচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫), পীং-অজ্ঞাত;
৬. বালিক চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (৪২), পীং-বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা।
তাদেরকে সেনা সদস্যরা বিলাইছড়ি থানায় হস্তান্তর করে। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় পুলিশ বিকালে তাদেরকে বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অনিল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার জিম্মায় ছেড়ে দেয়। ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ দিবাগত রাত ১২ টায় গাছকাবাছড়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন কেঙড়াছড়ি ইউনিয়নের ইজাছড়ির ঢেবাছড়িতে তল্লাসী অভিযান চালিয়ে জনসংহতি সমিতির ইজাছড়ি গ্রাম কমিটির সভাপতি কমল চাকমা (৩৭) পিতা চিক্ক চাকমাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
রাঙ্গামাটিতে জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নিরীহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার
গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ রাত আনুমানিক ১:০০ টায় অজ্ঞাতপরিচয় একদল ব্যক্তি রাঙ্গামাটি শহরের ভালেদি এলাকায় রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে জখম করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুবর্ণ চাকমা ও রাঙ্গামাটি থানা কমিটির সহ সভাপতি অংকুর চাকমাসহ ২১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৮ ডিসেম্বর ২০১৭, দিবাগত মধ্যরাত ১২:৩০ টার দিকে পুলিশ রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদি ও রাঙাপানি এলাকা থেকে ৭ নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-
১. মঙ্গল মনি চাকমা (২৬), পীং-মৃত পুষ্প চন্দ্র চাকমা, অটোরিক্সা চালক, ঠিকানা- ভেদভেদি;
২. রিকন চাকমা মোম্বু (২৮), পীং-মন্টি কুমার চাকমা, অটোরিক্সা চালক, ঠিকানা- ভেদভেদি;
৩. সাধন চাকমা (২৮), পীং-কালাবিজা চাকমা, দিনমজুর, ঠিকানা- ভেদভেদি;
৪. কালাঞ্জিত চাকমা (২২), পীং-মৃত কৃষ্ণ মঙ্গল চাকমা, সেলুন কর্মী, ঠিকানা- ভেদভেদি;
৫. রূপম চাকমা (২৮), পীং-সাধন চন্দ্র চাকমা, ছাত্র, ঠিকানা- ভেদভেদি;
৬. বাবু চাকমা এমারসন (২৭), পীং-গুলোমনি চাকমা, ঠিকানা- রাঙাপানি।
৭. রিটন চাকমা (২৯), পীং-মৃত উমাচান চাকমা, ঠিকানা- রাঙাপানি;
আটককৃত উল্লেখিত ৭ জনকে ৮ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এরপর যথাক্রমে ১০ ডিসেম্বর পুলিশ আদালতে আটকৃকতদের ৫ দিনের রিমান্ড দাবি করে। ১২ ডিসেম্বর এক শুনানীতে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজবনবিহার এলাকা থেকে পুলিশ তিন যুবককে আটক করে বলে জানা যায়। তবে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়নি। তাদেরকে পরে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
জুরাছড়িতে জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নিরীহ ৫ জনকে গ্রেফতার
গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ জুরাছড়ি থানার এসআই মো: মঈন উদ্দিন কর্তৃক নিরীহ গ্রামবাসী এবং জনসংহতি সমিতি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৯ সদস্য ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে জুরাছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন-
১. চিত্র কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, যুব সমিতির জুরাছড়ি ইউনিয়ন শাখা;
২. মায়াচান চাকমা, সভাপতি, জনসংহতি সমিতির জুরাছড়ি থানা শাখা;
৩. সুমিত চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, জনসংহতি সমিতির জুরাছড়ি থানা শাখা;
৪. পলাশ চাকমা (৩৫), সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, জুরাছড়ি থানা শাখা;
৫. মণিষ চাকমা (৩৮), সাংগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, জুরাছড়ি থানা শাখা;
৬. রিপন চাকমা বম, সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, জুরাছড়ি থানা শাখা;
৭. পনো চাকমা (৩২), সাং মধ্য বালুখালী;
৮. গাজী চাকমা (৪২)
৯. বুজ্যা চাকমা (৫৫)।
গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ সন্ধ্যায় জুরাছড়ি উপজেলা সদরের ঢেবাছড়া মগবাজার এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় একদল ব্যক্তি কর্তৃক অরবিন্দু চাকমাকে হত্যার ঘটনায় নিরীহ গ্রামবাসী ও জনসংহতি সমিতির উল্লেখিত সদস্য দায়ী করে উক্ত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য যে, এধরনের ঘটনায় কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়ের না করলে পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। কিন্তু বিধি-বহির্ভুতভাবে পুলিশ সরাসরি জনসংহতি সমিতির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ করে উক্ত মামলা দায়ের করে, যা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত।
