জাতীয়

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কেবল একটি নাম নয় একটি চেতনাঃ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কেবল একটি নাম নয় একটি চেতনা। তিনি পাহাড়ের জুম্ম জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে আপোসহীনভাবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে গেছেন। আজ ১০ই নভেম্বর ২০১৭, বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় এক স্মরণসভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপড় চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার চেতনায় আদর্শিত হওয়ার বিকল্প নেই।

বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় এবং আহ্বায়ক কবি মুহম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাগাছাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, জাসদ, বাসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, আন্তর্জাতিক রবিদাস উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল চৌধুরী রুকন, শোক প্রস্তাব উপস্থাপনের সময় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে ২ মিনিটি নিরবতা পালন করা হয় । স্মরণসভায় সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন ইলোরা আজমী। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ মানবাধিকারকর্মী, কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীগণ।

স্মরণসভায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৌরভ শিকদার বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার চেতনা এবং আদর্শ ছিল অত্যন্ত কঠোর। যে স্বপ্ন প্রয়াত নেতা দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাই বাঙালী এবং আদিবাসী সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় কমিটির সদস্য রোকেয়া কবীর তার বক্তব্যে বলেন, কৃষক, শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের জন্যও প্রয়াত নেতার কন্ঠ সোচ্চার ছিল। তিনিই প্রথম জাতীয় সংসদে সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে শোষণহীন, শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের কথা সোচ্চার কন্ঠে বলেছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক, শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন- মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কথা বলেননি, তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সামন্তীয় সমাজব্যবস্থা সে সমাজব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে একটি শোষণহীন সমাজ গঠন করা ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। তিনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের অধিকার দিতে আন্তরিক নয় তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠনের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না করে শাষক গোষ্ঠী যদি প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের উপড় নির্যাতন, নিপীড়ন করে যায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারো অশান্ত হয়ে উঠবে এবং তার জন্য সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

এলআরডির পরিচালক, শামসুল হুদা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল প্রয়াত নেতাকে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, তিনি গণপরিষদের একজন অন্যতম সদস্য হয়েও সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রয়াত নেতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

জাসদ সভাপতি নুরুল আম্বিয়া বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আজীবন সমতা এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন। নিপীড়িত মানুষের সমানাধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ১৯৭২ সালের গণপরিষদে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লারমা বলেছিলেন, এ সংবিধানে খেতে খাওয়া, দিন মজুর, শ্রমিক কৃষকদের অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিবেশকে শান্ত করার লক্ষ্যে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়েছিলো সে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু আন্তরিক সে প্রশ্নটাও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে উত্থাপিত হচ্ছে। তিনি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আদর্শে আদর্শিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।

বাসদের সভাপতি রাকিবুজ্জামান রতন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ইংরেজদের ভাগ করা শাসন কর নীতি চলমান। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গণতান্ত্রিক বোধ তৈরীর কথা বলেছেন। সেই বোধকে জাগ্রত করে অতিশীঘ্রই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

বিশিষ্ট কলামিষ্ট, সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন- প্রয়াত নেতা ছিলেন একজন মানবতাবাদী। তিনি চেয়েছিলেন আমাদের সংবিধান হবে আরো বেশী গণতান্ত্রিক আরো বেশী ধর্মনিরপেক্ষ। জুম্ম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বিপ্লবী এ নেতা পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সমগ্র বিশ্বের শোষিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে জীবন দিয়েছেন তবুও শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপোস করেননি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, এ্যডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শিখিয়ে গেছেন লড়াই যদি ন্যায়ের জন্য হয়, ন্যায়ের পক্ষে হয় তাহলে সে লড়াইয়ে জয় অবশ্যম্ভাবী।

সভাপতির বক্তব্যে, জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই হবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার রেখে যাওয়া স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্যে সকল প্রগতিশীল সংগঠনকে একত্রিত হয়ে কাজ করে যেতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

স্মরণসভার দ্বিতীয় সেশনে প্রয়াত নেতার স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পরে প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি, আদিবাসী গানের দল মাদল এবং গনসংগীত কফিল আহমেদ।

Back to top button