জাতীয়

‘মাদার অব হিউমিন্যাটির দেশ থেকে আদিবাসীদের, মানুষের দেশান্তর হতে হয় কেনো-সুলতানা কামাল

‘মাদার অব হিউমিন্যাটির দেশ থেকে আদিবাসীদের, মানুষের দেশান্তর হতে হয় কেনো, এই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। আজ ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ‘আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং তাদের মানবাধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৮ উদযাপন কমিটির পক্ষে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে সকালে অনুষ্ঠিত সেমিনারে তিনি আরো বলেন, আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের অধিকার দিতে হবে। যদি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনি সেখানেও আত্মপরিচয়ের কথা রয়েছে, আরো পেছনে ৫২ তে ভাষা আন্দোলনের চেতনা, এতো ফাঁকা কিছু নয় এটাও আত্মপরিচয়ের অন্যতম আন্দোলন।

এ দেশের আদিবাসীদের অধিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সহজ কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো সব মানুষ সমান অধিকার নিয়ে, মাথা উচু করে বাচবে, সন্মান নিয়া বাচবে, এমন একটা দেশ চাই বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।

সেমিনারে আদিবাসীদের দেশান্তর বিষয়ে বলতে গিয়ে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহবায়ক সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘প্রচলিত আইন দিয়ে এ দেশে আদিবাসীদের বা সংখ্যালঘুদের দেশান্তর রোধ করা যাবেনা। এজন্য বিশেষ আইন প্রয়োজন। সংসদীয় ককাস প্রস্তাবিত আইন সংসদে জমা দিয়েছে, আগামীতে যাতে বিল আকারে উত্থাপিত হয় সে চেষ্টা করে যাবে।

‘মূলধারার যে উন্নয়ন সে উন্নয়ন মানে আদিবাসীদের উচ্ছেদ, মূলধারার উন্নয়ন মানে আদিবাসীদের দেশান্তর এরকমই হয়েছে। আমরা এমন ব্যবস্থা চাই, যা মানুষ হিসেবে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক অধিকার নিশ্চিত হবে’ বলে তার বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেল চীফের উপদেষ্টা রানী ইয়েন ইয়েন।

দেশান্তরের কারনে সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী হয় নারীরা বলে মতামত দেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির। তিনি আরো জানান, যদি এ রাষ্ট্র তার নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে না দেখে হয়তো প্রান্তের মানুষ আরো প্রান্তে যেতে যেতে নাই হয়ে যাবে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন তার বক্তব্যে দাবী করেন, যে আদিবাসীরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলো, সে স্বাধীন দেশে আদিবাসী অনেক মুক্তিযোদ্ধাই থাকতে পারেনি। দেশান্তরে বাধ্য হয়েছিলো এমন তথ্য-প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে।

আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে, এমন পরিস্থিতিকে ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে, আলাদা পতাকা পেয়েছি, জাতীয় সংগীত পেয়েছি কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও রাজনীতি পাকিস্তান মানসিকতা থেকে আজো মুক্তি পায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশগুপ্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘রাষ্ট্র যাকে আপন মনে করে তাদের গাড়িতে করে নিয়ে পাহাড়ে সেটেল করায়, আর যাদের পর মনে করে তাদের দেশান্তরিত হতে হয়। রাষ্ট্র এই আপন পরের নির্মানের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের উপর নিপীড়নের ব্যাপারটা বোঝা যায়।’ তিনি শাসকদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সংগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলেন, কিন্তু কারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আসলে যারা সংবিধানে স্বীকৃতি চায় নাকি যারা স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে?’

ঢাবির আরেক অধ্যাপক আমেনা মহসিন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও আদিবাসীদের স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই জাতীয়তাবাদী, তবে সেই জাতীয়তাবাদে সবার অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। আর আমরা বহুত্ববাদী গণতন্ত্রও চাই দেশে।’

সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন এএলআরডির উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং। এএলআরডি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ব্লাস্ট, বেলা, নিজেরা করি, আরবান সিডিএ, কাপেং ফাউন্ডেশন, মালেয়া ফাউন্ডেশন, সিসিডিবি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কারিতাস বাংলাদেশ, টিআইবি, এইচডিআরসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করেন।

Back to top button