রাইখালীতে জনসংহতি সমিতি নেতার বাড়ি তল্লাসীঃ হয়রানির অভিযোগ
আজ ১লা জুন ২০১৭ ভোর রাতে ওয়াগ্গা বিজিবি জোন ও ডংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে ১৯ ব্যাটেলিয়নের একদল বিজিবি সদস্য রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি মুখের একনম্বর পাড়ায় অবস্থিত জনসংহতি সমিতির রাইখালী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আরেইসে মারমার (৫৫) বাড়ী তল্লাসী চালায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আরেইসে মারমার স্ত্রী মাথুইচিং মারমাকে হাতকড়া পরিয়ে বেঁধে রাখে এবং তাঁর মেয়ে উনুসিং মারমাকে চড়-থাপ্পড় মারে বলে জানা যায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, সেদিন রাত ১:৩০ টায় বিজিবি সদস্যরা আরেইসে মারমার বাড়ী ঘেরাও করে এবং আরেইসে মারমার পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে তুলে বাড়ী তল্লাসী শুরু করে। ভোর ৪:০০ টা পর্যন্ত বিজিবির এ তল্লাসী চলে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আরেইসে মারমাকে খুঁজতে থাকে। উল্লেখ্য যে, আরেইসে মারমা এ সময় বাড়ীতে ছিলেন না। বিজিবি সদস্যরা তাদের সঙ্গে নেয়া ব্যাগে ঢুকানো বিস্ফোরক দ্রব্য আরেইসে মারমার বাড়ীতে লুকিয়ে রাখার সময় আরেইসে মারমা মেয়ে উনুসিং মারমা দেখতে পান এবং সাথে সাথে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন যে, “এগুলো আপনারা সঙ্গে এনেছেন। এগুলো আমাদের বাড়ীতে ছিল না।” বিস্ফোরক দ্রব্য পুঁতে রাখতে ব্যর্থ হয়ে এ সময় এক বিজিবি সদস্য উনুসিং মারমাকে সজোরে চড় মারে।
তল্লাসীর একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা আরেইসে মারমার স্ত্রী মাথুইচিং মারমাকে হাতকড়া পরিয়ে বেঁধে রাখে। আরেইসে মারমার ছেলে ও পুত্রবধুর রুমে ঢুকে বিজিবি সদস্যরা তল্লাসী চালায়। বাড়ীর কাপড়-চোপড় ও বাড়ীর জিনিষপত্র তছনছ করে দেয়। বিজিবি সদস্যরা তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়। এ সময় ‘অস্ত্র কোথায় আছে’ তা জিজ্ঞাসা করে এবং তা বের করে দিতে পরিবারের সদস্যদের উপর বিজিবি সদস্যরা চাপ দিতে থাকে। দেখিয়ে না দিলে তাদেরকে আটক করে চালান দেয়া হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। পরিবারের সদস্যদের ঘরের বাইরে রেখে বিজিবি সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করে। ভোর ৪:০০ টায় চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ঘরে ঢুকতে এবং ঘুমাতে দেয়নি। সবশেষে ‘বিজিবি সদস্যরা কিছুই করেনি’ লিখে উনুসিং মারমা থেকে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে বিজিবি সদস্যরা চলে যায়।
এদিকে, জনসংহতি সমিতির রাইখালী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আরেইসে মারমার বাড়ীতে বিজিবি সদস্যদের এহেন অবৈধ তল্লাসী, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিস্ফোরক দ্রব্য পুঁতে রাখার অপচেষ্টা, মারধর ও হয়রানি ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ও অবৈধ তল্লাসী বন্ধ করা দাবি জানিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৩১ মার্চ ২০১৭ ভোরে ওয়াগ্গা বিজিবি জোনের একদল সদস্য জনসংহতি সমিতির রাইখালী ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি ও রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার থোয়াই শৈনু মারমা এবং তার ছেলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাপ্তাই থানা কমিটির সভাপতি ক্যহিংহ্লা মারমাকে বিস্ফোরক দ্রব্য গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার করে। তাদেরকে রাঙ্গামাটি সেনা জোন নিয়ে অমানষিকভাবে মারধর করে। বিজিবি ও সেনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে জোনে ডেকে নিয়ে তাদের সামনে শেখানো স্বীকারোক্তি আওড়াতে গুরুতর আহত পিতা-পুত্রকে বাধ্য করে। সাংবাদিকদের সামনে শেখানো স্বীকারোক্তি ঠিকমত বলতে না পারলে অন্য রুমে নিয়ে আবার মারধর করার পর কয়েকবার সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে এনে শেখানো বুলি আওড়াতে বাধ্য করে।
সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবির যত্রতত্র তল্লাসী, জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ আন্দোলনরত জুম্মদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো দায়ের, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে অবৈধভাবে গ্রেফতার ও জেলে প্রেরণ, শারীরিক নির্যাতন, হয়রানি ইত্যাদি জোরদার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ন্যায্য আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে পরিচিহ্নিত করা, আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করা, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার হীনউদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতায় বিজিবি-সেনাবাহিনী-পুলিশ এভাবে জনসংহতি সমিতি ও সমিতির সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন করা হচ্ছে।