রাঙ্গামাটিতে অভিযানের নামে নিরীহ মানুষের হয়রানি কাম্য নয়: ঊষাতন তালুকদার
বন্দর প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটিতে অভিযানের নামে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নিরীহ মানুষের হয়রানি কাম্য নয়। প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ুক তা সবাই চায়। কিন্তু অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করলে পারষ্পরিক দূরত্ব বাড়বে। এতে করে সমস্যার কোন সমাধান হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটির সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামে কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বেলুন উড়িয়ে ফোরামের অনুষ্ঠান মালার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। “শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম জোরদার করি,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর আন্দোলন গড়ে তুলি” শ্লোগানকে নিয়ে ফোরামের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ব্যারিস্টার কলেজ মাঠে সমাবেশ,কাউন্সিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেলা ২.৩০ ঘটিকায় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালি ব্যারিস্টার কলেজ মাঠ থেকে ইপিজেড মোড় ঘুরে আবার ব্যারিস্টার কলেজ মাঠে এসে শেষ হয়।
সুমন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরৎ জ্যোতি চাকমা। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জাতীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধূরী,চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, লেখক আমান মাসুদ,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা,চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি বাবলু চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের অনিল বিকাশ চাকমা,দিশান তনচংগ্যা,রিটেন চাকমা প্রমুখ।
প্রধান অতিথি বলেন, দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বকে মেনেই চুক্তি করা হয়েছে। সরকার চুক্তির ৪৮ ধারা বাস্তবায়নের কথা বলে থাকেন। এটা চুক্তি নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ধরি ৫০টি ধারাও বাস্তবায়িত হলো কিন্তু আসল ধারা গুলোতো বাস্তবায়ন করছেন না। চুক্তিতে পাহাড়ীদের শাসনতান্ত্রিক অংশিধারিত্বের বিধান রাখা হয়েছে, দিয়েছেন কি? আমরা তো শাসনতান্ত্রিক অংশিধারিত্ব চাই। কিন্তু তা না করে বারে বারে আমাদেরকে দূরে রাখছেন। আপনারা কি জানেন আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে তোয়াক্কা না করে ডিসি (ডেপটি কমিশনার) এবং এসপি’র অঙ্গুলি হেলনে পাহাড়ে প্রশাসন চলে? তাহলে চুক্তিতে বিশেষ শাসনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন? তিনি বলেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপদ জায়গা হচ্ছেনা। ভূমি বেদখল ,মন্দির ভাংচুর,ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। সবাই চুপ। দেখার মত কেউ নেই। রাঙ্গামাটির সাংসদ আদিবাসী শ্রকিমদের উদ্দেশ্যে বলেন,কর্ম সংস্থানের অধিকার, মজুরির অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিয়ে স্বাধীন দেশে বেঁচে থাকার অধিকার সকলের রয়েছে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রামের পথ দেখিয়েছেন। সংগঠন করে দিয়েছেন। এই সংগঠনে থেকে অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
সমাবেশের প্রধান বক্তা শরৎ জ্যোতি চাকমা বলেন,জনসংহতি সমিতি আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম করছে। জনসংহতি সমিতি বিরোধী অপশক্তি ও দলচ্যূত অংশের কথায় কান না দিয়ে সন্তু লারমা ও ঊষাতন তালুকদারের নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির যে সংগ্রাম তাতে আপনারা সামিল হবেন। তিনি বলেন, চুক্তি বিরোধী ও তথাকথিত সংস্কারের নামে যারা দলচ্যুত হয়,উপদল গঠন করে তা ভন্ডামি ছাড়া কিছুই না। এই ভন্ডদের কথায় বিভ্রান্ত হবেননা। জনসংহতি সমিতির নীতি আদর্শ সঠিক বিধায় ’৭২ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত লড়াই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। লেখক আমান মাসুদ বলেন, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সমতলে আওয়ামীলীগ এবং পাহাড়ে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। পাহাড়ে জেএসএস ব্যতিত কেউ পাহাড়ীদের নিরাপত্তা দিতে পারবেনা।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনসংহতি সমিতির পতাকা তলে সামিল হয়ে অধিকতর আন্দোলনে শামিল হতে যুব সমাজের প্রতি আহবান জানান।
সমাবেশ শেষে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে সুমন চাকমাকে সভাপতি, দিশান তনচংগ্যাকে সাধারণ সম্পাদক এবং পূর্ণ বিকাশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জনসংহতি সমিতির চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরৎ জ্যোতি চাকমা।