মুল্লুকে চল আন্দোলন স্মরণে আলোচনা সভা, সঙ্গীত এবং নাটক
চা শ্রমিকদের মুল্লুকে চল আন্দোলন এবং চা শ্রমিক হত্যা দিবস স্মরণে গতকাল ২১শে মে সিলেট হবিগঞ্জের চুনারুঘাট দেউন্দি চা বাগানে আলোচনা সভা, সঙ্গীত এবং নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুল্লুকে চল আন্দোলনে নিহত সকল চা শ্রমিকের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এতে স্থানীয় চা শ্রমিকদের সাথে ঢাকা থেকে আগত বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী কফিল আহমেদ এবং অন্যান্যরা অংশগ্রহন করে।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর স্থানীয় শিল্পীরা চা শ্রমিকদের গান পরিবেশন করে। তাদের গানে ১৯২১ সালের মুল্লুকে চল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ফুটে উঠে, এবং বর্তমান সময়েরও নানান অনিয়ম জোর জুলুমের কথা উঠে আসে।
স্থানীয় শিল্পিদের পর মঞ্চে আসেন ঢাকা থেকে আগত সর্বপ্রাণ সাংকৃতিক শক্তির শিল্পী কফিল আহমেদ, আদিবাসী ব্যান্ড মাদল এবং চিৎকার। সর্বপ্রাণ সাংকৃতিক শক্তির যৌথ পরিবেশনায় গান করেন শিল্পী কফিল আহমেদ, পদ্ম এবং রুনু।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় অংশ নেন চা শ্রমিকদের বিভিন্ন বাগানের বাগান সভাপতিরা। এসময় বিভিন্ন বাগানের নেতৃবৃন্দ এই ২০ মে মুল্লুকে চল আন্দোলনকে রাস্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবী জানান।
এরপর শুরু হয় স্থানীয় চা শ্রমিকদের নাট্য সংগঠন প্রতীকের পরিবেশনা। ১৯২১ সালের মুল্লুকে চল আন্দোলনের উপর নির্মিত নাটক ‘নিজভূমে পরবাসী’। নাটকের রচনা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন চা শ্রমিকদের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রতীক থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুনীল বিশ্বাস।
উল্যেখ্য, ব্রিটিশদের মিথ্যা প্রলোভনে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা (১৮৩৪-৩৫ সালে)চা-শ্রমিকরা ব্রিটিশ চা-বাগান মালিক কর্তৃক অত্যাচার-নিপীড়ন,অবহেলা-নির্যাতন সইতে না পেরে ১৯২১ সালের এই দিনে নিজ মুল্লুকে (আবাসভূমিতে) ফিরে যাবার জন্য “মুল্লুকে চলো আন্দোলন” সংগঠিত করেছিল। যেহেতু তাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা ছিল না তাই পায়ে হেঁটেই সিলেট থেকে চাঁদপুরের মেঘনা ঘাঁটে পর্যন্ত আসে। এখানে ব্রিটিশরা তাদেরকে বাঁধা দেয়। বাঁধা অতিক্রম করে চা-শ্রমিকরা মেঘনা নদী পার হয়ে নিজের মুল্লুকে যেতে চাইলে এ ব্রিটিশ গুর্খা বাহিনী তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং হাজার হাজার চা-শ্রমিককে পেট কেটে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে। চা-শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয় মেঘনা নদীর পানি। চা-শ্রমিকদের রক্তেমাখা এই ইতিহাসকে স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর পালিত হয় ২০ মে পালিত হয় “চা-শ্রমিক হত্যা দিবস”।