গত ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ সকাল ১১:৩০ হতে দুপুর ১:০০ টার মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলা সদর এলাকা থেকে জুরাছড়ি থানার পুলিশ ও জুরাছড়ি সেনা জোনের সেনা সদস্যরা জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ আরও ৫ নিরীহ জুম্মকে আটক করেছে। পুলিশ কর্তৃক আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন-
১. হেমন্ত চাকমা (২২), পীং-রনজিত কার্বারী, সাং-বরকলক, দুমদুম্যা ইউনিয়ন;
২. রবিধন চাকমা (২১), পীং-অমৃত লাল চাকমা, সাং-উপজেলা সদর, জুরাছড়ি ইউনিয়ন;
৩. মানস চাকমা (২৩), পীং-লক্ষীরাম চাকমা, সাং-ধামাই পাড়া, বনযোগীছড়া ইউনিয়ন;
৪. লক্ষ্মীলাল চাকমা (৪৪), পীং-অজ্ঞাত, সাং-দুমদুম্যা ইউনিয়ন;
৫. উত্তম কুমার চাকমা (৪৫) পীং-নিরঞ্জন চাকমা, সাং- চৌমুহনী, বনযোগীছড়া ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, লক্ষীলাল চাকমা দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের একজন নির্বাচিত সদস্য। প্রথমোক্ত তিন ব্যক্তি ঐ সময় প্রয়াত জনৈক তড়িৎ কান্তি চাকমার সাপ্তাহিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে লাকড়ি বহন করছিল। অপরদিকে সেনাসদস্যরা উত্তম কুমার চাকমা নামে আরেক ব্যক্তিকে আটক করে। উল্লেখ্য, উত্তম কুমার চাকমা জনসংহতি সমিতির বনযোগীছড়া ইউনিয়ন কমিটির সদস্য।
গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলায় জুরাছড়ি সেনা জোনের একদল সেনাসদস্য উপজেলা সদরস্থ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের এক বাড়িসহ ৫ নিরীহ জুম্ম বাড়িতে তল্লাশী চালিয়েছে। জানা গেছে, সেনা সদস্যরা প্রথমে দিবাগত রাত ১:৩০টার দিকে ৪নং দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তিরাজ চাকমার জুরাছড়ি উপজেলা সদরস্থ ভাড়াতে বাড়িতে তল্লাশী চালায়। এসময় চেয়ারম্যান বাড়িতে ছিলেন না। এরপর সেনাসদস্যরা ভোর ৫:০০ টায় চকপতিঘাট এলাকায় পরপর মনিষ তালুকদার (৩০), পীং-অনিল তালুকদার, রূপম চাকমা (৩৭), পীং-বিনয় কুমার চাকমা, খোকন চাকমা (৩৮), পীং-অবিন চাকমা ও সুভাষ জ্যোতি চাকমা (২৮), পীং-তরুণ মোহন চাকমা’র বাড়িতে তল্লাশী চালায় এবং জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। উল্লেখ্য, মনিষ তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জুরাছড়ি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
কাপ্তাই ও রাজস্থালীতে আওয়ামীলীগ কর্তৃক জনসংহতি সমিতির ৩ সদস্যকে হামলা
গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ জুরাছড়ির অরবিন্দু চাকমা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হরতাল চলাকালে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে জনসংহতি সমিতির ২ সদস্যের উপর হামলা চালায়। সকাল আনুমানিক ১১:০০ টায় স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মিজান এর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একদল দুর্বৃত্ত জনসংহতি সমিতির রাইখালী ইউনিয়ন কমিটির সদস্য উষামং মারমাকে (৩৮) ডংনালা গ্রাম থেকে অপহরণ করে মারধর করতে করতে পার্শ্ববর্তী বাঙালি অধ্যুষিত কোদালা গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। পরে দুপুর ১:০০ টার দিকে স্থানীয় জনগণ মারাত্মক আহত অবস্থায় উষামং মারমাকে কোদালা গ্রাম থেকে উদ্ধার করে এবং চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। উষামং মারমা মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
অপরদিকে দুপুর আনুমানিক ১২:৩০ টায় আওয়ামীলীগের কর্মীরা কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কংহ্লা অং মারমা (৪০)-কে রাইখালী বাজারে শারীরিকভাবে হামলা চালায়। এসময় স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় কংহ্লা অং মারমাকে উদ্ধার করে এবং এরপর বরইছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। কংহ্লা অং মারমার হাতে ও পায়ে মারাত্মক জখম হয়।
৮ ডিসেম্বর ২০১৭ মধ্যরাত আনুমানিক ১২:১৫ টায় রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাল হালিয়া এলাকার যৌথ খামার গ্রামে জনসংহতি সমিতির বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন কমিটির দপ্তর সম্পাদক ক্যসাং থোয়াই মারমা (৩৮) আওয়ামীলীগের একদল দুর্বৃত্ত কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছেন। তার মাথায় ও কানে মারাত্মক জখমের সৃষ্টি হয়। তাকে বরইছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।