জাতীয়

মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস: রাজশাহীতে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত

মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩ তম বার্র্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ৩০ জুন সকাল ১১ টায় রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি মোড়ে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণমিছিলটি আলুপট্টিমোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলুপট্টি মোড়ে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ ও গণমিছিলের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জননেতা ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি। এর আগে সকাল ৮.০০টায় রাজশাহীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রমের স ালণায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, রাজশাহী জেলা সভাপতি বিমল রাজোয়াড়, সাধারণ সম্পাদক সুসেন কুমার শ্যামদুয়ার, রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নবদ্বীপ লাকড়া, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বিভূতী ভূষণ মাহাতো, সভাপতি নকুল পাহান, সাধারণ সম্পাদক তরুন কুমার মুন্ডা প্রমূখ।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাসদ রাজশাহী জেলা সমন্বয়ক আলফাজ হোসেন, সিপিবি রাজশাহী জেলা সভাপতি এনামুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান আলী বরজাহান, বিশিষ্ট কলাম লেখক প্রশান্ত কুমার সাহা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী মহানগর সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি প্রদীপ মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আমিরুল ইসলাম কনক, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, রাজশাহী জেলা সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, বিশিষ্ট আইনজীবি এ্যাড. আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার সরকার, জনউদ্যোগ রাজশাহীর সদস্য সচিব জুলফিকার আহমেদ গোলাপ, বাংলাদেশ রবিদাস উন্নয়ন পরিষদ রাজশাহী জেলা সভাপতি রঘুনাথ রবিদাস, উদীচী রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক অজিত কুমার মন্ডল, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার প্রতিনিধি রাসেল চাকমা প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি সহ আদিবাসীদের সকল দাবির পক্ষে জোর দাবি জানান। বক্তারা বলেন, ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ ছিল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। নিজেদের অধিকার রক্ষায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন সাঁওতাল বীররা। কিন্তু আজও বাংলাদেশের আদিবাসীরা অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়নি। নিজেদের জমিজমা হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। বক্তারা দাবি করেন, অবিলম্বে আদিবাসীদের দাবি সমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল কৃষক বীরভূমের ভগনাডিহি থেকে সমতল ভূমির উপর দিয়ে কলকাতা অভিমুখে এক গণপদযাত্রার মাধ্যমে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন তৎকালিন শাসকদের বিরুদ্ধে। সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব ও ফুলমনির নেতৃত্বে সংঘটিত বিদ্রোহই আদিবাসীদের কাছে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস নামে পরিচিত। ইংরেজ শাসনামলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং তাদের এদেশীয় তাবেদার জমিদার, মহাজন, সুদখোর ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাঁওতাল কৃষকদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন মুন্ডা, হো, মাঝিঁ, মালো, কামার, কুমার, তেলী, চামার, ডোম, গরীব হিন্দু ও মোমিন মুসলমান সহ বঞ্চিত জনগন। এই বিদ্রোহে প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়।
৩০ জুন মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের ১৬৩ তম বর্ষ উদযাপনে আদিবাসীদের দাবিসমূহ:

#সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্তণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
#১৯৫০ সনের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারা পূর্ণ বাস্তবায়ন ও উক্ত ধারা লংঘন করে আদিবাসীদের যে সব জমি জাল দলিল হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
#খাস জমি ও সরকারি পুকুর পাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের স্থায়ী মালিকানা দিতে হবে।
#আদিবাসীদের উপর সকল প্রকার নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, হয়রানি বন্ধ ও বিচার করতে হবে।
#সরকারি তালিকা থেকে বাদপড়া আদিবাসীদের দ্রুত অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
#সরকারি চাকুরীতে আদিবাসীদের ৫% কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
#উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে আদিবাসী কোটা এবং বৃত্তি ব্যবস্থা করতে হবে।

Back to top button