অন্যান্য

রপ্তানিমুখী গ্যাস চুক্তি বাতিলের দাবীতে তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির বিক্ষোভ

দুর্নীতি, লুটপাট আর ধ্বংসযজ্ঞের গ্যাস রপ্তানিমুখী পিএসসি-২০১৯ ও সুন্দরবনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির বিকল্প মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ স¤পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আজ বিকাল ৫টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০০১ সালে ‘গ্যাসের উপর ভাসছে দেশ’_ একথা বলে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রপ্তানির চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০১২ সালে সমুদ্রের গ্যাস রপ্তানির জন্য করা চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের ফলে গ্যাস রপ্তানির এই অপচেষ্টা সফল হয়নি। বর্তমান সময়ে গ্যাস সংকটের কথা বলে ঊচ্চ দামে তরল গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। অথচ সম্প্রতি সমুদ্রের গ্যাস রপ্তানির বিধান রেখে প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০১৯ পাশ করা হয়েছে। সরকার তার অবস্থা থেকে সরে না এলে এই গণস্বার্থবিরোধী পিএসসি বাস্তবায়নের অপচেষ্টা আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রতিহত করা হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রুহিন হোসেন প্রিন্স, আকবর খান, নজরুল ইসলাম। সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতন, জহিরুল ইসলাম, আবুল হোসেন রুবেল, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, বজলুর রশীদ ফিরোজ, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, আব্দুস সাত্তার, বহ্নি শিখা জামালী, মেসলেহ উদ্দিন, জুলফিকার আলী, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, মমিনুর রহমান, শহিদুল ইসলাম সবুজ, বেলাল চৌধুরী, মহিনুদ্দিন চৌধুরী, শামছুল আলম, সুবল সরকার, খোরশেদ আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান সফল করতে গেলে এ পর্যন্ত তেল-গ্যাস নিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছে তা পর্যালোচনা করতে হবে। জ্বালানি খাতের দুর্নীতি হলো বড় দুর্নীতি। এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের গ্যাস সমস্যা সমাধানে আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে স্থল ও সমুদ্র বক্ষের গ্যাস উত্তোলনের দাবি করে আসছিলাম। সরকার সে দিকে নজর না দিয়ে আগের চুক্তিগুলোর তুলনায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য গ্যাস রপ্তানিসহ বেশি সুযোগ দিয়ে নতুন চুক্তি করেছে। তিনি এই চুক্তিকে গণবিরোধী আখ্যায়িত করে বলেন, কমিশনভোগী ও দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে এই চুক্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করতে পারলে ঐ গ্যাস তারা রপ্তানি করবে। চুক্তিতে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে আমাদের গ্যাস কেনার যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাতে ঐ গ্যাসের দাম বর্তমানে আমদানিকৃত এলএনজি থেকেও বেশি পড়বে। তিনি বলেন, গ্যাস পাওয়া গেলে বিদেশি কোম্পানিগুলো তার মুনাফার স্বার্থে প্রয়োজনের থেকে বেশি গ্যাস উত্তোলন করে রপ্তানি নিশ্চিত করবে। আর আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়িয়ে, শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে প্রয়োজনে সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে গ্যাস তুলতে পারলে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস তুলে দেশের স্বার্থেই লাগাতে পারব। আমরা জ্বালানি খাতে বিকল্প যে পরিকল্পনা তুলে ধরেছি তা বাস্তবায়ন করলে দেশের মানুষের জন্য কম খরচে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিশ্চিত করা যাবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকার জ্বালানি খাতে একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী, পরিবেশ বিনষ্টকারী প্রকল্প গ্রহণ করে চলেছে। বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদন না করেই বসে থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হচ্ছে। যা এক সময় আমাদের জাতীয় স্বার্থের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, সরকার তার গণবিরোধী অবস্থান থেকে সরে না এলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। এজন্য তিনি সচেতন জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।

৭ ডিসেম্বর জাতীয় কনভেনশন, অক্টোবর-নভেম্বর বিভাগীয় সভা-সমাবেশ
সমাবেশ থেকে, রপ্তানিমুখী গ্যাস চুক্তি, সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প ও জ্বালানি খাতের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড বাতিলের দাবিতে আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসব্যাপী বিভাগসমূহে সভা-সমাবেশ এবং ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় কনভেনশনের ঘোষণা দেয়া হয়।
বৃষ্টির মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

Back to top button